ভবানীপ্রসাদ ভট্টার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুঃ
বনকাটি , পশ্চিম বর্ধমান জেলার জঙ্গল মহল নামে পরিচিত কাঁকসা ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম! অজয় নদের দক্ষিন তীরের এই গ্রামটি বহু প্রাচীন! খুব সম্ভবতঃ একদা এই এলাকা ছিল ঘন অরন্যে ঢাকা! সেই বনভুমির গাছ কেটে এই জনপদের পত্তন হয়! তাই গ্রামের নাম 'বনকাটি'!
প্রকৃত পক্ষে অযোধ্যা, বনকাটি ও শ্যাম বাজার তিনটি গ্রাম নিয়ে এই জনপদের নাম ' অযোধ্যা বনকাটি!
অযোধ্যা- বনকাটি একটি ' কালী ক্ষেত্র ' এখানে অনেকগুলি কালীপুজা হলেও তিনটি প্রধান অযোধ্যা গ্রামের ' বন্দ্যোপাধ্যায় এবং চট্টোপাধ্যায়দের এবং বনকাটির ' রায়' পরিবারের পুজা! তিনটি কালীপুজা অত্যন্ত প্রাচীন হলেও! বনকাটির রায় বাড়ীর কালীপুজাটি বহু প্রাচীন! কথিত আছে,আনুমানিক ৭০০ বছর পূর্বে গৌড়ের মহারাজ সেন বংশের কুলগুরু তান্ত্রিকাচার্য মহেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এই কালী প্রতিষ্ঠা করেন! মায়ের পুজা সম্পুর্ন তন্ত্রমতে সম্পন্ন হয়!
বর্তমানে এই পুজা তান্ত্রিকাচার্য মহেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বংশধরেরা তান্ত্রিকমতেই পুজা করে! বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার রাজ প্রদত্ত 'রায় ' পদবী গ্রহন করায় পুজোটি ' রায়' বাড়ীর পুজো নামে খ্যাত!
বর্তমান সেবাইত অনিল রায় জানালেন,তাঁদের পুজা বিশেষ নিয়ম মেনে করা হয়! পরিবারের বয়জ্যেষ্ঠকে পুজা করতে হবে এবং প্রথমে শ্মশানে গিয়ে স্নান করে পুরানো বস্ত্র পরিত্যাগ করে নুতন বস্ত্র পরিধান করে বিশেষ পূজা সম্পন্ন করে মন্দিরে এসে পুজায় বসতে হবে!
ফল নৈবিদ্যের সাথে কাঁসার পাত্রে মায়ের উদ্দেশ্যে কারন অর্থাৎ মদ নিবেদন করা হয়! হোমের জন্য প্রয়োজন পাঁচ সের একপোয়া ঘি, এক হাজার আটশো বেলপাতা এবং পর্যাপ্ত শালকাঠ !
মায়ের উদ্দেশ্যে একটি ছাগ একটি মেষ ( ভেড়া) ও একটি মোষ বলি দেওয়া হয়! পুজার পরদিন পংতিভোজের দ্বায়িত্ব ভক্তরা নেন!
কালীপুজার রাত্রে বহু দুর দুরান্ত থেকে ভক্তরা আসে!বেশীর ভাগ ভক্ত মানত শোধ করতে আসেন!
প্রখ্যাত বাংলা চিত্র পরিচালক প্রায়শঃ এই মন্দিরে আসতেন! এই মন্দির প্রাঙ্গনে বেশ কয়েকটি বাংলা চলচ্চিত্রের সুটিং হয়েছে! উল্লেখযোগ্য ছবিগুলি হ'লঃ-আলো, খেলার পুতুল, হীরক জয়ন্তী, শ্রীমান পৃত্থীরাজ, রুপসী প্রমুখ!
রায় বাড়ীর পুজোকে কেন্দ্র করে কালীপুজার রাত্রে ভক্তদের এক অভাবনীয় উন্মাদনা দেখা যায়!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours