সাজিয়া আক্তার, ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ:

গত রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (ইইই) বিভাগের লেভেল-২ এর টার্ম ১ এর ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সোমবার ভোরে শের-ই-বাংলা হলের প্রথম ও দ্বিতীয় তলার সিঁড়ির মধ্যবর্তী জায়গায় আবরারের নিথর দেহ পাওয়া যায়। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল।

এদিকে আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ মোট ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর সাংগঠনিক তদন্তের ভিত্তিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের বুয়েট শাখার ১১ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় ধীরে ধীরে সামনে আসছে আবরার হত্যার নির্মমতার চিত্র, আর তাতেই ভারি হয়ে উঠছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসের বাতাস। 

সব শ্রেণির- পেশার মানুষের মুখে মুখে এখন আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড। ইতিমধ্যে দেশের সব শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি মানুষ এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চায়। মিডিয়াঙ্গন এখন ব্যস্ত আবরারের সংবাদ সংগ্রহে। শুধু দেশেই নয়, বিশ্বের বেশ কয়েকটি খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও স্থান পেয়েছে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি । 

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে।বুধবার সকাল থেকে বুয়েটের শহীদ মিনার চত্বরে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে নতুন ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে।

দাবিগুলো হল, খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের শনাক্ত করে সবার ছাত্রত্ব আজীবন বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে, মামলা চলাকালে সকল খরচ এবং আবরারের পরিবারের সকল ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে, দায়েরকৃত মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীনে স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি করতে হবে, অবিলম্বে চার্জশিটের কপিসহ অফিসিয়াল নোটিশ দিতে হবে, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়নি, তা তাকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে, একই সঙ্গে ডিএসডব্লিউ স্যার কেন ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করেছেন, এ বিষয়ে তাকে বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে সবার সামনে জবাবদিহি করতে হবে।

এছাড়া আবাসিক হলগুলোতে র‍্যাগের নামে ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সকল প্রকার শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনকে জড়িত সকলের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে আহসানউল্লাহ হল এবং সোহরাওয়ার্দী হলের পূর্বের ঘটনাগুলোতে জড়িত সকলের ছাত্রত্ব বাতিল ১১ অক্টোবর,২০১৯ তারিখ বিকেল ৫টার মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে, পূর্বে ঘটা এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ ও পরবর্তীতে ঘটা যেকোনো ঘটনা প্রকাশের জন্য একটা কমন প্লাটফর্ম বা সাইট থাকতে হবে এবং নিয়মিত প্রকাশিত ঘটনা রিভিউ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে, রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকা এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ অক্টোবর, ২০১৯ তারিখ বিকেল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours