ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ   
বীরভুম  জেলা  শুধু  পশ্চিম বঙ্গ  নয়, সারা  ভারতের  একমাত্র  জেলা যেখানে  পাঁচটি  সতী  পীঠ  ও একটি  সিদ্ধ  পীঠ  সহ বহু  দেবীর  মন্দির   অবস্হিত! তাই  বীরভুমকে  বলা 'শক্তি ক্ষেত্র'!
            কিংবদন্তী,বীরভুম  জেলায়, কঙ্কালী তলায় সতীর  কাঁখাল  পড়েছিল  তাই  এটি  সতী পীঠ, সাঁইথিয়ায়  সতীর কন্ঠহাড় ( মতান্তরে  কন্ঠ  হার) পড়েছিল, দেবী  এখানে  নন্দিনীকেশ্বরী  নামে  খ্যাতা! নলহাটীতে  গলার  নলি  পড়েছিল  তাই  দেবী  এখানে  নলাটেশ্বরী  নামে  পরিচিতা! লাভপুরে  অধঃ ওষ্ঠ  পড়েছিল  তাই  এখানে  দেবী ফুল্লরা! বক্রেশ্বরে  ভ্রুমধ্য  বা  মন  পড়েছিল  দেবী  এখানে  মহিষমর্দ্দিনী! এছাড়া  তারাপীঠ  সিদ্ধপীঠ  মহা তপস্বী  বশিষ্ঠ, বামাক্ষ্যাপা  সহ  বহু  সাধক  এখান  থেকে  সিদ্ধিলাভ  করেছেন! তাই  এই  তারাপীঠ  মহাপীঠ  সিদ্ধপীঠ!
          এই  জেলাতে  বহু কালী  মন্দির  ও বিগ্রহ  আছে! এর  অন্যতম, ভদ্রপুরে  মহারাজ  নন্দকুমার  প্রতিষ্ঠিত  গুহ্যকালী কষ্টিক  পাথরের  অনুপম  শিল্প  নৈপৃন্যের  নিদর্শন! দ্বিভুজা  এই  কালীমূর্তিটি  রাজা  চৈত সিংহের  বাড়ী  থেকে  আনা  হয়! দেবী  এখানে  কুন্ডলী পাকানো  দুটি  সর্পের  উপর  অধিষ্ঠিতা! শিব  অনুপস্হিত! মায়ের  সব  অলঙ্কার  সর্প! মুকুটে  এক  হাজার  সর্প  বিরাজমান!
           কঙ্কালীতলা  থেকে  ১৪  কিঃ মিঃ  উত্তর  পূর্ব  দিকে  বোলপুর- লাভপুর  রাস্তার  ধারে  দোনাইপুর  ছোট্ট  একটি  গ্রাম! এই  গ্রামে  একই  মন্দিরে  একই  সাথে  তিনটি  কালী প্রতিমার পুজো  হয়!
          
         নিকটবর্তী  মহেশপুর  গ্রামের  চুপচাপ মুখার্জীরা ধুমধাম করে   কালীপুজা  করতেন! কোন  এক  অজ্ঞাত কারনে  তাঁরা  গ্রামে  পুজো  বন্ধ  করে  দোনাইপুরের  চক্রবর্তীদের  পুজার  দ্বায়িত্ব  অর্পন  করেন!
         সেই  থেকে  একই  মন্দিরে  তিনটি  কালীর  পুজা  হচ্ছে! কালীপুজার  রাত্রে  একজন  তন্ত্রধারক  ও তিনজন  পুরোহিত  পুজা  করেন! পুজায়  শতাধিক  ছাগ  বলি  দেওয়া  হয়! পরদিন  থাকে  পংতিভোজের  ব্যবস্হা!
        দেবীর  নিত্যপুজা  হয়! পুর্বে  টিনের  ছাউনির  মাটির  মন্দির  ছিল  বর্তমানে  কালীমায়ের  পাকা মন্দির  নির্মিান  করেছেন  সেবাইতরা!
         সারাবছরই  ভক্ত  সামাগম  ঘটে! কালীপুজার  রাত্রে  বহু দুর  থেকে  অসংখ্য  ভক্তরা মায়ের  পুজা  দিতে  আসেন!

মাঝের  প্রতিমার উচ্চতা ৩১ ফুট  ! পাশের  দুটি ১০/১২  ফুট! জনশ্রুতি  প্রায়  আড়াই'শ  বছর  পূর্বে  লাভপুরের  বন্দ্যোপাধ্যায়  পদবীধারী  জমিদার  এই  গ্রামে  মা  কালীর  পুজার  পত্তন  করেন! কিন্তু  কোন কারনে  তাঁরা  এই  পুজোর  ভার  দোনাইপুরের পাঠকের দেন!  পাঠক  বংশের  ত্রৈলক্যনাথ  পাঠক  একজন  তান্ত্রিক  ছিলেন! তিনি  স্বপ্না দেশে  এই  মন্দিরেই ' ট্যাবা  কালীর ' প্রতিষ্ঠা  করেন! এই  ট্যাবা  কালীর  মাহাত্ম্য  শিশু দের  ' ট্যাবা  রোগ ' হলে  স্বপ্নাদেশে  পাওয়া ওষুধ  ও কবজ  ধারন  করলে  ' ট্যাবা রোগ ' সেরে  যায়  এমন  বিশ্বাসে  প্রতি  শনি  মঙ্গলবার  ও অমাবশ্যায়  অসংখ্য ভক্ত  আসেন! ত্রৈলক্যনাথ  নিঃসন্তান  ছিলেন! তাঁর  অবর্তমানে  গ্রামের  চক্রবর্তী  পরিবার  দিলা মায়ের  সেবাইতের  দ্বায়িত্ব  পান!


     
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours