দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

কর্পোরেট কালচার বড্ড হিসেব করে পা ফেলে। সে রাজনীতির ময়দান হোক, আর ব্যবসা! যেখানে লাভ লোকসানের প্রশ্ন, যেখানে লগ্নি আছে, টিম ওয়ার্ক আছে, সেখানে সেবা নয়, পরিষেবা আছে। কোন মাগনা নেই।

তাই বাপু " তুমি, গাছের ও খাবে, তলারও খাবে, তা হবে না"। স্বাভাবিক ভাবেই,  নানুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত স্বরূপ গড়াইয়ের পরিবারের হাতে বিজেপির দেওয়া ৫ লাখ টাকার চেক বাউন্স করবে, জানা কথা!  চেক বাউন্স করা একটা অপরাধ। সেই মোতাবেক আইনী লড়াই শুরু হবে, এমন আশঙ্কাও অমূলক নয়।  যাই হোক,  মৃতের স্ত্রীর হাতে চেক তুলে দিয়েছিলেন  বিজেপি নেতা মুকুল রায় । পরে মৃতের স্ত্রী অনুব্রত মণ্ডলের পাশে বসে দাবি করেন তাঁর স্বামী তৃণমূল কর্মী ৷ এরপর বিজেপির দেওয়া চেকে টাকা তুলতে গেলে দেখা যায়, চেক বাউন্স করেছে ৷ এনিয়ে রাজনৈতিক মহলের একাংশে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। তৃণমূল নেতা কেরিম খান বলেছেন, বিজেপির যে চেক গুলো দিচ্ছে, তা ফলস। মানুষ ওদের ভাঁওতাবাজি ধরে ফেলেছে।  কেরিম খানের কথা অনুযায়ী বিজেপি অনেক জায়গায় চেক দিচ্ছে। কিন্তু কেন? নিশ্চয়ই দলীয় কর্মী খুনের ঘটনায় পরিবারের হাতে। সেই চেক নেওয়ার পর যদি সেই পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলেন, তাঁরা বিজেপি করতেন না বা করেন না, তাহলে তাঁরা টাকা দেবেন কেন? এইভাবে মৃত্যুকে নিয়ে রাজনীতি জমে উঠেছে জেলা রাজনীতি।
যা ক্রমে রাজ্য রাজনীতিতে দেখা যাবে, আশা করা যায়। এক্ষেত্রে এটা একটা উদাহরণ মাত্র!   বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডলের গলায় শোনা গেল সেই কথার সুর। তিনি বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জানলাম, মৃত স্বরূপ গড়াইয়ের স্ত্রী চাইনা গড়াই তাঁর ভাইয়ের মাধ্যমে রফাসূত্রে তৃণমূলের কাছে ভিড়েছেন। সেক্ষেত্রে ভাগ্নে ভাগ্নি বঞ্চিত হবে, এই আশঙ্কায় আমরা চেক স্টপ করেছি, তাদের স্বার্থে। মৃত স্বরূপ গড়াইয়ের বাবা স্বপন গড়াই বলেন, বৌমা ভয়ে বলছে তৃণমূল। আমরা বিজেপি করতাম। অন্যদিকে, চাইনা গড়াই বলেন, আমরা তৃণমূল করতাম। তৃণমূল করি। আমার স্বশুর বিজেপির ভয়ে এসব বলছে। তবে বিজেপির দেওয়া চেক ব্যাঙ্কে ভাঙাতে গেলে, চেক বাউন্স হয়।

ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, স্বামীকে তৃণমূল কর্মী হিসেবে দাবি করার জন্যই কি বিজেপির তরফে দেওয়া চেক আটকে দেওয়া হয়েছে ৷ চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর নানুরের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে বিজেপি- তৃণমূল সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় স্বরূপ গড়াইয়ের। কলকাতা ও বোলপুরে মৃতদের দেহ নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক মাঠে ময়দানে জোর তরজা। তৃণমূলের জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ করিম খান সহ ১১ জনের নামে খুনের অভিযোগ দায়ের হয় নানুর থানায় । এরপর রামকৃষ্ণপুর গ্রামে গিয়ে নিহতের স্ত্রী চায়না গড়াইকে আর্থিক সাহায্য হিসেবে ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেন বিজেপি নেতা মুকুল রায় । সেদিন মুকুল রায়ের সঙ্গে ছিলেন অনুপম হাজরা, বিজেপি জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল । পরে ২৮ সেপ্টেম্বর  যেদিন মৃত স্বরূপ গড়াইয়ের অস্থি কলস নিয়ে বিজেপির সাথে কোলকাতায় অনুপ গড়াই, সেদিন বোলপুর তৃণমূল কার্যালয়ে দেখা যায় মৃতের স্ত্রী চায়না গড়াইকে । অনুব্রত মণ্ডলের পাশে বসে তিনি দাবি করেন, তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল কর্মী ছিলেন । ভুলবশত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে । এর কয়েকদিন পর ওই চেক তুলতে যান চায়না ৷ কিন্তু দেখা যায়, চেক বাউন্স করেছে ৷ রাজনৈতিক  হুমকি নিয়ে দুই পক্ষে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান উতোর।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours