গৌতম দাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, রাজ্য আবগারি দফতর ও লেখক, কলকাতা:

"কাপুরুষ বাগদাদি কুকুরের মতো মারা গেছে"!!! সাংবাদিক সম্মেলনে এসে আমেরিকার প্রেসিডেনট মি. ট্রাম্প ঘোষণা করলেন, এই মূহুর্তে বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসী নেতা, মোস্ট ওয়ান্টেড আল-বদরী শেষপর্যন্ত নিহত হয়েছে। কে এই আল-বদরী, কেনোইবা তার মৃত্যুকে কুকুরের মতো বলা হলো! ঝটাপট যেনে নেওয়া যাক এই বাগদাদি সম্পর্কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু কথা :-                                                      আসল নাম ইব্রাহিম শাহ মুহাম্মদ আউলিয়া, সারা বিশ্বব্যাপী একজন সন্ত্রাসবাদী জঙ্গি জিহাদী নেতা হিসেবে তার কুখ্যাতি!  তিনি ডক্টর ইব্রাহিম আবু দুইয়া নামেও পরিচিত ছিলেন পরে  খলিফা ইব্রাহিম নাম নিয়ে ইরাকের পশ্চিমাঞ্চল আর সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে নিয়ে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র ঘোষণা করেছিলেন এবং নিজেকে ওই রাষ্ট্রের খলিফা ঘোষণা করেছিলেন। বিশ্বাস করা হয় আল-বাগদাদী 1971 এ ইরাকের সামারাতে একটি কট্টর সুন্নি মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় 2003 এ যুক্তরাষ্ট্র বাহিনীর ইরাক অভিযানের সময় তিনি একজন ইমাম ছিলেন। বাগদাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন, যুবক অবস্থায় একজন সফল ফুটবলার হিসেবে এতোটাই খ্যাতি লাভ করেছিলেন যে তাকে কেউ কেউ 'মারাদোনা' বলেও সম্বোধন করতো!
যাইহোক তার মহান কীর্তি কাহিনীর একটু বর্ণনা করা যাক, এই বাগদাদী আইএসআইএল পরিচালিত নৃশংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে একদম সরাসরি ভাবে জড়িত ছিলেন, তার কীর্তির মধ্যে রয়েছে ইরাকের ইয়াজিদিদের গণহত্যা, ব্যাপক হারে যৌন দাসত্বের শৃষ্টি, সংগঠিত রুপে ধর্ষণ, বেত্রাঘাত ও জনসমক্ষে ফাঁসির মাধ্যমে ব্যাপক নরহত্যা!  দীর্ঘদিন ধরেই চলেছিল এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও গণহত্যা ! শুধু তাই নয় সংগঠনের প্রচারের উদ্দেশ্যে এইসব  নৃশংসতা বর্বরতা (পাথর মেরে হত্যা, জ্যান্ত পুড়িয়ে হত্যা, গণ ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা, প্রকাশ্যে ফাঁসি দিয়ে হত্যা ইত্যাদি নৃশংসতা দেখানোর জন্য ভিডিও তৈরি করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা ! অনেকের মতে সাদ্দাম হোসেনের শাসনকালেই ধর্মপ্রাণ আল বাগদাদি ভয়ংকর জঙ্গি জিহাদীতে পরিণত হয়েছিলেন।    এই 27 এ অক্টোবর দীপাবলির দিন সেই মহাপরাক্রমশালী আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদি, মার্কিন সেনাদের গুলিতে সরাসরি নয়, কুকুরের মতো পালিয়ে গিয়ে গোপন সুড়ঙ্গে ঢুকে আত্মরক্ষার শেষ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শেষমেশে আত্মঘাতী হলেন!                খবর আসছিল সোশাল মিডিয়াতে কয়েক দিন ধরেই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ায়তেও লেখা হচ্ছিল উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর সেনা অভিযানে আইএসের শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগদাদি মারা গেছেন।
অবশেষে রবিবার ছুটির সকাল হোয়াইট হাউস থেকে যখন সেই খবর ঘোষণা করলেন সয়ং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং একই সঙ্গে  অভিযানের বিস্তারিত বিবরণ দিলেন সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তখন যেন এবারের দেওয়ালি সার্থক হয়ে উঠলো! এতো অন্যায় অত্যাচার এতো নৃশংস হত্যার অন্ধকার থেকে শুভ শক্তি উজ্জ্বল আলো হয়ে উঠলো যেন আবার! এই আবু বকর আল বাগদাদির  নিহত হওয়ার খবর বা গুজব এর আগেও বহুবার শোনা গেছে কিন্তু পরে আর তার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিবিসির সিরিয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন এর আগে অন্তত পঁয়ত্রিশ বার তার নিহত হবার গুজব বাজারে ছড়িয়েছে। সংবাদে প্রকাশ আল বাগদাদি যে বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন রাতের অন্ধকারে মার্কিন স্পেশাল ফোর্স সেখানে অভিযান চালায়। আটটি হেলিকপ্টার এই অভিযানে অংশ নেয়, প্রচণ্ড গোলাগুলির বিনিময়ের পর আমেরিকান কমান্ডোরা বাড়িটি ঘিরে ফেলে দরজা দিয়ে না ঢুকে দেয়াল ভেঙ্গে বাড়িটির ভেতরে ঢুকে পড়ে, সেই সময় নাকি আল বাগদাদি তার তিন বাচ্চাকে নিয়ে একটি বদ্ধ সুড়ঙ্গে লুকানোর চেষ্টা করেন, মার্কিন সেনাদের সাথে থাকা কুকুর তাকে তাড়া করলে উপায় না দেখে আইএস নেতা শরীরে বাঁধা আত্মঘাতী বিস্ফোরকের সুইচটি টিপে দেন, প্রচন্ড বিস্ফোরণে সুড়ঙ্গের সঙ্গে  আল বাগদাদির শরীরও ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, তার সঙ্গে থাকা তিনটি শিশুও নিহত হয় এছাড়া আইএস নেতার বেশ কয়েকজন সহযোগীও নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও নিশ্চিত হবার জন্য জানিয়েছেন আল বাগদাদির ছিন্নভিন্ন শরীরের ডিএনএ পরীক্ষা করে তবেই তার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে এইবারা।  প্রায় দু ঘণ্টা ধরে শনিবার গভীর রাতে চলে এই মার্কিন অভিযান উত্তর পশ্চিম সিরিয়ায় ইদলিব প্রদেশে বারিশা অঞ্চলে, হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালানো হয় গোপন খবরের ভিত্তিতে মুলত দুটি বাড়িকে লক্ষ্য করে, ক্ষেপণাস্ত্রও ছোঁড়া হয়, অভিযানে একটা বাড়ি গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর সেনাবাহিনী সেখানে ঢুকতে সক্ষম হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেছেন, মার্কিন বাহিনী এবারের অভিযানে ব্যাপক অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছে। 2011 এ  আইএস এর এই সন্ত্রাসী নেতাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে আমেরিকা, পরে পুরস্কারের অঙ্ক বাড়িয়ে তা পঁচিশ মিলিয়ন ডলার করা হয়, যা ভারতীয় টাকায় একশো সাতাত্তর কোটি টাকার সমান, ভাবা যায় কতটা ভয়ংকর হলে তার মাথার দাম এতো টাকা হতে পারে! হয়তোবা এতো বিশাল অঙ্কের পুরস্কারের লোভেই কেউ বা কারা তার সন্ধান আমেরিকার গোয়েন্দাদের দিয়ে দিয়েছে কিনা তা অবশ্য জানা যায়নি এখনো!  মি. ট্রাম্প এই অভিযানে নানাভাবে সহায়তা করার জন্য সিরিয়া, তুরস্ক, রাশিয়া এবং কুর্দিদের ভূয়সী প্রশংসা করেন, কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের কমান্ডার মাজলুম আবদিও এই বক্তব্যকে সমর্থন করে জানিয়েছেন শনিবার রাতের এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডোদের সঙ্গে তাদের সেনাবাহিনীও যৌথভাবে অংশ নিয়েছেন।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours