প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান: 

কাকে বলবো বিজয় দশমী!!  কিসের উপাচার!
অন্ত চিহ্নিত আসন ছুঁয়েই কি শুক্লা পক্ষের দশমী তিথিতেই চলা  এই প্র‍ত্যাবর্তন !  "রামচরিত মানস ", কালিদাসের "রঘুবংশম " তো এই তথ্যের সংযোগ রেখে যাই। আবার "মহাভারত " বলে, দ্বাদশ বৎসরের অজ্ঞাতবাসের শেষে পান্ডবরা নাকি শমীবৃক্ষে লুকায়িত তাঁদের অস্ত্র পুনরুদ্ধার করেন আর ছদ্মবেশ থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের পরিচয় জ্ঞাপন করেন৷ এই  কি তবে সত্য!

ইতিহাস যে, ভিন্ন কথা বলে। এই বিজয় দশমী হলো "অশোক বিজয় দশমী "। অশোক ছিলেন মৌর্য সম্রাট আর কলিঙ্গ যুদ্ধ ছিলো তাঁর জীবনের পরিবর্তনের মূল ধারক। তিনি কলিঙ্গ যুদ্ধ জয় করে সেই বিজয় উৎসব দশ দিন ব্যাপি পালন করলেন। তাকে অশোক বিজয় দশমী বলে। কিন্তু, রক্তের হোলি খেলা সেতো, তাঁকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে। প্রকৃতি তো কার্য কারণে বাঁধা। তবে তরঙ্গ যে ফিরে পেতেই হবে, তাই লড়াই। আর এই লড়াই তাঁর নিজের মধ্যে যা থেকে মুক্ত হতে উদ্বেলিত হয়ে পড়লেন। এই দিনই সম্রাট বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নিলেন। 
ধর্ম " মানে তো সবমঙ্গল কামনা, আর এই সর্বমঙ্গলের সাধনাতেই তো মুক্তি, পবিত্র বিজয়া দশমী ক্ষণ। 

এরপর জীবন অন্যখাতে বইতে থাকে। বিশ্বাস, আশ্বাস আর জীবনের বুকে সত্য অনুভাবনকে আঁকড়ে নিয়েই তিনি  বুদ্ধ জীবন চার্চা করতে থাকেন৷ শুরু হয় ভ্রমণ ; অবশেষে ভন্তে মোজ্ঞিলিপুত্ত নিষ্পের কাছ থেকে তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। হিংসা পথ পরিত্যাগ করে তিনি ধর্ম পথে বহু স্মারক তৈরি করেন। মানুষ, সম্রাট অশোকের এই পরিবর্তনে খুশি হয়ে দ্বীপ উৎসব পালন করে। 

তবে প্রশ্ন আসবেই;  রাম রাবণের যুদ্ধ তবে কি!!  দশেরা তবে কি!!  ইতিহাস বলে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য থেকে শুরু করে মৌর্য সম্রাট বৃহদ্রথ, মোট দশ জন সম্রাট। 
১) চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ২) বিন্দুসার মৌর্য ৩) সম্রাট অশোক ৪) কুনাল মৌর্য ৫) দশরথ 
মৌর্য ৬) সম্প্রতি মৌর্য ৭) শালীশুক্ত ৮) দেববর্মা মৌর্য ৯) সত্যধন মৌর্য ১০) বৃহদ্রথ মৌর্য

মৌর্য বংশের নাবালক সম্রাট বৃহদ্রথ এর সেনাপতি ছিলেন পুষ্যমিত্র শুঙ্গ। ১৮৫ খৃষ্টপূর্বাব্দে প্রকাশ্যে তিনি বৃহদ্রথকে হত্যা করে শুঙ্গ বংশ প্রতিষ্ঠ করেন৷ তাই এর নাম বিজয় দশমী৷ এই উৎসবে মৌর্যদের দশজনের  দশমাথার পুতুল  কেটে পুষ্যমিত্র শুঙ্গ দহন করেন।

বাবা সাহেব অম্বেদকর এই ইতিহাসকে তুলে ধরতেই ১৯৫৬ সালে ধর্ম দীক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর সময় ১৯৫৬ খ্রীস্টাব্দের ১৪ ই অক্টোবর সম্রাট অশোকের বিজয় দশমীর ২৫০০ বছর পূর্ণ হয়েছিল৷ তিনিই এর নাম দেন "ধম্ম চক্র প্রবর্তন "।  অর্থাৎ, এর উদ্দেশ্য  হলো স্বতন্ত্রতা, বন্ধুতা ও ন্যায়৷ "তবে সম্রাট অশোক চালু করলেও, শুঙ্গ এই চাকাকে রোধ করেন। 

সঠিক দিশা নির্দেশ করেই সঠিক ইতিহাস৷ তবু স্তব্ধ  আয়োজনে আমাদের  বাস। পথ চলা যাই হোক, সত্য সামনে থাক, তথ্যে ও ইতিহাসের অবগুন্ঠন মোচনে বিষয় সার্থক হোক, প্রার্থনা আজ।



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours