সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুরঃ

তাড়াতাড়ি দরজায় তালা দিচ্ছে শ্রী।
হাই দিদি।
হাই।
দোড়া দোড়া ভাগা ভাগা সা।গান গাইতে গাইতে চারতলার রুদ্র চলে গেল।তালা দিয়ে রাস্তায় নামতে রুদ্রর নতুন ফোর্ট পাশ দিয়ে স্পিড না কমিয়ে ওয়ান্ট আ লিপ্ট ,বলে হুস করে বেড়িয়ে গেল।আজকাল এই মজাদার ফর্মালিটি গুলো আর কষ্ট দেয়না।

অলিগলি পেরিয়ে রাজপথে এসে বাস ধরতে প্রায় দশ মিনিট।কাল থেকে পায়ের ব‍্যাথাটা বেশ বেড়েছে।কিছুটা পথ খুব কষ্ট হয় বটে তবে পরে সহ‍্য হয়ে যায়।আসলে জীবনতো এমনই।সইয়ে চলা।

আসলে নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে থাকলে পথ কষ্টের লাঘব হয়।এটা শ্রীর নিজের আবিষ্কার।দিনগুলো মানিয়ে নিয়ে মেনে নিয়ে চলছিলো বেশ।হঠাৎ ই এক মাতাল হাওয়ায় না না,কালবৈশাখী, সব উল্টো পাল্টা করে চলে গেল।তার নড়বড়ে বাসাটা যেটা ছেড়ে যেতে সে খুব ভয় পেতো সেটা ভেঙে গেল।ঐ বাসার মালিকেরা ওকে তাড়িয়ে দিলো।সেও আর এবার তা জোড়া লাগাতে যায়নি।বুড়ো শালিক আর দুটো ছানা নিয়ে নিজেই খুঁজে নিয়েছে শহরতলীতে এক দু কামরার আশ্রয়স্থল।
এই বাসায় কাক,কোকিল, শালিক, চড়ুই সবাই আসে।তবে তেমন জাত পাখির আনাগোনা এখানে নেই।ভাব খানা এমন ,যদি ছড়ানো খুঁদ কুড়োয় পেট ভরে মনের আনন্দ চাও তবে এই গাছ সবাইকে ছায়া দেবে।

দিদি,হরেন দিচ্ছিনা।কোন খ‍্যায়ালে থাকো।দিবো ধাক্কায়।উঠো উঠো।এটো আমার রুট নয়।ভোদর রুটবাবুটো  বসি আছে।

আরে তুমি সালামদা?হাসপাতালে নাতিটো ভর্তি।ওকে দেখতে আসিছি।
টোটো ছুটেছে অফিসের দিকে।সালামদার পরিবারের গল্প।ছয় মেয়ে তিনছেলে।বৌ মারা গেছে।পুরানো বাসায় সে নিত্য যেতো।শ্রীর বাসা ভাঙার খবরে সে জেনেছে,স্টান্ডের পাশের চায়ের দোকান থেকে। 
নিজের ঘরতো?

প্রশ্নের উত্তরে হ‍্যা শুনে এক স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বললো তোমাকে ভালোবাসার অনেক লোক দিদি।দুটা তিনটা কম হলি জীবন থামবিনি।
ব‍্যাগ হাতড়ে একটাই পঞ্চাশ টাকা এলো,দাদা নাতিকে ফল কিনে দিও বলে শ্রী দৌড়ে অফিসে ঢুকে গেল।

সুমি বারবার ফোনে সঞ্জয়কে চেষ্টা করছে।কি যে সারাক্ষন এনগেজমেন্ট ওর।উনি ফিরছেন ফ্লাইটে।গাড়ি নিয়ে বাজার যাবার পর ওনার জন্যে গাড়ি পাঠাতে হবে।
কি সঞ্জয়।তোমাকে পাওয়াতো চিফ মিনিস্টারের লাইন পাওয়ার মত।
ওপাশ থেকে সরি ভেসে এল।
গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে সব সেরে মাঝরাস্তায় সঞ্জয়কে ছেড়ে ট‍্যাক্সি নিয়ে ফিরতে সুমী গলদঘর্ম।
টগরকে সব বুঝিয়ে নিজের ঘরে এ সি চালিয়ে বসে নতুন ম‍্যাগাজিনটা খুলে চোখ পরলো ,
আরে সেই মেয়েটা না?
শ্রীতমা।ও।বুলসিট।দক্ষিণবঙ্গ দুর্গা।কোলে কটা ভিখারির বাচ্চা।এই মেয়েটা না।বলে ম‍্যাগাজিনটা সজোরে বিছানায় ছুড়ে ফেললো সুমি।

সন্ধ্যায় তমাল ফিরেছে।গাদাগুচ্ছের গিফ্ট নিয়ে।সকলের জন‍্য কিছু না কিছু।সুমিকে কিছু দেয়নি।শাশুড়ি বললেন হ‍্যারো বৌমার?তমাল মুচকি হেসে বলেছে ঐ বুড়ির জন্যে আবার কী?সুমি নিজের মনেই হেসে ভাবলো আমি চাকরবাকর নাকি?

দিদি কাল কিন্তু পীরগঞ্জে যেতে হবে তোমাকে।না রে বাবু,আমায় ছাড়দে।শরীরটা ভালো না।ওসব শুনছিনা।কাল তিনটের মধ্যেই আসবো।শ্রীতমা হাল ছেড়ে দিয়ে আটার দলাটাকে একমনে ঠাসতে লাগলো।

তমাল নিজের ঘরে ঢুকে স্নান সেরে বিছানায় গা এলিয়ে বিছানার কোনায় ফেলা ম‍্যাগাজিনটা উল্টাতে উল্টাতে ঐ পাতায় এসে অবাক বিস্ময়ে ছবিটা দেখতে লাগল।খবরটাও হাজার বার পড়তে লাগলো।কেমন একটা ভালো লাগা তার মন,শরীর ছুয়ে তাকে মোহাবিষ্ট করে তুললো।কখন যে চোখ জুড়িয়ে এল ,সে নিজেই টের পেলোনা।

সুমি রাতের খাবারের জন্য তমালকে ডাকতে এসে ঐ দৃশ্য দেখে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।রাগে অপমানে সে দিকবেদিক শূন্য হয়ে গেল।টগরকে বললো কাকুকে খেতে আসতে বল।

রাতে খাওয়া হলে ঘরে এসে সুমি কিছুতেই যেন স্বাভাবিক হতে পারছেনা।তমাল তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে সুমিকে জড়িয়ে ধরে বললো চোখ বন্ধ করো।অনিচ্ছুক সুমি চোখ বন্ধ করলো।তমাল বিছানার ওপর দুটো শাড়ি বিছিয়ে বললো,চোখ খোলো সোনা।
চোখ খুলে দুটো শাড়ি দেখেই ওর মাথায় আগুন জ্বলে গেল।ওরমধ‍্যে একটা আমার তাইতো।তা তাকে দিয়ে তার পর অন‍্যটা দিলেই পারতে।এ অপমানের মানে কী?
আহত,হতবাক তমাল বলে উঠলো দুটোই তোমার।একটা তোমার জন্মদিনের অন‍্যটা পুজোর।

রাতে জানালার দিয়ে তাকালে একটা লম্বা একা নাড়কেলগাছ দেখা যায়।শ্রীতমার গাছটাকে কেন যেন খুব আপন মনে হয়।
পায়ের ব‍্যথার বড়িটা খেতে গিয়েও রেখে দেয়।ঐ গাছটা বকে।পায়ে ব‍্যাথার মলমটা ঘসতে ঘসতে শ্রীতমা ভাবে কাল পীরগঞ্জে গিয়ে দেখতে হবে সেই গাছটাকে, যেটা সে কালবৈশাখীর জন্মদিনে পীরগঞ্জের নদীর পাড়ে লাগিয়েছিলো।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours