গৌতম দাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, রাজ্য আবগারি দফতর ও লেখক, কলকাতা:

বলা যেতে পারে দেওয়ালি মানে পুলিশের সাথে শব্দ দানবদের একপ্রকার কুমির ডাঙা খেলা চলে ! জেলার কথা বাদই দিলাম, খাস কলকাতা শহরে রাত যতো বেড়েছে শব্দবাজির দাপট ততই বেড়েছে! দরজা জানালা বন্ধ করেও ঘরে টেকা দায়! শব্দ দানবের হুঙ্কারে শহর কলকাতা যেন আতঙ্কিত অসহায় সারমেয়! মুহুর্মুহু থানা বা কন্ট্রোল রুমের টেলিফোন বেজে উঠেছে, শব্দ বাজি ফাঁটার খবর পেয়ে তক্ষুনি পুলিশ ছুটে গেছে ঘটনাস্থলে কিন্তু কোথায় কি! এলাকায় পৌছে পুলিশ দেখছে চারিদিকে শুধুই নিস্তব্ধতা, এলাকার লোকজন কেউ নেই রাস্তায় বা বাড়ীর ছাঁদে, গুড বয়ের মতো সবাই যেন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে! আসলে এসবই সেই ছোট্ট বেলার 'কুমির ডাঙা খেলা' কুমির তোমার জলকে নেবেছি বলে, নিয়ম ভেঙে,শব্দ দূষণের তোয়াক্কা না করে যথেচ্ছ বাজি ফাটানো চলছে, আর পুলিশ(কুমির) এলেই জল থেকে ডাঙায়(ঘরের নিরাপদ আশ্রয়ে) উঠে যাওয়ার মজার খেলা!                                               
    এতো প্রচার, নিষেধাজ্ঞা, ধরপাকড় সত্বেও শব্দ বাজির তাণ্ডব ঠেকানো যাচ্ছে না কেন! সমস্যাটা কোথায়, মন্ত্রী থেকে আমলা, পুলিশের নিচুতলার কর্মী থেকে উঁচু তলার আধিকারিকরা সবাই মেনে নিচ্ছেন, তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন তবু শব্দ বাজির দাপট ঠেকানো যাচ্ছে না! কিন্তু কেন এই ব্যর্থতা, সেই সব তথ্য বছরের পর বছর ধরে বিশ্লষণ চলছে চলবে! যেমন এ বছর লালবাজারের তথ্য বলছে গতবারের থেকে গ্রেপ্তার বেড়েছে এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে, গতবছর যেখানে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ছিল 472 এবার বেড়ে হয়েছে 758, আধিকারিকরা বলছেন মোটের উপর তারা পুলিশ বাহিনীর ভূমিকায় সন্তুষ্ট! কিন্তু বাস্তব চিত্রটা যদিও খুব একটা সন্তোষজনক নয়, গ্রেপ্তার যেমন বেড়েছে, বেপরোয়া বাজির আওয়াজ কিন্তু তার থেকে আরও বেড়েছে! হয়তো সেই কারণেই বাতাসে দূষণের মাত্রা সব পুরনো রেকর্ড ভেঙে দিয়ে গত বছরের থেকে দ্বিগুণ হয়েছে, গতবছর কালীপুজোর দিন, রাত বারোটার সময় বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ ছিল যেখানে প্রতি ঘনমিটারে সর্বোচ্চ  720.41 মাইক্রোগ্রাম, এ বছরে এক লাফে সেটা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে  1757.7 এ পৌছে গেছে! যা কিনা আমাদের সহনশীলতার মাত্রার ষোল গুণ বেশি!                এর দায় কার? শুধুই কি পুলিশ আর প্রশাসনের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েই পার পেয়ে যাবো আমারা, না পার পাওয়া সম্ভব! এর ফল তো ভুগতেই হবে সে যারা বাজি ফাটিয়েছে তারাও যেমন ভুগবে যারা বাজি ফাটায়নি তারাও বিনা অপরাধে ভুগবে! আচ্ছা যারা নিয়মকানুনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ওই সব বেঁধে দেওয়া ডেসিবেলকে তোয়াক্কা না করে যথেচ্ছ বাজি ফাটানোতে বিশ্বাসী তারা তো কেউ আল কায়দা জঙ্গিদের মতো প্রশিক্ষিত জেহাদি নয়! তবে আটকানো যাচ্ছে না কেন!  বিকট বাজি ফাটানোর সঙ্গে ধর্ম পালনেরও তো কোনো সম্পর্ক নেই! তাহলে কি, কিসের আনন্দে এই ভয়ংকর লীলা! এই অবোধ অসচেতন নাগরিকরা তো আমার আপানার মতোই সাধারন মানুষ, শিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত এই শহরের ভালো মন্দের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষ, তাদের অনেকেরই বাড়ীতে বৃদ্ধ বা অসুস্থ পরিবার-পরিজন আছে, আছে পোষ্য কুকুর বা বাড়ীর সামনে আনুগত্য প্রদর্শন করা রাস্তার কুকুরের দল, শহরের আকাশের প্রিয় পাখীর দলও আক্রান্ত হচ্ছে,  দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি যে ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউই এই সব সস্তা আবেগকে প্রশ্রয় দিতেই চায় না!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours