দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

বীরভূমের লোবা গ্রাম। সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে বহুবার এসেছে এই গ্রামের নাম। ২০১২ সালের ৬ নভেম্বর গ্রামবাসী আর পুলিশের খণ্ডযুদ্ধের দগদগে ঘায়ের চিহ্ন হয়ত কোন দিন পুরোপুরি মুছে যাবে না।  তবে সেই চেনা দৃশ্যে আন্দোলনের গ্রাম, এখন পুরোপুরি শান্ত। সামনেই কালি পুজো। সেই উৎসবের ছোঁয়া লেগেছে গ্রামবাসীর মনে। লোবা গ্রামে পট পুজো সমেত তিনটি দুর্গা পুজো। কিন্তু সেরকম ধুম হয় না। ধুম হয় কালি পুজোয়। গ্রামে ক্ষেপা কালী ও কালিদহ কালী মিলে মোট দুটি পুজো হয়। এই দুটি পুজোর মধ্যে কালিদহের কালী পুজো চারশো বছরের বেশি পুরানো। এই পুজো নিয়ে কিংবদন্তীর কথা গ্রামের লোকের মুখে মুখে ফেরে।
কথিত প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগে রামেশ্বর দণ্ডী নামের একজন সাধক এই লোবা গ্রামে আসেন। গ্রামে রাত্রীবাস করা কালীন তিনি স্বপ্নাদেশ পান যে দেবী কালিদহের তলায় শায়িত। সকালে গোটা বিষয়টি তিনি গ্রামবাসীদের জানান। লোবা গ্রামে কোন ধীবর সম্প্রদায়ের বাস ছিল না। আজোও নেই। তাই পাশের জোপলাই গ্রাম থেকে ধীবর বা জেলেদের নিয়ে আসে লোবা গ্রামবাসীরা। মা এখানে প্রস্তর মূর্তি। মায়ের নিত্যসেবা হয় এখানে। তবে কালিপুজোয় মৃন্ময় মূর্তি হয় এখানে। মায়ের নামে জমি একশ বিঘার বেশি। মন্দিরের ট্রাস্টি আছে। ট্রাস্টির ইচ্ছে অনুযায়ী পুজো চলে।  বর্তমানে গ্রামের গৌতম ঘোষ এবং কাঞ্চন ঘোষ পুজোর প্রধান দায়িত্বে থাকেন। মায়ের মন্দিরে নিত্যভোগ ও সন্ধ্যা আরতি হয়।  পুজোয় ফলমূল, লুচি, পরমান্ন প্রভৃতি ব্যবস্থা করে থাকেন। কালীপুজোর দিন পাঁচশ ছাগ বলি হয়।
লোবাসহ আশেপাশের এগারোটি গ্রামের মানুষ এই পুজোকে ঘিরে আনন্দে মেতে থাকে। প্রতিবছর এই সময় কালীপুজো ও ভাতৃদ্বিতীয়া উপলক্ষে শ্বশুরবাড়ি থেকে মেয়েরা লোবাগ্রামে বাপের বাড়ি আসে। এমনকি পাশের রাজ্য থেকে বহু লোক আসেন পুজো উপভোগ করতে। পুজো উপলক্ষে মন্দির সংলগ্ন এলাকার মাঠে দু’দিন ধরে মেলা বসে। প্রতিবছর কোলকাতার নামী অপেরার যাত্রা আনা হয়। চারবছর আগে এসেছিল কোলকাতার রয়্যাল বীনাপানি অপেরা। আগের বার কোন যাত্রাদল আসে নি। পরিবর্তে এসেছিল সিউড়ির বাংলা ব্যাণ্ডের জলসা। দুবছর আগেও কোলকাতার রয়্যাল বীনাপানি অপেরার “চিতাতেই সব শেষ” অভিনীত হয়।  এবার হবে কোলকাতার যাত্রা “কুল পেল না কূল বধূ”।  গ্রামের  বাসিন্দা উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, কালীপুজোর দিন যাত্রা হবে। বিসর্জনের দিন বাউল হবে। ভাইফোঁটার দিন বিচিত্রা অনুষ্ঠান হবে। তারপরের দিন কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান আছে।  গ্রামের ছেলেদের নাটক “ শান্তির চিতা জ্বলছে” আছে। তবে, এবার লোবা শান্তিতেই আছে। এখানে আদৌ কোন শান্তির চিতা জ্বলছে না!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours