জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

নব্বই দশকের সেই সময় থেকে যখন ভারতের অর্থনীতি বিক্রির  আয়োজনের শুরু, সে সময় থেকে বা  যখন থেকে  বিক্রয়ের প্রয়োজনে
সাংবিধানিক হাইজ্যাকিং কিংব সংবিধানের অন্যান্য গনতান্ত্রিক এবং
জাতীয় একতার উপাদানগুলি ধ্বংস না হয়েছে, তখনকার ঝড়ের পুরো সময়টাই এই কলমের লেখক সংসদে ছিলেন। তিনি সংসদে গেছেন ১৯৯৩ এর আগষ্টে ফিরেছেন, ২০০৫ এ।
বিশেষ করে মূল অর্থনৈতিক বিষয়গুলির সাথে তার যুক্ত থাকার কারনে, ভারতের স্বয়ংসম্পুর্ণতা ধ্বংসে, ভারতীয় সমাজ কাঠামোর কোন কোন উপাদানগুলি আমেরিকান মিলিটারী তন্ত্রকে ভারতের বিশ্বায়নে এবং বাজার অর্থনীতিতে প্রলুব্ধ করছিলো, সে সবগুলি এই লেখকের নখতর্পনে ছিলো। সে সময়ে, এই মিলিটারিতন্ত্র বকলমে  আই এম এফ  কাজ চালাতো। অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করেছি, প্রায় প্রতিটি অর্থনৈ্তিক দপ্তরের পেছনে, আই এম এফ এল্র একটি ছায়া কমিটি কাজ করতো।
----- তাকে যেহেতু  সরাসরি উভয় সভায়, শ্রম সংক্রান্ত বিষয়গুলির সাথে  সংযুক্ত শিল্পগত  বিষয়গুলিতে এবং ইস্পাত শিল্প সম্পর্কীত  সব বিষয়ের যোগাযোগ রাখতে হয়েছে  উভয় সভায়। সেজন্য,  দেশ বিক্রির  খুটিনাটি বিষয়গুলিতে নজর রাখতে হয়েছে। তিনি একটা সময় পর্য্যন্ত,  শ্রম এবং শিল্প সংক্রান্ত  কমিটিগুলির সাথে সাথে পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটির, সাথে সাথে,  ইস্পাতের পরামর্শদাতা কমিটির যুগপদ সদস্য থাকার কারনে, তাকে বাধ্য হয়েই,  বিষয়ের গভীরে যেতে হয়েছে।
-------  ইস্পাতের সাথে যুক্ত সবাই মেনেছেন, সে সময়ে উনার  শিল্প সংক্রান্ত কমিটির সদস্য থাকার জন্যে ইস্কোটা বেঁচে গিয়েছিলো শেষ পর্য্যন্ত। উল্লেখ্য, ইস্কোর সিদ্ধান্তের সাথে সাথে, তাকে শিল্প থেকে  সরিয়ে দেওয়া হয়।
------- আসলে তখন ভারতীয় আমলাতন্ত্রের মধ্যে, সে রকম 'গুণী' লোক ছিলেন না, যারা একটা গনতান্ত্রিক অর্থনৈ্তিক স্বয়ংসম্পুর্নতার সংবিধানিক কাঠামোতে, একটা বিদেশী নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতিকে উপর দিক থেকে চাপিয়ে দেওয়া যেতে পারে। মনে আছে বিদ্যুৎ বিলের যখন আমুল সংস্কার করা হোল, তখন যে বিলটি বিতরন করা হয়েছিলো, আই এম এফ এর পাঠানো একটা কাগজ,  প্রয়োজনীয় নাম/ধাম বদল না  করেই তা করা হয়েছিলো। অনেক সময় 'বিভিন্ন আলোচনা সভায়, সরাসরি আই এম এফ এর লোক ডেকে আনা হোত। তারাই আমলাদের হয়ে কথা বলতো।
----   সে সময়ে মাঝে মাঝে ভারত চেম্বার্সের চেয়ারম্যানের অফিস থেকে এম পি দের কাছে টেলিফোন আসতো, তার ডাকা সভায় যোগ দেওয়ার জন্যে। তখন শ্রী রাহুল বাজাজ সভাপতি ছিলেন। তিনিও বোঝাতেন। ভারতের  এক চিমটি মাটির সমান, সিংগাপুর  কিংবা থাইল্যান্ডের ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিনিধীদের এনে 'আমাদের ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা হোত। একবার, শ্রী  রাহূল বাজাজের  অফিস থেকে যে মহিলা ফোন করেছিলেন, তাকেই বলে দিলাম - এম পি রা বাজাজ সাহেবের চাকর নয়। লোক সভার অধ্যক্ষ কিংবা রাজ্য সভার সভাপতির অনুমতি না নিয়ে, এ রকম হূকুমনামা পাঠাতে পারেন না।

কথাগুলি এজন্য বলছি,
আজকে অর্থনীতি যে আর ফিরে না আসার অবস্থায় চলে গেছে,
তার জন্য শ্রী মোদি কিঞ্চিৎ অনুকম্পা পেতেই পারেন। তফাৎ
এখানেই, যখন ভারতের কোন সরকার, আর
বিশ্ব মিলিটারী তন্ত্র-কেন্দ্রের হুকুম ছাড়া এক কদম চলার ক্ষমতা নেই।
শ্রীমোদির সমস্যা আরো এখানেওঃ - শ্রীগুরু, গুরুদেবদের দিয়ে যেমন
ইস্পাত নীতি চলানো সম্ভব নয়
---- তেমনি ভারতীয় সংসদীয় কাঠামোটাকে শুয়োরের খোয়ার বানিয়ে দিয়েও, শ্রীমনমোহন-চিদাম্বরম জুটীর, সংসদী ও সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে জালিয়াতী অর্থনীতিকে চালানোর যোগ্যতা তিলক-কাটা বিড়াল-ত[স্বীদের দিয়ে সম্ভব ছিলো না।অবস্য, দেশের সংসদীয় কাঠামো, লেনিনের  হিসেব মতো 'শুয়োরের খোয়ারের' মতো হয়ে যাওয়াতেও এখন যাদের 'হাতে' অর্থনীতি তারা ঠিক চালিয়ে নিয়ে যাবে। বিগত ৩০ বছরে, আমাদের 'নব্য  মালিক' এবং ভারতীয় অনুচরেরা, আমলাদের মধ্য থেকে একটা ব্যবস্থা নির্মান করে ফেলেছে। সেখান সংসদ কিংবা সংবিধান রইলো কিংবা না রইলো, তার আসে যায় না।

মনে আছে, অবসর নেওয়ার পর, দুর্গাপুরের একটা ঘোরোয়া, সভায় কথাটা বলেছিলাম - "জীবন রায়ের প্রজন্মই , সংসদীয় কাঠামো এবং অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে দিয়ে এসেছে, এখন কার কি করার রয়েছে"। এতে দুর্গাপুরের নেতারা তেলেবেগুনে। কোন ধারনাই দল দেয় নাই, কি যে ঘটছে তা বোঝার জন্য। কেন দেয় নাই? সে সব সরাসরি বল্লেই স্পষ্ট হতে থাকবে কেন দল ডুবেছে। কেনই বা এতো বিপুল সাফল্যের পর, বাংলার সব যায়গাতে পা'রাখার ভূমি পাওয়া যাচ্ছে না।
----- এদিক দিয়ে জীবন রায়ের জীবনে এটা বড় প্রাপ্তি -----
প্রকৃ্ত অর্থে  সংসদীয় রাজনীতির সব থেকে ঝোড়ো দিনগুলিতে তিনি ছিলেন এবং কার্য্যকারন সম্পর্কের কারনেই সক্রীয় থাকতে হয়েছে, বুঝতে হয়েছে খুটিয়ে খুটিয়ে।

মনে হয় শিরোনামাটা এখন সহজ এবং সরল হতে শুরু করেছে।বিষয়টা এখানে, লেখক যতটুকু বুঝেছেন
---- চিনের পর পুজিতান্ত্রিক বিশ্বের সর্বৃহৎ জনসংখ্যার দেশের অর্থনৈ্তিক কাঠামোকে পকেটে পুরে, সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে ছয় নয় করে দিতে পারলে, ইতিহাসের বিলোপের মাধ্যমে বিশ্বকে দাসত্বে বেধে ফেলার ৭৫%ভাগ কাজ শেষ যে হয়ে যাবে,
সে কথাটা আমাদের বিশ্ব অভিবাবক বুঝে গিয়েছিলেন। এখানে সব থেকে সুবিধাজনক উপাদান হিসেবে, মিলিটারী তন্ত্র  চারটি উপাদানকে 'স্বর্গীয়' হিসেবে পেয়ে গিয়েছিলেনঃ
(ক) দেশের ৩৫ কোটি মধ্যবিত্তকে এরা 'অর্থনৈ্তিকভাবে' ভারত বলে মেনে নিলো।বাকি জন সংখ্যাকে, পুজিতান্ত্রিক সমাজের নিয়ম অনুযায়ী, যাদের আছে তাদের কাছ থেকে ' চুইয়ে চুইয়ে' নেমে আসা অর্থনীতির উপর এবং দয়ার উপর বেচে থাকবে বলে ঠিক করে নেওয়া হোল।

(খ) ট্রিঙ্কলিং অর্থনীতিকে যে একটা ভয়ংকর নির্মমতার দিকে নিয়ে যেতে পেরেছে, তা এনারা আগে থেকেই বুঝে নিয়েছিলেন। সাধারনভাবে, সারা বিশ্বেই 'চুইয়ে পড়া' অর্থনীতির সাথে যাদের যুক্ত করা হয়েছে, সবাইকেই দাসত্বের সামাজিক কাঠামোর সাথে বাধা  হচ্ছিলো। ভারতের বর্ণপ্রথা, নারীকে তৃ্তীয় শ্রেনী হিসেবে দেখার সামাজিক প্রবৃত্তি, দেশে আদিবাসিদের  নিজস্ব ভূখন্ড না পাওয়াস্র অবস্থা, গরিব সংখালঘুদের সোচনীয় অবস্তা এবং সামাজিক দ্বন্দ্ব ----- ভারতীয় দাসত্বের ক্ষেত্রে উপযোগী বলে মনে করা হোল।
------ এই যে পুরানো সবাই মিলে পড়াশুনা করানো, মাল্টিপারপাস শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেংগে দিয়ে, বড়লোক এবং অপেক্ষাকৃ্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে, অন্যান্যদের জন্য বিদ্যালয় ব্যবস্থাকে কারখানায় বদলে দেওয়া হোল, - সেখানে স্থায়ী দাসত্বের আমেরিকান সর্ত কাজ করছে।
(গ) ভারতীয় মধ্যবিত্তদের যে অর্থনৈতিক ভারত হিসেবে ধরে নেওয়ার পেছনেও আমাদের 'অভিবাকরা' অনেক সম্ভাবনা খুজে পেয়েছিলো। এরা দেশের কেরানীবাবু সমেত আমেরিকা সমেত উন্নত দেশগুলির প্রযুক্তি কেরানী যোগানের ভালো ব্যবস্থা, বাজার, দাস  এবং অপ-সংস্কৃতি  ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি কাজে সুবিধাজনক মনে করলো।
----- এসব কথায়, এটা বোঝানো হচ্ছে না, যে মধ্যম বর্গ এসব কিছু মেনে নিয়েছেন।বরং বলা যাবে সাম্যের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় কারনে এদের উপর বিশ্ব ফ্যাসিবাদের প্রভাব বেড়েছে।এছাড়া অর্থলোভ,ক্ষমতা লোভ এবং ফ্যাসিবাদী প্রভাবে, এরা আত্মমর্য্যাদাহীনতার কারন হচ্ছেন।
------- শ্রমিক আন্দোলন এই অংশের দোলাচল নিঃস্কৃয় করতে যত দেরী করবে, সে নিজেই তাত্বিক নেতত্ব দুর্বল করে দেবে। বিপরীতে ভারতীয় মধ্যবিত্তরা, সেই বৃটিশ যুগের মতো, ঔপনিবেশিক কেরানী হয়ে যাবেন।
 (ঘ) বিগত ৭০ বছরে ভারতের ব্যুরোক্রেসী এবং সৈন্যবাহিনী নিশ্চিত ভাবে সেকুলার এবং মহামানবিক সত্বা   বিকশিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তথাপী চিন কিংবা ভিয়েতনামের মতো, কোন বিপ্লব এসে চিত্তের পুরানো জঞ্জাল ,পুজ রক্ত ভাষিয়ে দেওয়ার সুযোগ পায় নাই, সেজন্য বিগত তিন দশকে, এই সম্পদকে অনেকটাই প্রদুষিত করে, অনেকটাই শিরদাঁড়া ভাংগা হয়ে গেছে। বৃটিশ ঔপনিবেশিক সত্তার  'ডলারের' কাছে আত্মসমর্পনের উপাদানগুলি শক্তিশালী করেছে।

সমস্যার উপর আলোচনা চলতে থাকবে। ইতিমধ্যে, পাঠকরা এই আলোচনায় অংশ নেবেন - এটাই কাম্য। (ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours