জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

ইতিহাসের কাল নির্নয় হয়, এক একটা কালের শ্রেনী বিরধের চরিত্রের নিরিখে। সেই হিসেবে সাধারনভাবে, পুরো ঐতিহাসিক সময় কালকে  ইতিহাসের গবেষকরা,  চারটি বড় ভাগে বিভক্ত করেছেনঃ 
(১) দাসত্বের কাল, যখন একদল মানুষ মনুষ্য সমাজকে বন্দী রেখে, শোষনের যন্ত্রটি জীবন্ত রেখেছে।
(২) সামন্তকাল বা অন্ধকারের কাল, যখন কিছু লোক, দেশের বা বিশ্বের বড় অংশের সব জমিকে দখলে রেখে, অন্য সব মানুষকে ছলে, বলে এবং কৌশলে লুন্ঠন করে চলে।
(৩) কিছু লোক পুঁজিকে হাতে রেখে পুঁজির পাহাড় নির্মান করে জনগনকে তাবে রাখে। এই ব্যবস্থাকেী আমরা পুজিতন্ত্র বলে জেনেছি। 
(৪) বহু সংখ্যক মানুষ এক হয়ে, জনগনের  ক্ষুদ্র অংশকে তাবে রেখে অর্থনৈ্তিক এবং সামাজিক ব্যবস্থাকে সাম্যের দরজার কাছাকাছি পৌছে দেয়। এই ব্যবস্থাকেই আমরা সমাজতন্ত্র বলে জেনেছি।

সাধারন ইতিহাসে, এই ব্যবস্থার এক থেকে অন্যের উত্তরনকে অনেকটা ছায়াছবির পর্দায় ঘটনান্তর হিসেবে দেখিয়ে থাকে। কিন্তু মার্ক্স যখন ইতিহাসের ভেতর দিয়ে দর্শনকে এগিয়ে দিতে চেয়েছেন, তখন তিনি ঘটনান্তরের পেছনেকার আর্থ-সামাজিক বদলের প্রতিটি ঘটনাকে শুধু নয়, ঘটনার পেছনকার  বিন্দু বিন্দু অনুদানকে পুংখনাপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান করতে গিয়েই
------ ,  বিচার করে এবং বিশ্লেষনের মধ্য দিয়ে, উল্লেখিত চারটি ধাপের মধ্যেও অনেক অনেক বাঁক চিহ্নিত করে দেন। এই বিশ্লেষনের কালে মার্ক্স  যদিও ইতিহাসের দর্শনগত  দিকটিকেই উন্মোচিত করতে চেয়েছিলেন, এই বিশ্লেষন, পুজিতন্ত্রের কালে ইতিহাসের সমাজতান্ত্রিক  রুপান্তরনের কালে
---- মেহনতি এবং সাধারন উদারবাদীদের যারা রুপান্তরে অনুঘটকের কাজ করছিলো, ইতিহাসের অবচেতন শক্তি হিসেবে, তারাই চলার পথে একটা আলোক বর্তিকা পেয়ে গ্যালেন, সোজা কথায় যাকে আমরা দর্শম বলে মেনেছি। 
----- মার্ক্স তখনই নিজের কাজের মধ্যেই নিজে হতবাক হয়ে গিয়ে আরো একটা আবিস্কার করে ফেললেন
তিনি দেখলেন,  যে  পথটা ধরে, পুজিবাদ এগিয়েছে বলে চিহ্নিত করেছিলেন, সেই পথটা কোন অবচেতন অনুসরন ছিলো না,  সভ্যতার ইতিহাসে সেটা সর্বপ্রথম ইতিহাসের সচেতন বিপ্লব। তিনি বোঝালেন, এই বিপ্লবে পুঁজির ক্ষমতায় আসাটা আসলে একটা অনুসংগ  এবং ইতিহাসের অন্যান্য রুপান্তরনের মতোই 
------ মতোই সামায়ীক, মাঝখানে অন্য একটা রুপান্তর পর্বের পরেই, আসবে, অনন্ত কালের ভাবগত  সংহতি, সেটাকেই  মার্ক্স সাম্যের স্থায়ীত্ব বলে  জানলেন;  যদিও সেখানে রুপান্তর পর্ব চলবে। সেটা হবে বাধাবন্ধনহীন,  বিবর্তনের এক অনাবিল জ্ঞান এবং সৃজনের কাব্যিক শ্রোত। 
কথা উঠবে, শিরোনামার সাথে উল্লেখিত কাহিনীর সম্পর্কটা কোথায়?
সম্পর্কটা এখানেইঃ 
মার্ক্স 'মম' নামক বস্তুটিকে  প্রকৃতির সর্বোচ্চ রুপ হিসেবে আবিস্কার করেই, বর্জোয়ারা যেখান ইতিহাসে 'জ্ঞান' এবং 'সৃজনের' ভুমিকাকে বাতিল করে দিতে  চতুর্দশ শতাব্দি থেকে চলতে  থাকা 'রেনেশাঁ' স্তব্দ করে দিয়েছিলো,
মার্ক্স 
------ 'জ্ঞান' এবং সংস্কৃতির' অখন্ড ধারার মধ্যেই, 'সাম্যের' সেই অনাবিল বিস্তৃতির সাথে চিন্তনের অবিরাম ধারাটাই যে সত্য, এই ধারার সাথে জ্ঞান এবং সৃজনের অখন্ড ধারাটিকে চিহ্নিত করে দিলেন।

এইভাবে তিনি দেখালেন,  মানবিকতাই ইতিহাসের প্রথম এবং শেষ সত্যঃ এই সত্য প্রকাশিত আদিম সাম্য থেকে বৈজ্ঞানিক্ল সাম্যই, ইতিহাসের অখন্ড রুপ 
---- মাঝখানে সংঘাতের চারটি অধ্যায়, ভেতরের ওভাল্যাপিং অধ্যায়গুলি সমেত, কিছুটা  aberration নৈতিক অধঃপতন বলা যেতে পারে।সেখানেও মার্ক্স দেখিয়েছেন, এই 'অধঃপতনটি' পেছনে ,যে সংঘাত লুকিয়ে রয়েছে, সেটাও, সেটাও আদিম সাম্যাবস্তা থেকে
----  জ্ঞান এবং সৃজনের প্রযুক্তিগত উত্তোরনের মধ্য দিয়ে, চিন্তন মুক্তির পথে সাম্যে উত্তোরন ও বিকাশ একান্ত প্রয়োজনীয় ছিলো। 
IT WAS NOT JUST TO SUPPRESS THE WORKING CLASS, BUT TO SUSTAIN CAPITALISM TO ITS STAGE OF CONCENTRATION OUT OF CRISIS,
পূজিতন্ত্র নিজের রুপ সমেত,  প্রকৃতির সন্তুলিত বিকাশের নিয়মটিকে  চাপা দিতেই, বিজ্ঞান এবং যুক্তি শাস্ত্রে এই সন্তুলনকে আটকে দিতেই
সমাজ বিজ্ঞানের উন্মোচন চায় নাই বলেই সে '
----- রেনেঁশাকে এগিয়ে যাওয়াকে রোধ করেই দিলেন তাই নয়, রাষ্ট্র নীতিতে মধ্যম যুগীয় অত্যাচারগুলিকে টেনে নামানো হোল।
সেদিকে নজর রেখেই, মার্ক্স বল্লেন,
সামন্ত তন্ত্রের বিপরীতে পুজির আবির্ভাব যদি বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম সচেতন বিপ্লব বলে বিবেচিত হয়, তবে,
SOCIALISM WOULD HAVE TO BE BOTH ORGANISED AND CONSCIOUS REVOLUTION.

এই সুত্র ধরেই লেনিন পরে বোঝালেন 
----- পুজির ক্রমাগত কেন্দ্রিভবন, পুজির মধ্যেই স্বৈরতান্ত্রিকতার সংকট নিয়ে এসেছে। ১৯১৭ এর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, বিশ্বে পুজিতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রন সমাপ্ত করে নাই , বিশ্ব অর্থনীতিতে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি একটা বাধার কারন হয়েছিল মাত্র।
এটাকেই, তিনি 'পুজিতন্ত্রের শেষ কাল এবং সমাজ তান্ত্রিক বিপ্লবের  কাল বলে চিহ্নিত করলেন। 
তবে জ্ঞানর সাথে সৃজনের সম্পর্কের প্রশ্নে, পুজিতন্ত্র জ্ঞানকে বা রেনেশাকেঁ  তখনো মনের  শারিরীক দাবী পর্য্যন্তই সংকুচিত রেখেছে।অর্থাৎ ফ্রয়েড এবং ম্যালথাসেই শেষ। আর এগুতে চায় নাই।
স্তালিনের সেই ভবিষ্যত বানীকে যাদি বুঝতে হয়, তবে   দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে, কেন্দ্রিভূত পুজির সম্ভাব্য রাজনৈ্তিক অবস্থান
and possible position about knowledge and creativity was in his mind.
স্তালীন স্পষ্ট দেখেছিলেনঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তোর কালে কেন্দ্রিভূত পুজির অবস্থানটাই হবে 'গুলি খাওয়া বাঘের ফিরে আসার মতো" 
তিনি প্রথমেই বোঝালেনঃ Capitalism so Centralized, could though not sustain HITLER, but  has sustained HITLARISM. আরো বল্লেন, HENCEFORTH, AMERICAN MILITARISM, WOULD PLAY HITLAR'S ROLE. তিনি বুঝেছিলেন, আমেরিকার মিলিটারিতন্ত্র শ্রেফ দেশে দেশে কেন্দ্রিভূত পুঁজির নেতৃত্ব দেবে তাই নয়, জ্ঞান এবং সৃজনীর যে সব অগ্রগতি হয়েছিলও, সেগুলি ধ্বসিয়ে দেবে।
মার্ক্সের আবিস্কার, সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠনের পর, সোভিয়েত এবং পরে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি সমুহ  - , সমাজ বিজ্ঞান এবং যুক্তিবাদের হাত ধরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যে সিংহচুড়ায়, সাথে সাথে  সাহিত্য ও কলায় যে বিকাশ ঘটেছিলো, সেগুলিকে ধ্বংসের চেষ্টা হবে।এমনি কী কিউবায় বিপূল বিকাশ ঘটেছে। এমনকি ভারতের দিকে তাকিয়ে দেখুন, স্বাধীনতার পূর্বে যে দেশে একটা সাইকেল নির্মান হোত না, সেই দেশ বিশ্বের চতুর্থ বা পঞ্চম প্রযুক্তির দেশ। 
এবারে সোভিয়েতকে ভেতর এবং বাইরে থেকে ভেংগে দেওয়া হয়েছে, ঠিক যেমনভাবে বাংলার বামফ্রন্টকে ভাংগা হয়েছে।
------- অর্থ পরিস্কার।গুলি খাওয়া বাঘ এখন ফিরে এসেছে। 
মার্ক্সের আবিস্কৃত বস্তুর মানবিক রুপ নিয়ে, আগে থেকে  যে বিস্তর বিকাশ ঘটেছিলো, শত শত গবেষনাগারে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ গবেষক এনে সমাজবিজ্ঞানকে সা্ম্যের সিংহ দ্বারে পৌছে দিয়েছিলেন। এমন কি একপ্রান্তে কিউবা অন্যপ্রান্তে ভারতে সমাজ বিজ্ঞানের সাথে সাথে আত্মমর্য্যাদার রাজনীতি এবং অর্থনীতি অনেক গভীর পর্য্যন্ত শেকড় বিস্তারের সুযোগ পেয়েছে। 
কাজেই যে কথাটি ভারতীয় সাম্যের প্রথম বোঝা উচিত ছিলো তা হোল
------ বিশ্বের প্রথম এবং প্রধান অসমাজতান্ত্রিক দেশ, যে দেশ সোভিয়েত থেকে সব থেকে বেশী সাহায্য পেয়েছিলো, রন ক্ষেত্রে এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, সেখানে অন্য কোন দিকে না হোক
------ জ্ঞান ও সৃজনীর প্রশ্নে যে বিকল্পটুকু দাড় করানো উচিত ছিলো, সেটা করেছে কি না  বিবেচনা করে দেখা উচিত ।  বিশেষতঃ দেশের সব থেকে শিক্ষিত এবং ত্যাগী অংশ, তাদের কাছে আত্মসমর্পন করেও, জনগনের এই অংশের প্রতি তারা সুবিচার করেছেন কী না, সেটায় নিশ্চিত হতে  হবে প্রথম। (ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours