জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

যদি মেনে চলা হয়,
ঔপনিবেশিক কালে কিংবা সামন্তিক যুগের রাজকীয় বদান্যতায় যে সম্প্রদায়
হটাৎ করেই 'রাজার' কাছাকাছি যায়গা পেয়েগিয়েছিলেন, সেই 'রাজাই' যখন নিজহীনমন্যতার কারনে বিশ্ববাজারের নামে, নিজেই 'নতুন মনিবে' আশ্রয় নিতে  হন্যে হয়ে  ছুটোছুটি করতে থাকেন
----- তখন স্বাভাবিক কারনেই, তাদের পারিষদের উচ্চ অংশটা  পার্শ পদল করার চেষ্টা করবেন। এখনো ভূলতে পারি না, শ্রী মনমোহন বাবুর কৃপায় যখন আমরা নতুন মনিব পেলাম, কীভাবে আমেরিকা দৌড়ুনো হুড়োহুড়ি পরে গিয়েছিলো।  এই পার্শবদলটাকে  মহিমামন্ডিত করতেই, রাতারাতি 'রোম' কিংবা 'গ্রিসের' অথবা ভারতের দক্ষিন ও উত্তরভারতের স্থাপত্ত শৈ্লীকে অতলে ফেলে দিয়ে, সেই পাথরের জঞ্জালেরই স্তুতিগান শুরু হয়ে গেলো। দৌড়াদৌড়িতে, সাম্যবাদে রয়েছেন, সে রকম গুনিদের অনেকে বাদ পরেন নাই।
তখককার দিন গুলিতে যখন পেছন ফেরি, লজ্জ্বায় মুখ ঢাকতে হয়। ভারতের সব কিছু খারাপ। ইস্পাতে ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী হিসেবে সংসদে যখন বসতাম তখন দেখতাম, সরকারী এবং বিরোধীদের প্রধান পক্ষ সব সরকারীকে গালাগালি দিতে, সেইলের গুষ্টিতুষ্টি করতেন রোজ। এক রাতেই সব বিক্রি করে দিলে বুঝি ভারত 'আবর্জনা মুক্ত হবে'।

 তখন যাদের সারাভারতের সেই সব 'অভিজাতরা' এতোদিন দেশদ্রোহি বলে সম্বোধ্ন করা ছাড়া অন্য বাক্য ব্যয় করতেন না, তারাই হয়ে উঠলো, ভারতীয় স্বয়ং সম্পূর্নতার একমাত্র প্রতিরোধের শক্তি; সংসদের বাইরে এবং ভেতরে। পরের একাধিক বিশ্ব আর্থিক মন্দায় 'সেই দেশদ্রোহী'দের সংগ্রামের ফসলটাই দেশকে বাচিয়ে দিয়েছিলো।

সে সময়ে মনে আছে, একটা টিভি ইন্টারভিউতে, এই লেখককে আখচার বিদেশী বিনিয়োগের বিরোধীতার নীতিকে তিভ্র আক্রমন করা হোল। আমরা দেশের সব বুদ্ধিকে যন্ত্রে নিয়ে যাওয়ার আপত্তি করেছিলাম। রেগে গিয়ে বল্লাম - 'বিদেশের সব এখন ভালো। ইস্পাত থেকে টুথপেষ্ট পর্যন্ত। জিজ্ঞেস করলাম - বউটাকে যাতে বিদেশ থেকে নিয়ে আসার জন্য প্রচার করছেন না কেন?" আর সেই কথাটা টিভিতে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখানো হয়েছে বহুকাল।
হোলোও তাই। মানুষের টাকায় ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে অনেকেই আমেরিকায় ঘর বাধলেন। আমেরিকার 'যন্ত্র কেরানী' হলেন তাদের অধিকাংশ।

সে কালের এখন অবসান। ভারতটাই এখন শেষ। যে দেশটাতে এক কালে ছিল বিশ্ব 'যন্ত্র এবং প্রযুক্তি' শ্রমিকদের ষষ্ট স্থানে। সেই দেশটাতেই এখন ক্যাপিট্যাল গুডস শিল্প নেই। বাংলা থেকে তো অনেককে মানুষ বদপাল্লায় পরে ভাগিয়ে ছেরেছে।

এখন তাই মধ্যমবর্গ অবসন্য বিষাদগ্রস্ত। যতটা না অর্থনৈ্তিক সংকট, তার থেকেও বেশী রাজনৈ্তিক দলগুলি রাজনীতিহীন রাজনীতির জন্যে। সাম্যবাদীরাও এই ঝোকক আটকে দেওয়ার জন্য, যা করার প্রয়োজন ছিল তার কিঞ্চিত করলো।

সব মিলিয়ে রাজনীতিটা হয়ে দাড়িয়েছে, ইষ্ট বেংগল আর মোহনবাগানের খেলা, খুব বেশী হলে, ভারত বনাম পাকিস্থানের ক্রিকেট। ময়দানটা কিন্তু সেই একইঃ
----- ভারতে যা কিছু নির্মান হয়েছে সুন্দর, সব কিছুকে উৎখাত করার পর, যারা একটা 'আলপিন' তৈ্রী না হওয়ার দেশকে ইস্পাত প্রযুক্তি নির্মানের দেশে বদলে দিলো,
------আহাম্মুকদের দ্বারা তাদের গালাগালি। যারা একেবারে পশ্চাতপদ সংস্কৃতি থেকে শিক্ষার পরিকাঠামো নির্মান করলেন, সেগুলিকে ভেঙ্গে দিতেই সে সব শ্রষ্টাদের গালাগালি চলতে লাগলো প্রতিযোগীতা করে। বাংলায় তো ভূমিসংস্কার সমেত, যত প্রসাসনিক সংস্কার হয়েছিলও, সেগুলির গুষ্টির-তুষ্টিতে
----- খুনোখুনি, রাহাজানী এবং বলাতকারে সম্ভবত আমরা বিশ্ব বিজয় করতে চলেছি।
কী লজ্জ্বার অথচ লজ্জ্বা নাই - ভারত ক্ষুদা মুক্তির প্রশ্নে কিংবা জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নে বাঙ্গলা দেশের থেকেও নিচে।

কাজেই এখন চুড়ান্ত নৈরাজ্য। সেখান থেকেই বিষাদ ও মধ্যমবর্গীয় বিবষতা। ভাব বা চিন্তনের নিয়ম যেখানে এক ভাবজগতের অতি-গুরুত্বপূর্ন কেন্দ্রে যখন বিবষতা দেখা দেয় তখন
----- সমাজে উৎপাদনের দিক থেকেই যারা সব থেকে সংগঠিত, সেই মেহনতীরাই যদি মেহনতের মর্য্যাদায় উদ্দিপিত হয়ে নিজেই একটি বিপ্লবি এবং বিকল্প সাংস্কৃতিক শক্তি হেসবে উঠে এসে এই বিবষতা কাটাতে না পারে, তবে
----  মধ্যমবর্গীয় বিবষতা, মেহনতিদের মধ্যে ঢুকে যাবেই। এই অনুপ্রবেশের কারনে, যখন 'মেহনতের গুনের' উপরেই বিদেশীরা 'ধর্ষনে' নামবে, তখন মেহনতিরাই তাকে কূর্নিশ জানাতে থাকবে।

কাজেই সে সব শ্রমিক নেতা যারা জাতীয়তার নামে, শ্রমিক আন্দোলন করেছেন বা করছেন তারা এবং যারা আন্তর্জাতীকতার শ্লোগানে আন্দোলনের রয়েছেন, তাদের এ এক বড় দায় এক হওয়ার এবং
----- একটা বিকল্প ধারাকে জাতি তথা বিশ্বকে উপহার দেওয়া। এই ভেবে দেশের শ্রমিক-কর্মচারীদের উজ্জিবিত করা ...।
আমাদের এই মহান দেশ ভারতে ১৩০ কোটির আবাস। বিশ্বে দ্বিতীয়। আমাদের কেন কোন সংকট থাকবে, যদি তাদের  এক অখন্ড চেতনায় উজ্জিবিত করতে পারি।
-----   একশ' ত্রিশ কোটির ১০০ কোটি যদি মেহনতি হয়, কেন তার আজকের দিনে ১৩০ কোটিতে ইঞ্জিনের ভূমিকা পালন করতে পারবে না।

এই সুত্রেই ভারতের মধ্যমবর্গের জন্য নিশ্চিতভাবে গর্ববোধ করতে হবে। এই বর্গের মধ্যেই,  জ্ঞান ও সংস্কৃতির আকর বিদ্যমান। এদের দেশপ্রেমের আলোতেই তো এদেশের শ্রমিক  আন্দোলন প্রথম নিজেকে একটা স্বতন্ত্র শক্তি হিসবে নিজেকে ভাবতে শুরু করেছিলো  সেই পাত্রটই তো আন্তর্জাতীকতার মহামন্ত্রে নিজেকে এক মহিরূঢ় শক্তিতে উঠিয়ে আনার সুযোগ পেয়েছে। এদের হাত ধরেই এদেশে শিল্পের মুখ উন্মক্ত হয়েছে, এরাই দেশে একের পর এক নোবেল এনে দিয়েছে।
----- তাই বুঝে চলতে হবে মধ্যমবর্গের বিষাদ মুক্তি, শ্রেনীরো এগিয়ে যাওয়ার অনেক দরজা খুলে দেবে, দেশের রাহু মুক্তির সাথে সাথে। (ক্রমশ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours