দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
গ্রামের কয়েকটি পারিবারিক দুর্গা পুজোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এই দুর্গা পূজা উৎসব। সন্ধ্যেয় পুজো হয়ে যাওয়ার পর প্রদীপ জ্বালিয়ে মন্দিরে তালা মেরে দেওয়া হত। যেটা এখনও হয়। গ্রামের পুজো সেরে সবাই রিক্সা, গাড়ি ভাড়া করে রামপুরহাট মুখো হত। গ্রামে অন্ধকার ঢু ঢু করত। পুজোর সময় দিনে আনন্দ হলেও, সন্ধ্যেটা মাঠে মারা যেত। এটা ভেবেই গ্রামের কয়েকজন যুবক, সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি, বড়শাল যুবকবৃন্দ নাম দিয়ে ২০০২ সালে এই বারোয়ারি পুজোর পত্তন শুরু করে। আজ ১৮ বছরে পা দিল এই পুজো।
শুরুতেই বড়দের গ্রুপ সৌমেন মজুমদার, অভিজিৎ মজুমদার, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় ( ফটিক) রূপক চট্টোপাধ্যায়, ফাল্গুনি মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়, সুশান্ত মণ্ডল প্রমূখ এবং ছোটদের গ্রুপের হীরক চট্টোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ মণ্ডল, সুজয় মণ্ডল, পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়, পল্টন মুখোপাধ্যায়, সোমু দত্ত, বিট্টু চট্টোপাধ্যায়, বুবাই মুখোপাধ্যায় প্রমূখরা মিলে এই পুজোর শুরু। দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর (সম্ভবত ১০ /১২ বছর) এক নাগারে এই পুজো চলতে থাকে। শুরুতে এই পুজো কমিটির সচিব ছিলেন তদানীন্তন ক্লাবের সেক্রেটারি অসিত মুখোপাধ্যায় এবং সভাপতি প্রয়াত অভিমূন্য বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্লাবের সম্পাদক মহীতোষ চট্টোপাধ্যায় জানান, অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার সেই হীরক অর্থাৎ রাণা আমাদের মধ্যে নেই। খুব অল্প বয়সে অসুস্থ হয়ে আমাদের ছেড়ে সে চলে যায় জীবনের অপর পারে। যাইহোক পুজো চলতে থাকে। তারপরে ইন্দ্রজিত চট্টোপাধ্যায়, তরল মণ্ডল, পিরু দত্ত, বুড়ো চট্টোপাধ্যায় এবং রাখাল মুখোপাধ্যায়রা এই দায়িত্ব নেন। পুজোর শেষের চার বছর পুজো কমিটির সেক্রেটারি তিনি। সভাপতি হিসেবে অবনী বন্দ্যোপাধ্যায় এই কমিটিতে এই সময়ের মধ্যে দায়িত্ব পালন করেন। শেষের চার বছর আজ পর্যন্ত আছেন হিমাদ্রি ওরফে সানি মুখোপাধ্যায়, চন্দন মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণ মণ্ডল, সুমিত চট্টোপাধ্যায়, সোমনাথ, সৌভিক, শুভ, বুবাই এবং আরও অনেকে। পুজোর শুরুতে নবীন- প্রবীন, শাশুড়ি- বৌমার লড়াই ছিল চমকপ্রদ অনুষ্ঠান। যা তখন টিভির অনুষ্ঠানে শুরু হয় নি। তখন সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন প্রয়াত জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়। দু'বছর আগেও যাদৃশী ভাবনার " মা নতা বয়াম, মা তোমাকে প্রনাম করি", প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন ঘটনা ডিসপ্লে করে, কাপলদের নিয়ে কুইজ, সন্দীপ মুখোপাধ্যায় ও স্বাগতা বন্দোপাধ্যায়ের অনবদ্য সঞ্চালনা চির স্মরণীয়। এরকম অনুষ্ঠান একবারই হয়। অংশ গ্রহণ কারীদের প্রতিটি গান ও নাচের ইতিকথা প্রেক্ষাপটে আলোকপাত বিরল ঘটনা। শেষের চার বছরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিক হল গ্রামের মহিলাদের দিয়ে নাটক করানো। বেলা চট্টোপাধ্যায় গ্রামের মহিলাদের অর্থাৎ মেয়ে ও বৌদের তালিম দিয়েছেন। এবারও নাটক হচ্ছে। মা দুর্গা বাপের বাড়ি এলেও, গ্রামের অনেক দুর্গা (বৌরা) শুধুমাত্র নাটকের জন্য বাপের বাড়ি যাচ্ছেন না। স্বশুরবাড়িতেই থাকছেন। গ্রামের মানুষও আর রামপুরহাটে পুজো দেখতে যান না। গ্রামের অনুষ্ঠানে এই ক’দিন মেতে থাকেন তাঁরা। এবছর পুজোর বাজেট ১ লক্ষ ৭৫ হাজার। প্রশাসন আমাদের এই অনুষ্ঠানে সর্ব্বতভাবে সাহায্য করে আসছে। ষষ্ঠীর দিন পুজো উদ্বোধন করেন মন্ত্রী আশীষ বন্দোপাধ্যায়।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours