জয়ন্ত কুমার সাহা, ফিচার রাইটার, কলকাতা:

রাজনৈতিক দলগুলিকে গালাগাল করার প্রবণতা ভীষণ জনপ্রিয়। দু'একবার চোর ধরে গণধোলাই দেবার  নারকীয় দৃশ্য দেখেছি। মনে হয়েছে, কোনও সৎ লোক চোর পেটান না। তারা ক্ষমা করেন বা পুলিশে দেন। অসৎ বা প্রকারন্তরে চোরেরাই গণধোলাই উৎসবে সামিল হন। প্রত্যাঘাতবিহীন আঘাতের লোভ তাদের ভোগবাদের অঙ্গীভূত। একইভাবে চরিত্রবান রুচিশীল লোক কলতলার কেচ্ছা বা পরচর্চা পরনিন্দা করেন না।

আমি কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলিকে গালাগাল করার কারণ দেখি না। তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার এবং সেটি যেন তেন প্রকারেণ ক্ষমতা দখল। They find nothing unfair to reach their goal. সবথেকে বড়ো কথা হল তারা একদল সুবাধাবাদী ভোগবাদী লোভী ও স্বজনপোষণপ্রিয় মানুষের প্রতিনিধি বা জনপ্রতিনিধি। কাজেই তারা যাদের প্রতিনিধি তাদেরই সংস্করণ হবেন এবং এটাই স্বাভাবিক। এবং চরিত্র অনুযায়ীই জনগণ ও নেতৃবৃন্দ পরস্পর পরস্পরের নিন্দা করে চলাই স্বাভাবিক। পার্থক্য এই যে জনগণ কিছুটা প্রকাশ্যে করেন আর নেতৃবৃন্দ একান্তে।
যেদিন একটি বিপরীত চরিত্রের সমাজ তৈরি হবে সেই দিন তাদের প্রতিনিধিরাও বিপরীত চরিত্রের হবে।

অনেকেই বলে থাকেন যে রাজনীতিতে ভালো লোকেরা না এলে রাজনীতি শুদ্ধ হবে না। এটিও ভাবের ঘরে চুরি। কারণ নীতি নির্ধারণ ও রূপায়নের কতৃত্বে না থাকলে নিচুতলায় ভালোমানুষের আসা যাওয়ায় কিছুই হবে না। হয় কিছুদিনের মধ্যেই তিনি হাফিয়ে উঠে পালাবেন অথবা ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেবেন।
এখন অবধি যা লিখলাম সব হল সমস্যা ও বর্তমান ব্যবস্থা। প্রশ্ন হল তবে উপায় কী ?

এক, নৈতিক চরিত্র তৈরি করা। তার জন্য ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রিয় উদ্যোগ দরকার। মেধা পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার থেকেও নৈতিক চরিত্রের জন্য বেশি মর্যাদার পুরষ্কার ও প্রোৎসাহনের ব্যবস্থা সর্বস্তরে থাকতে হবে। ভ্যালু এডুকেশন ও মরাল সাইনস বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ্য করতে হবে। পড়াতে হবে মহাপুরুষদের জীবনী ও বাণী।

দুই, নৈতিক চরিত্রের অবনতির কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো আটকাতে হবে। উদারনীতির জন্য যে সাংস্কৃতিক অবক্ষয় তাকে রুখতে হবে। বিজ্ঞাপন, সিরিয়াল, সিনেমা, ইন্টারনেট, মোবাইল এগুলো বিনোদনের কাজে ব্যবহার আটকাতে হবে। কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে শিক্ষামূলক প্রয়োজন ছাড়া।

তিন, সিস্টেম বদলাতে হবে। প্রথমত, ইউনিভার্সাল এডাল্ট ফ্রানাচাইস এর মতো বোগাস ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। একজন যথার্থ শিক্ষিত চরিত্রবান লোক আর এক পাত্র মদের বিনিময়ে মতদান করা দুজনের ভোটের মূল্য সমান হলে গণতন্ত্র প্রহসনে পরিণত হয়। তাই ভোটার ও ভোটপ্রার্থী হবার জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। ইউ পি এস সি র ধাচে কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে উভয়কেই নির্বাচিত হতে হবে। যোগ্যতা যাচাইয়ে দুটি বিষয় দেখা হবে । প্রথমে চরিত্র ও দ্বিতীয় হল মেধা। এতে যদি দেশে মাত্র এক লক্ষ ভোটার পাওয়া যায় তাও সই। হয় বাকী নাগরিকরা যোগ্যতা অর্জন করবে অথবা এদের ওপর নির্ভর করবে। নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্ছিদ্র করতে হবে।

চার, রাষ্ট্রিয় স্তরে সংখ্যা গুরু লঘু ও সমস্ত সংরক্ষণ তুলে দিতে হবে। (ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours