জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:
হটাৎ করেই এক মহান ব্যক্তিত্ব, যিনি ভারতের প্রধান মন্ত্রী হয়েছিলেন, কিন্তু একটা কমিশনের রায় কার্য্যকরি করতে, , পশ্চাতদ এবং উপরের বর্ণের মাঝামাঝি কিন্তু মিশ্র বর্ণেড় চাকরি সংরক্ষন করতে গিয়ে বিজেপি নেতৃ্ত্বে
উচ্চ বর্ণের বিদ্রোহের কারনে সরকার হারান, সাথে সাথে প্রধান মন্ত্রীত্ব।
---- এই মানুষটিকেই, ইন্দিরার পর, ভারতে যত প্রধানমন্ত্রী এসেছেন, সব থেকে সাহসী এবং দুরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রধান মন্ত্রী বলে মেনেছি। আবার প্রধান মন্ত্রীতে ফিরে না আসলেও মৃত্যুর দিন পর্য্যন্ত ভারতীয় রাজনীতিতে, কংগ্রেস এবং বিজেপি বিরোধী ধারার প্রতিনিধীত্ব করেছেন। উনিই প্রধান মন্ত্রীত্বের প্রশ্নে কমরেড জ্যোতি বসুকে ঘিরে ঐক্যমত গড়ে তুলেছিলেন।
মানুষটির নাম যে শ্রী ভি পি সিং, সে কথাটি নিশ্চিত পাঠকরা বুঝে নিয়েছিলেন। উনি পরের বার নির্বাচিত হয়ে আসার পর সংসদে দাড়ীয়ে যে কথাটা বলেছেন, তাতে কান না দেওয়াোই দেশের বিপর্য্যয়ই যে শুধু ডেকে এনেছে তাই নয়, আজ দেশ কয়েক টুকরো হয়ে যাওয়ার যুক্তিগুলি খুলে দিছে এবং সেগুলিকে কাজে লাগিয়ে, দেশের অর্থনীতি সমেত, সব কিছু বিদেশীদের হাতে চলে গেছে প্রায়।
আগেও কথাগুলি শুনেছি। শেষজীবনের বছরগুলিতে, যাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে মেনেছি, তিনি সারা দেশে হন্যে হয়ে বলে গেছেন, হূবহু যেমনভাবে ঘটনাগুলি ঘটে চলেছে। কমরেড বি টি আর, বাব বার বোঝাতেন, নিচু বর্ণ হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা হয়, সমাজে যারা পশ্চাতপদ কিংবা দলিত বলে পরিচিত এবং ভারতীয় মেয়েদের সমস্যার বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে বলতেন
------এদের সমস্যা, স্বাধীন জীবিকার সমস্যা তো বটেই, কিন্ত তার থেকেই বড় সমস্যা, বাইরে আত্মমর্য্যাদার সমস্যা সমাজের গভীর তলদেশ পর্য্যন্ত বিস্তৃত।
তখন ততটা বুঝি নাই, যদি এই বর্ণাশ্রমের আঘাতে নিজে এবং পরিবার একদিন জর্জরীত হয়েছে এবং অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। আরো বুঝি, সাম্যবাদী আন্দোলনে এই বোঝার বিষয়টিতেও, ব্রাহ্মন্বত্বের প্রভাব থেকে যাওয়ার কারনেই হয়তো,
---- বর্ণকে শ্রেনীর চোখে দেখার তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় নাই, যারা পরিনামে শ্রেনীটাই ধীরে ধীরে অনেক দিক থেকেই, বিশেষ করে সাংস্কৃতিক দিক থেকেও অনেক প্রান্তি বর্ণাশ্রমের চাপেটে এসেছে।
আজ কী হোল? একপ্রান্তে যখন,
এই তথাকথিত নিচু বর্ণ, বিশেষ করে দলিত, আদিবাসি, গরিব মুসলমান, মহিলা এবং তাদের মধ্যে আদিবাসি মহিলা্রাদের - যখন দাস বানিয়ে দিয়ে,
---- স্তব্ধ হয়ে যাওয়া ইতিহাসের জন্য 'দাসত্বের' সর্ত পুরণ করা হচ্ছে।
অন্যপ্রান্তে সুযোগ পেয়ে -,
মধ্যবিত্ত উচ্চবর্ণ বর্ণ থেকে আওয়াজ তুলে দেওয়া হচ্ছে, সে কথাটা - "সংরক্ষনের অনেক হয়েছে, এখন ওটাকে তুলে দেওয়াই হবে, সামাজিক ন্যায়ের প্রকৃ্ত ন্যায়"।
----- সংরক্ষনের কারনে এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেয়ে যে কিন্তিত অংশ আর্থিক সুযোগ সুদবিধা পেয়ে যারা পশ্চাত পদ থেকে কিচুউ উপরে উঠে নিজেদের 'ব্রাহ্মন' মনে করছেন এবং 'সামাজিক ন্যায়ের মঞ্চটি আলো করে বসে রয়েছেন, তারা 'সংরক্ষন তুলে দেওয়ার দাবীকে যে সমর্থন করছেন, তা নয়, তবে অনেকটাই যেন 'নিরপেক্ষ ভুমিকা নিছেন"
---- এরা এমন কী এ কথাটার উপরেও, গলা উচু করে বলছেন না, সংরক্ষনটা ছিলো, বর্ণ বা স্ত্রী-পুরুষ সামাজিক মর্য্যানিরপেক্ষ একটা সমাজ নির্মানের অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা।
এমন কী, উচ্চবর্ণজাত সাধারন মধ্যবিত্তের প্রগতিবাদিরাও এবং এমন কি
জীবন রায়ের মতো, ,'প্রধানত্ব উচ্চবর্নজাত' মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্তের গরিব অংশও বলছেন না
------ "অনেক হয়েছে, এখন আর কিঞ্চিৎ সুযোগের মিষ্টান্য বিতরন বন্ঠন করে, সামাজিক ন্যায়ের প্রয়োজন নেই, বিপ্লবটা করে দিয়ে, সর্বদিকে প্রকৃ্ত ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করে একই সাথে ' সংরক্ষনের নিকেষটাও এক সাথেই করে দেওয়া হোক।"
প্রসংগত হটাৎ করেই, দিল্লীতে একটি প্রতিষ্ঠানের
ডাকে একটি ট্রেড ইউনিয়ন স্কুলে ভাষন দিতে যাওয়াস্র
অভিজ্ঞতার কথা মনে হোল। আমাকে নেমত্তন্য করে
নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো,অতিথীর ভাষন দেওয়ার জন্য।
বুঝুন - ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের স্কুল।
----- যে মুহুর্তে কথা বলতে বলতে - , প্রকৃ্ত ন্যায় ফিরে না
আসা পর্য্যন্ত সংরক্ষন যে প্রয়োজন, এমন কথাটা বলা হোল,
এমনি যায় কোথঠা? চার দিক থেকে প্রায় সবাই হারে-রারে
করে উঠেলেন সবাই। শেষ পর্য্যন্ত কর্মসূচীর মডারেটার এগিয়ে
এসে শিক্ষককে রক্ষাকরলেন।
সেদিনই সামাজিকভাবে দুর্বলরা যে রাজনীতির দিক থেকে হত অসহায় তার, কিঞ্চিৎ বুঝেছিলাম।
----- এখন বিজেপির শাসন আসার পর থেকে হাড়ে হাড়ে টের পেলামঃ
(ক) রাজপথের যখন নিম্ন বর্ণের নামে একের একের পর অন্য ধর্মীয় অসহায় গরিম মানুষকে লিঞ্চিং হছে তার জন্য নয়
------ সাধারন প্রতিবাদ হচ্ছে না, তার জন্য।
(খ) অসবর্ণ বিবাহের জন্য যখন, হত্যা এবং খুনের ছড়াছড়ি
------- কিন্তু সাধাস্রন প্রতিবাদ কোথায়?
(গ) সাধারন শ্মশান ঘাটে, দলিত পরিবারের মায়ের দাহ কাজে যেভাবে
বাধা দেওয়া হচ্ছে
------- তাতে সারা দেশ লজ্বায় মাথা নোয়াতে চাইছে না।
(ঘ) এখন নারী দেহকে বানিজ্যিক বিজ্ঞাপনে কাজে লাগানো নয়, নারীর আত্মমর্য্যাদায় আঘাত সামাজিক ন্যায় অন্যায়েই সীমাবদ্ধ রাখা হয় নাই -
এখন নারীত্ব বিনাশকে শুধু ছাত্রী নয়, শিশু-কিশোরীতে আচ্ছাদিত হচ্ছে, অনেক সময় দলিত পরিবারের মেয়েরা আক্রান্ত হচ্ছে
-------- এসব কিছুকে ধীরে ধীরে সামাজিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক মর্য্যাদা দেওয়া হচ্ছে। ধরনী দ্বিধা বিভক্ত দুরের কথা, মহিলাদের মধ্য থেকেও জাগ্রত প্রতিরোধ নির্মান হচ্ছে না।
(ঘ) এখন আবার, দেশে দেশে গৃহ কাজের নামে হাজার হাজার ভারতীয় মেয়েকে বিদেশে রপ্তানী করা হচ্ছে। সেটা করা হচ্ছে, নেতিবাচক বানিজ্য মূল্য মেটানোর নামে।
সব মিলিয়ে ভারতে দাসত্বকে প্রাতিষ্ঠানিক করা হয়েছে এবং সেখানে চুটিয়ে বর্ণাশ্রম এবং ধর্মান্ধতাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। এদেশের লেবর কাঠামোকে যদি বর্ণগত কিংবা স্ত্রী পুরুষ অথবা আদিবাসি এবং পরবর্তী কালের মানুষ
----- ইত্যাদির মাপকাঠিতে হিসেব কিতেব করা হয়, দেখা যাবে শ্রমিক কাঠামোর মধ্যেই, দাসত্ব ঢুকে গেছে। একপ্রান্তে মধ্যবিত্ত থেকে উঠে আসা অংশ, অন্য দিকে উল্লেখিত সামাজিক দাসেরা।
বিগত কয়েক বছরে সামাজিক বিন্যাসের গভীরে যত গিয়েছে এবং শেষে কমরেড বি টি আর এর লেখা, কাজের অধিকারের দলিল নতুন করে পড়ালাম
আরো দুটি জিনিষ স্পষ্ট হয়ে গেলোঃ
প্রথমতঃ শুধু যে মধ্যবিত্ত সমাজটাকেই একপ্রান্তে আমেরিকান প্রীতি, অন্যপ্রান্তে হিন্দুধর্মান্ধতার দিকে ঠেলে নিয়ে গিয়ে,
সেই ৩৫ ভাগ ভারতীয়দের নিয়ে, অর্থনৈতিক ভারতের প্রকৃ্ত রুপ দেওয়া হচ্ছে। গত সংখ্যায় বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছে।
------কয়েকদিন পূর্বে, শ্রীমতি অরুন্ধুতি রায়ের একটা লেখার শিরোনামা চোখে পরলো। তিনি বলেছেন - ভারতটাকে কার্য্যতঃ হিন্দু নয়, 'উচ্চ বর্ণের' দেশে বদলে দেওয়ার জন্য যা করার সব কিছু করা হছে। প্রসংগত, উল্লেখনীয় ১৯৯৮ এর প্রথম দিকে, আমি যখন নরোয়োয়েতে ছিলাম, তখন সেখানকার মানুষের মধ্যে, শ্রীমতি রায়ের লেখা একটি পুস্তকের শ্রেষ্ট আন্তর্জাতীক পুরক্সকার পাওয়ার জন্য খুব উল্লাস দেখেছিলাম। তিনি এই পুস্তকে কেরালার কমিউনিষ্ট প্রতিষ্ঠাতাদের গুষ্টি তুষ্টি করেছিলেন। সেই মহিলার মধ্যে এই পূর্ণতা দেখে অনেক সময় আশ্চর্য্য হয়েছি।
ব্রাহ্মন্যবাদের এতো চাপ, এতো চাপ - অনেক সময় মনে হয়েছে, আমার নিজে হাতে গড়া ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনটাই এদের চাপে পরে যাচ্ছে না তো? বলেও ফেলেছি - এটা হিন্দু, ব্রাহ্মন পুরুষদের হয়ে যাচ্ছে।
----- আজকে এই যে বাবরী নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় হোল, এটাও যে আমেরিকান মিলিটারীতন্ত্রের সেই সোভিয়েত উত্তর কাল, কাল নির্ধারনে হুকুমের দিকেই চাপ বৃদ্ধি করবে সে সম্পর্কে সন্দেহ নেই।রায়টাকও যে,
------ রাজনৈ্তিক পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতা।
একজন যখন ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের ভাষন কিংবা লেখনীর টানে গিয়ে এই আন্দোলনের অভিমুখ যাচাই করবেন দেখবেন, আন্দোলন সে সব কিছু, উচ্চ মধ্যবিত্তিয় ভারত্ আধিপত্তের দিকেই যেন ক্রমে চিহ্নিত করছে।
------ এখনো যদি এরা কমরেড বি টি আর এর কাজের অধিকারের দলিলটি নতুন করে পড়েন দেখবেন - যাদের সংরক্ষন থেকে তাড়ানোর কথা বলা হল
------ এদের অধিকাংশের জমি জমা বাস করার বাড়ী ঘর জংগলের অধিকার, বাবুদের জন্য রাস্তা-ঘাট, রেল লাইন, কল কারখানা নির্মান, বাঁধ- ড্যাম ইত্যাদির নিচে চলে গেছে। প্রাচীন উৎপাদন কাঠামো ভেংগে যাওয়াও তাতীদের রোজগার বন্ধ, গরর গারী উঠে যাওয় এবং গরুর টানা জোল তোলা ব্যবস্থা বন্ধু হয়ে যাওয়ায় সাড় এবং মালিক সবাইকার রোজগার বন্ধ। এখন সারা দেশের কৃ্ষি উৎপাদনের উপরেই, বিদেশের - বিশেষ করে আমেরিকান কোম্পানীগুলির অধিকার কায়েম হয়ে গেছে নানা পথে।
এসব যত সময় ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের পঠন-পাঠনে না আসবে
কি করে ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা নাভি থেকে দাবীটা তুলে আনতেই পারবে না
------ সমাজতন্ত্র ছাড়া অন্য পথ নেই।
যেখান থেকে শুরু করে ছিলাম সেখানেই শেষ করা যাকঃ
সেই মহান নেতা, উচ্চবর্ণজাত রাজ পরিবার থেকে উঠে এসেও,
' ওবিসি ' সংরক্ষন থেকেও
------ মহাকাশ ছাড়িয়ে, আকাশ পাতালকে ভেদ করে বেড়িয়ে যাবে এমন একটা বাক্য উচ্চারন করলেন, তার সরকার চলে যাওয়ার পর,
সংসদের এক ভাষনে; তিনি বল্লেন
---- আমরা ভদ্রলোকের, যন্ত্র পুজো করি, কিন্তু যারা যন্ত্র চালায়, তাদের দেহে, জাতের নামে, পাতের নামে 'থুতু ছেটাই'/
সেই মানুষটিকে আমার শত প্রনাম...(ক্রমশ)
হটাৎ করেই এক মহান ব্যক্তিত্ব, যিনি ভারতের প্রধান মন্ত্রী হয়েছিলেন, কিন্তু একটা কমিশনের রায় কার্য্যকরি করতে, , পশ্চাতদ এবং উপরের বর্ণের মাঝামাঝি কিন্তু মিশ্র বর্ণেড় চাকরি সংরক্ষন করতে গিয়ে বিজেপি নেতৃ্ত্বে
উচ্চ বর্ণের বিদ্রোহের কারনে সরকার হারান, সাথে সাথে প্রধান মন্ত্রীত্ব।
---- এই মানুষটিকেই, ইন্দিরার পর, ভারতে যত প্রধানমন্ত্রী এসেছেন, সব থেকে সাহসী এবং দুরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রধান মন্ত্রী বলে মেনেছি। আবার প্রধান মন্ত্রীতে ফিরে না আসলেও মৃত্যুর দিন পর্য্যন্ত ভারতীয় রাজনীতিতে, কংগ্রেস এবং বিজেপি বিরোধী ধারার প্রতিনিধীত্ব করেছেন। উনিই প্রধান মন্ত্রীত্বের প্রশ্নে কমরেড জ্যোতি বসুকে ঘিরে ঐক্যমত গড়ে তুলেছিলেন।
মানুষটির নাম যে শ্রী ভি পি সিং, সে কথাটি নিশ্চিত পাঠকরা বুঝে নিয়েছিলেন। উনি পরের বার নির্বাচিত হয়ে আসার পর সংসদে দাড়ীয়ে যে কথাটা বলেছেন, তাতে কান না দেওয়াোই দেশের বিপর্য্যয়ই যে শুধু ডেকে এনেছে তাই নয়, আজ দেশ কয়েক টুকরো হয়ে যাওয়ার যুক্তিগুলি খুলে দিছে এবং সেগুলিকে কাজে লাগিয়ে, দেশের অর্থনীতি সমেত, সব কিছু বিদেশীদের হাতে চলে গেছে প্রায়।
আগেও কথাগুলি শুনেছি। শেষজীবনের বছরগুলিতে, যাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে মেনেছি, তিনি সারা দেশে হন্যে হয়ে বলে গেছেন, হূবহু যেমনভাবে ঘটনাগুলি ঘটে চলেছে। কমরেড বি টি আর, বাব বার বোঝাতেন, নিচু বর্ণ হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা হয়, সমাজে যারা পশ্চাতপদ কিংবা দলিত বলে পরিচিত এবং ভারতীয় মেয়েদের সমস্যার বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে বলতেন
------এদের সমস্যা, স্বাধীন জীবিকার সমস্যা তো বটেই, কিন্ত তার থেকেই বড় সমস্যা, বাইরে আত্মমর্য্যাদার সমস্যা সমাজের গভীর তলদেশ পর্য্যন্ত বিস্তৃত।
তখন ততটা বুঝি নাই, যদি এই বর্ণাশ্রমের আঘাতে নিজে এবং পরিবার একদিন জর্জরীত হয়েছে এবং অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। আরো বুঝি, সাম্যবাদী আন্দোলনে এই বোঝার বিষয়টিতেও, ব্রাহ্মন্বত্বের প্রভাব থেকে যাওয়ার কারনেই হয়তো,
---- বর্ণকে শ্রেনীর চোখে দেখার তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় নাই, যারা পরিনামে শ্রেনীটাই ধীরে ধীরে অনেক দিক থেকেই, বিশেষ করে সাংস্কৃতিক দিক থেকেও অনেক প্রান্তি বর্ণাশ্রমের চাপেটে এসেছে।
আজ কী হোল? একপ্রান্তে যখন,
এই তথাকথিত নিচু বর্ণ, বিশেষ করে দলিত, আদিবাসি, গরিব মুসলমান, মহিলা এবং তাদের মধ্যে আদিবাসি মহিলা্রাদের - যখন দাস বানিয়ে দিয়ে,
---- স্তব্ধ হয়ে যাওয়া ইতিহাসের জন্য 'দাসত্বের' সর্ত পুরণ করা হচ্ছে।
অন্যপ্রান্তে সুযোগ পেয়ে -,
মধ্যবিত্ত উচ্চবর্ণ বর্ণ থেকে আওয়াজ তুলে দেওয়া হচ্ছে, সে কথাটা - "সংরক্ষনের অনেক হয়েছে, এখন ওটাকে তুলে দেওয়াই হবে, সামাজিক ন্যায়ের প্রকৃ্ত ন্যায়"।
----- সংরক্ষনের কারনে এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেয়ে যে কিন্তিত অংশ আর্থিক সুযোগ সুদবিধা পেয়ে যারা পশ্চাত পদ থেকে কিচুউ উপরে উঠে নিজেদের 'ব্রাহ্মন' মনে করছেন এবং 'সামাজিক ন্যায়ের মঞ্চটি আলো করে বসে রয়েছেন, তারা 'সংরক্ষন তুলে দেওয়ার দাবীকে যে সমর্থন করছেন, তা নয়, তবে অনেকটাই যেন 'নিরপেক্ষ ভুমিকা নিছেন"
---- এরা এমন কী এ কথাটার উপরেও, গলা উচু করে বলছেন না, সংরক্ষনটা ছিলো, বর্ণ বা স্ত্রী-পুরুষ সামাজিক মর্য্যানিরপেক্ষ একটা সমাজ নির্মানের অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা।
এমন কী, উচ্চবর্ণজাত সাধারন মধ্যবিত্তের প্রগতিবাদিরাও এবং এমন কি
জীবন রায়ের মতো, ,'প্রধানত্ব উচ্চবর্নজাত' মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্তের গরিব অংশও বলছেন না
------ "অনেক হয়েছে, এখন আর কিঞ্চিৎ সুযোগের মিষ্টান্য বিতরন বন্ঠন করে, সামাজিক ন্যায়ের প্রয়োজন নেই, বিপ্লবটা করে দিয়ে, সর্বদিকে প্রকৃ্ত ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করে একই সাথে ' সংরক্ষনের নিকেষটাও এক সাথেই করে দেওয়া হোক।"
প্রসংগত হটাৎ করেই, দিল্লীতে একটি প্রতিষ্ঠানের
ডাকে একটি ট্রেড ইউনিয়ন স্কুলে ভাষন দিতে যাওয়াস্র
অভিজ্ঞতার কথা মনে হোল। আমাকে নেমত্তন্য করে
নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো,অতিথীর ভাষন দেওয়ার জন্য।
বুঝুন - ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের স্কুল।
----- যে মুহুর্তে কথা বলতে বলতে - , প্রকৃ্ত ন্যায় ফিরে না
আসা পর্য্যন্ত সংরক্ষন যে প্রয়োজন, এমন কথাটা বলা হোল,
এমনি যায় কোথঠা? চার দিক থেকে প্রায় সবাই হারে-রারে
করে উঠেলেন সবাই। শেষ পর্য্যন্ত কর্মসূচীর মডারেটার এগিয়ে
এসে শিক্ষককে রক্ষাকরলেন।
সেদিনই সামাজিকভাবে দুর্বলরা যে রাজনীতির দিক থেকে হত অসহায় তার, কিঞ্চিৎ বুঝেছিলাম।
----- এখন বিজেপির শাসন আসার পর থেকে হাড়ে হাড়ে টের পেলামঃ
(ক) রাজপথের যখন নিম্ন বর্ণের নামে একের একের পর অন্য ধর্মীয় অসহায় গরিম মানুষকে লিঞ্চিং হছে তার জন্য নয়
------ সাধারন প্রতিবাদ হচ্ছে না, তার জন্য।
(খ) অসবর্ণ বিবাহের জন্য যখন, হত্যা এবং খুনের ছড়াছড়ি
------- কিন্তু সাধাস্রন প্রতিবাদ কোথায়?
(গ) সাধারন শ্মশান ঘাটে, দলিত পরিবারের মায়ের দাহ কাজে যেভাবে
বাধা দেওয়া হচ্ছে
------- তাতে সারা দেশ লজ্বায় মাথা নোয়াতে চাইছে না।
(ঘ) এখন নারী দেহকে বানিজ্যিক বিজ্ঞাপনে কাজে লাগানো নয়, নারীর আত্মমর্য্যাদায় আঘাত সামাজিক ন্যায় অন্যায়েই সীমাবদ্ধ রাখা হয় নাই -
এখন নারীত্ব বিনাশকে শুধু ছাত্রী নয়, শিশু-কিশোরীতে আচ্ছাদিত হচ্ছে, অনেক সময় দলিত পরিবারের মেয়েরা আক্রান্ত হচ্ছে
-------- এসব কিছুকে ধীরে ধীরে সামাজিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক মর্য্যাদা দেওয়া হচ্ছে। ধরনী দ্বিধা বিভক্ত দুরের কথা, মহিলাদের মধ্য থেকেও জাগ্রত প্রতিরোধ নির্মান হচ্ছে না।
(ঘ) এখন আবার, দেশে দেশে গৃহ কাজের নামে হাজার হাজার ভারতীয় মেয়েকে বিদেশে রপ্তানী করা হচ্ছে। সেটা করা হচ্ছে, নেতিবাচক বানিজ্য মূল্য মেটানোর নামে।
সব মিলিয়ে ভারতে দাসত্বকে প্রাতিষ্ঠানিক করা হয়েছে এবং সেখানে চুটিয়ে বর্ণাশ্রম এবং ধর্মান্ধতাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। এদেশের লেবর কাঠামোকে যদি বর্ণগত কিংবা স্ত্রী পুরুষ অথবা আদিবাসি এবং পরবর্তী কালের মানুষ
----- ইত্যাদির মাপকাঠিতে হিসেব কিতেব করা হয়, দেখা যাবে শ্রমিক কাঠামোর মধ্যেই, দাসত্ব ঢুকে গেছে। একপ্রান্তে মধ্যবিত্ত থেকে উঠে আসা অংশ, অন্য দিকে উল্লেখিত সামাজিক দাসেরা।
বিগত কয়েক বছরে সামাজিক বিন্যাসের গভীরে যত গিয়েছে এবং শেষে কমরেড বি টি আর এর লেখা, কাজের অধিকারের দলিল নতুন করে পড়ালাম
আরো দুটি জিনিষ স্পষ্ট হয়ে গেলোঃ
প্রথমতঃ শুধু যে মধ্যবিত্ত সমাজটাকেই একপ্রান্তে আমেরিকান প্রীতি, অন্যপ্রান্তে হিন্দুধর্মান্ধতার দিকে ঠেলে নিয়ে গিয়ে,
সেই ৩৫ ভাগ ভারতীয়দের নিয়ে, অর্থনৈতিক ভারতের প্রকৃ্ত রুপ দেওয়া হচ্ছে। গত সংখ্যায় বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছে।
------কয়েকদিন পূর্বে, শ্রীমতি অরুন্ধুতি রায়ের একটা লেখার শিরোনামা চোখে পরলো। তিনি বলেছেন - ভারতটাকে কার্য্যতঃ হিন্দু নয়, 'উচ্চ বর্ণের' দেশে বদলে দেওয়ার জন্য যা করার সব কিছু করা হছে। প্রসংগত, উল্লেখনীয় ১৯৯৮ এর প্রথম দিকে, আমি যখন নরোয়োয়েতে ছিলাম, তখন সেখানকার মানুষের মধ্যে, শ্রীমতি রায়ের লেখা একটি পুস্তকের শ্রেষ্ট আন্তর্জাতীক পুরক্সকার পাওয়ার জন্য খুব উল্লাস দেখেছিলাম। তিনি এই পুস্তকে কেরালার কমিউনিষ্ট প্রতিষ্ঠাতাদের গুষ্টি তুষ্টি করেছিলেন। সেই মহিলার মধ্যে এই পূর্ণতা দেখে অনেক সময় আশ্চর্য্য হয়েছি।
ব্রাহ্মন্যবাদের এতো চাপ, এতো চাপ - অনেক সময় মনে হয়েছে, আমার নিজে হাতে গড়া ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনটাই এদের চাপে পরে যাচ্ছে না তো? বলেও ফেলেছি - এটা হিন্দু, ব্রাহ্মন পুরুষদের হয়ে যাচ্ছে।
----- আজকে এই যে বাবরী নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় হোল, এটাও যে আমেরিকান মিলিটারীতন্ত্রের সেই সোভিয়েত উত্তর কাল, কাল নির্ধারনে হুকুমের দিকেই চাপ বৃদ্ধি করবে সে সম্পর্কে সন্দেহ নেই।রায়টাকও যে,
------ রাজনৈ্তিক পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতা।
একজন যখন ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের ভাষন কিংবা লেখনীর টানে গিয়ে এই আন্দোলনের অভিমুখ যাচাই করবেন দেখবেন, আন্দোলন সে সব কিছু, উচ্চ মধ্যবিত্তিয় ভারত্ আধিপত্তের দিকেই যেন ক্রমে চিহ্নিত করছে।
------ এখনো যদি এরা কমরেড বি টি আর এর কাজের অধিকারের দলিলটি নতুন করে পড়েন দেখবেন - যাদের সংরক্ষন থেকে তাড়ানোর কথা বলা হল
------ এদের অধিকাংশের জমি জমা বাস করার বাড়ী ঘর জংগলের অধিকার, বাবুদের জন্য রাস্তা-ঘাট, রেল লাইন, কল কারখানা নির্মান, বাঁধ- ড্যাম ইত্যাদির নিচে চলে গেছে। প্রাচীন উৎপাদন কাঠামো ভেংগে যাওয়াও তাতীদের রোজগার বন্ধ, গরর গারী উঠে যাওয় এবং গরুর টানা জোল তোলা ব্যবস্থা বন্ধু হয়ে যাওয়ায় সাড় এবং মালিক সবাইকার রোজগার বন্ধ। এখন সারা দেশের কৃ্ষি উৎপাদনের উপরেই, বিদেশের - বিশেষ করে আমেরিকান কোম্পানীগুলির অধিকার কায়েম হয়ে গেছে নানা পথে।
এসব যত সময় ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের পঠন-পাঠনে না আসবে
কি করে ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা নাভি থেকে দাবীটা তুলে আনতেই পারবে না
------ সমাজতন্ত্র ছাড়া অন্য পথ নেই।
যেখান থেকে শুরু করে ছিলাম সেখানেই শেষ করা যাকঃ
সেই মহান নেতা, উচ্চবর্ণজাত রাজ পরিবার থেকে উঠে এসেও,
' ওবিসি ' সংরক্ষন থেকেও
------ মহাকাশ ছাড়িয়ে, আকাশ পাতালকে ভেদ করে বেড়িয়ে যাবে এমন একটা বাক্য উচ্চারন করলেন, তার সরকার চলে যাওয়ার পর,
সংসদের এক ভাষনে; তিনি বল্লেন
---- আমরা ভদ্রলোকের, যন্ত্র পুজো করি, কিন্তু যারা যন্ত্র চালায়, তাদের দেহে, জাতের নামে, পাতের নামে 'থুতু ছেটাই'/
সেই মানুষটিকে আমার শত প্রনাম...(ক্রমশ)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours