অঙ্কিতা ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, পূর্ব বর্ধমান:

(ছেলেবেলায় মা কিন্তু দেখা করতেন)

যখন আমি গৌরী মার কাছে থাকতাম আমার জন্য আমার মা তসলিমা নাসরিন দিল্লি থেকে শীতের পোশাক পাঠাতেন। আমি তখনো জানতাম না। আমাকে যখন পোশাক গুলি দিতো তখন আমার পোশাক কে পাঠিয়েছে তা জানা তো না। প্রশ্ন করলে শুধুমাত্র একটু হাসি ছাড়া আর কোনো উত্তর পেতাম না। আমার মা তসলিমা নাসরিন যতদিন কলকাতা শহরে ছিলেন মাঝেমধ্যেই নানান স্থানে আমার সাথে দেখা করতেন। একবার দেখা করেছিলেন দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার নোদাখালি থানার রায়পুর নামক গ্রামে। তারপর দেখা করেছিলেন কলকাতার বেহালা মেনটনের ফ্ল্যাটে। তারপর থেকে আর কোনদিন আমার খবর নেননি ও আমার সাথে দেখাও করেননি।এর কারণ আমার মা তসলিমা নাসরিন দেখা করতে চাইলে অর্পিতা চক্রবর্তী দাদা রঞ্জিত চক্রবর্তী প্রচন্ড পরিমানে অশান্তি করতেন। এবং নিজে আত্মহত্যা করার হুমকিও দিতেন।তাই আমার মায়ের সাথে দেখা করার সমস্ত পরিকল্পনা বন্ধ হয়ে গেল। অর্পিতা চক্রবর্তী এই ঔষধ দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে আমার শরীর তখন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। কারণ আমি যে সমস্ত পড়াশোনা করতাম তা আমার মনে রাখতে খুবই অসুবিধা হতো। জীবনের সবথেকে বড় সম্পদ আমার শিক্ষা। এই শিক্ষাতেও প্রভাব পরলো। আজ আমি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলাম না। এটাই আমার সবথেকে বড় দুঃখ। এর জন্য দায়ী কে? যারা আমার এই অবস্থা করলো তাঁরা দায়ী। এমনকি আমি অভিনয় করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলাম অভিনেত্রী হওয়ার।কিন্তু আমার পালক মা অভিনয় জগতে যেতে মানা করে দিলেন। কারণ ওই অভিনয় জগতে আমার বাবা যুক্ত আছেন। এইভাবে আস্তে আস্তে আমার জীবনের সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল।আমার আজও মনে পড়ে রাস্তায় রোদ্দুরে আমি যখন হেঁটে যাচ্ছি হঠাৎ করে আমার সামনে একটি চারচাকা Car এসে দাঁড়ায়। জানলার কাঁচ নামিয়ে আমার বাবা জর্জ বেকার আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন। কোন কথা বলতেন না। আজ কি এমন হল যে তার নিজের মেয়েকে এইভাবে দেখতে হচ্ছে? আমার বাবার কি একবারও মনে হলো না যে নিজের মেয়ের সাথে একটু কথা বলি। একটি বাচ্চা তো সবসময় চাই তার বাবার ভালোবাসা, মায়ের ভালোবাসা। আমার একটাই দুঃখ আজ এই সুন্দর পৃথিবীতে পিতা-মাতার ভালবাসা পেলাম না। শুধু একটি চক্রবর্তী ফ্যামিলির জন্য।সুন্দর পৃথিবীতে যার পিতামাতা থাকতেও নেই তার দুঃখ একটু অন্যরকম। মানব জীবনে সর্ব প্রথমতো বড় সম্পদ তার পরিচয়। জন্ম যখন হয়েছে তখন আমার, পিতৃপরিচয় ও মাতৃ পরিচয় আমার অধিকার। তাই সেই অধিকার নিয়ে আমি আমার জন্মদাতা পিতা জর্জ বেকার ও জন্মদাত্রী মা তসলিমা নাসরিনের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা চাইছি আমাকে পিতৃ পরিচয় ও মাতৃ পরিচয় দেওয়া হোক। (ক্রমশ)

(প্রতিবেদনের যাবতীয় দায় লেখিকার)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours