মৌসুমী মণ্ডল, ফিচার রাইটার, কলকাতা:
মনে পড়ে সেই উত্তর কোলকাতার ভজহরি মুখার্জি-কে? আরে সেই চারমূর্তির একজন। পটলডাঙার আশেপাশে বসবাসরত চার তরুণ ছেলেদের নেতা। হ্যাঁ হ্যাঁ টেনিদার কথাই বলছি। সাতবারের চেষ্টাতে ম্যাট্রিক পাশ করেছিলেন তিনি। তবে তাঁর সৃষ্টিকর্তা মোটেও এমন ছাত্রটি ছিলেন না। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের শিক্ষাজীবন কাটে দিনাজপুর, ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে, বড়িশালের বি. এম কলেজে ও কোলকাতায়। ১৯৪১ সালে তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৬০ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি নেন। এরপর জলপাইগুড়ি কলেজ, সিটি কলেজ ও কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। চিরকালের লাজুক ও বিনয়ী স্বভাবের নারায়ণ, বাংলা সাহিত্যে তৎকালীন এম. এ তে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। এবং ডক্টরেট হয়েও কোনোদিন পাঠক সমাজের কাছে 'ডঃ তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়' - কে প্রকাশ করেননি। এমনকি লেখক জীবন শুরুর সময় নিজের নামও প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করেছিলেন। তাই তো আর আমাদের জানা হল না লেখক তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে। জানলাম নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় কে। পিতা প্রমথনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন নামকরা পুলিশকর্তা। তবে বই পড়ার শখ ছিল তাঁর ষোলোআনা। ওনার বাড়িটাই ছিল নাকি মস্ত পাঠাগার। প্রমথনাথবাবুর নিজের যেমন পড়ার শখ ছিল। তেমনই সেই শখ ছড়িয়ে দিয়েছিল পুত্রের মধ্যেও। পড়তে পড়তে বিদ্যালয় জীবন থেকেই শুরু হয়ে গেল কবিতা লেখা। সেই পথ চলা শুরু। তখন ওনার লেখাগুলোর সাক্ষী ছিল একমাত্র বাড়ির বারান্দার কোণটা।
ছাত্রদের লেখা-লেখি, অভিনয় সমস্তরকম ভালো কাজেতেই অধ্যাপক নারায়ণবাবুর উৎসাহের সীমা থাকত না। কেউ কবিতা লিখলে বা গল্প লিখলে সেটা শোনানোর জন্য সটান চলে যেত পটলডাঙা স্ট্রিটে মাস্টারমশাইয়ের বাড়িতে। ছাত্র অন্তঃ প্রাণ ছিল মাস্টারমশাইয়ের। পটলডাঙা স্ট্রিটের বাড়িতে তখন চাঁদের হাট বসত। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অমিতাভ দাশগুপ্ত থেকে শুরু করে নির্মাল্য আচার্য্যের মতন তরুণ লেখকদের ভীড়। থাকতেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-ও। বারান্দার কোণটা ছাড়াও যখন তাঁর লেখার সাক্ষী 'দেশ', 'বিচিত্রা','শনিবারের চিঠি' ইত্যাদি পত্রিকাগুলি হতে লাগল তখন তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বড়দের গল্প লিখতে লিখতে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় যখন খ্যাতনামা লেখক তখন তাঁর বন্ধু বিশু মুখোপাধ্যায় তাঁকে ছোটোদের জন্য লেখার প্রস্তাব দিয়ে বসলেন। ছোটোদের জন্য গল্প লিখবেন তিনি! যেন আকাশ থেকে পড়লেন। সেই কবে শৈশব পেরিয়ে এসেছেন তিনি। আর এখন কি না ছোটোদের লেখা! উৎসাহ দিলেন ও আশ্বস্ত করলেন বিশু মুখোপাধ্যায়। কিছু গল্প প্রকাশ করলেনও কিন্তু মন ভরল না। বিশু মুখোপাধ্যায় তাঁকে অনুরোধ জানালেন হাসির গল্প লেখার জন্য। তিনি তখন বললেন, হাসির গল্প তিনি কী করে লিখবেন? ছাত্রদের হাসি বন্ধ করাই যার কাজ সে কি না লিখবে হাসির গল্প! একরকম জোরই করলেন বিশু মুখোপাধ্যায়। অগত্যা লিখতে বসলেন নারায়ণবাবু। আর জন্ম নিল কালজয়ী টেনিদা। একদিন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর সঙ্গে কবিতা পাঠ করতে যাবেন এক জায়গায় তখন খ্যাতি আকাশছোঁয়া। তবুও সেদিনও তাঁর কুন্ঠা ছিল নাকি ভাষায় আধুনিকতা না থাকার কারণে। শরীরটা সেবার তাঁর খারাপ যাচ্ছিল। তবুও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় খোঁজ নিতে তিনি বলেছিলেন তিনি সুস্থ আছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে বাড়িতে আসার জন্য নিমন্ত্রণও করেছিলেন। তাতে সুনীলবাবু বলেছিলেন, "হ্যাঁ স্যার, অবশ্যই একদিন যাব।" সেই 'একদিন' আর কোনোদিন এল না। ১৯৭০ সালের আজকের দিনে অর্থাৎ ৬ই নভেম্বর নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর অমর চার সন্তান টেনিদা, হাবুল, ক্যাবলা আর প্যালারামের কাঁধে চড়ে বাঁশের দোলায় করে সুদূরের কোনো ডাকে সাড়া দিতে চললেন। পড়ে রইল তাঁর পাঠককূল। আর রয়ে গেল তাঁর সৃষ্টি 'চারমূর্তি'।
মনে পড়ে সেই উত্তর কোলকাতার ভজহরি মুখার্জি-কে? আরে সেই চারমূর্তির একজন। পটলডাঙার আশেপাশে বসবাসরত চার তরুণ ছেলেদের নেতা। হ্যাঁ হ্যাঁ টেনিদার কথাই বলছি। সাতবারের চেষ্টাতে ম্যাট্রিক পাশ করেছিলেন তিনি। তবে তাঁর সৃষ্টিকর্তা মোটেও এমন ছাত্রটি ছিলেন না। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের শিক্ষাজীবন কাটে দিনাজপুর, ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে, বড়িশালের বি. এম কলেজে ও কোলকাতায়। ১৯৪১ সালে তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৬০ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি নেন। এরপর জলপাইগুড়ি কলেজ, সিটি কলেজ ও কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। চিরকালের লাজুক ও বিনয়ী স্বভাবের নারায়ণ, বাংলা সাহিত্যে তৎকালীন এম. এ তে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। এবং ডক্টরেট হয়েও কোনোদিন পাঠক সমাজের কাছে 'ডঃ তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়' - কে প্রকাশ করেননি। এমনকি লেখক জীবন শুরুর সময় নিজের নামও প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করেছিলেন। তাই তো আর আমাদের জানা হল না লেখক তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে। জানলাম নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় কে। পিতা প্রমথনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন নামকরা পুলিশকর্তা। তবে বই পড়ার শখ ছিল তাঁর ষোলোআনা। ওনার বাড়িটাই ছিল নাকি মস্ত পাঠাগার। প্রমথনাথবাবুর নিজের যেমন পড়ার শখ ছিল। তেমনই সেই শখ ছড়িয়ে দিয়েছিল পুত্রের মধ্যেও। পড়তে পড়তে বিদ্যালয় জীবন থেকেই শুরু হয়ে গেল কবিতা লেখা। সেই পথ চলা শুরু। তখন ওনার লেখাগুলোর সাক্ষী ছিল একমাত্র বাড়ির বারান্দার কোণটা।
ছাত্রদের লেখা-লেখি, অভিনয় সমস্তরকম ভালো কাজেতেই অধ্যাপক নারায়ণবাবুর উৎসাহের সীমা থাকত না। কেউ কবিতা লিখলে বা গল্প লিখলে সেটা শোনানোর জন্য সটান চলে যেত পটলডাঙা স্ট্রিটে মাস্টারমশাইয়ের বাড়িতে। ছাত্র অন্তঃ প্রাণ ছিল মাস্টারমশাইয়ের। পটলডাঙা স্ট্রিটের বাড়িতে তখন চাঁদের হাট বসত। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অমিতাভ দাশগুপ্ত থেকে শুরু করে নির্মাল্য আচার্য্যের মতন তরুণ লেখকদের ভীড়। থাকতেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-ও। বারান্দার কোণটা ছাড়াও যখন তাঁর লেখার সাক্ষী 'দেশ', 'বিচিত্রা','শনিবারের চিঠি' ইত্যাদি পত্রিকাগুলি হতে লাগল তখন তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বড়দের গল্প লিখতে লিখতে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় যখন খ্যাতনামা লেখক তখন তাঁর বন্ধু বিশু মুখোপাধ্যায় তাঁকে ছোটোদের জন্য লেখার প্রস্তাব দিয়ে বসলেন। ছোটোদের জন্য গল্প লিখবেন তিনি! যেন আকাশ থেকে পড়লেন। সেই কবে শৈশব পেরিয়ে এসেছেন তিনি। আর এখন কি না ছোটোদের লেখা! উৎসাহ দিলেন ও আশ্বস্ত করলেন বিশু মুখোপাধ্যায়। কিছু গল্প প্রকাশ করলেনও কিন্তু মন ভরল না। বিশু মুখোপাধ্যায় তাঁকে অনুরোধ জানালেন হাসির গল্প লেখার জন্য। তিনি তখন বললেন, হাসির গল্প তিনি কী করে লিখবেন? ছাত্রদের হাসি বন্ধ করাই যার কাজ সে কি না লিখবে হাসির গল্প! একরকম জোরই করলেন বিশু মুখোপাধ্যায়। অগত্যা লিখতে বসলেন নারায়ণবাবু। আর জন্ম নিল কালজয়ী টেনিদা। একদিন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর সঙ্গে কবিতা পাঠ করতে যাবেন এক জায়গায় তখন খ্যাতি আকাশছোঁয়া। তবুও সেদিনও তাঁর কুন্ঠা ছিল নাকি ভাষায় আধুনিকতা না থাকার কারণে। শরীরটা সেবার তাঁর খারাপ যাচ্ছিল। তবুও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় খোঁজ নিতে তিনি বলেছিলেন তিনি সুস্থ আছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে বাড়িতে আসার জন্য নিমন্ত্রণও করেছিলেন। তাতে সুনীলবাবু বলেছিলেন, "হ্যাঁ স্যার, অবশ্যই একদিন যাব।" সেই 'একদিন' আর কোনোদিন এল না। ১৯৭০ সালের আজকের দিনে অর্থাৎ ৬ই নভেম্বর নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর অমর চার সন্তান টেনিদা, হাবুল, ক্যাবলা আর প্যালারামের কাঁধে চড়ে বাঁশের দোলায় করে সুদূরের কোনো ডাকে সাড়া দিতে চললেন। পড়ে রইল তাঁর পাঠককূল। আর রয়ে গেল তাঁর সৃষ্টি 'চারমূর্তি'।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours