অঞ্জন সেনগুপ্ত,  ফিচার রাইটার, কলকাতা:

নাথুরাম গডসে আপনাকে খুন করতে চেয়েছিলেন একবার বন্দুকের নল দিয়ে কিন্তু আসলে উনি আপনাকে অমর করেছেন, তপ্ত বুলেটের উষ্ণতাকেও নিশ্চই শীতল করেছে অহিংসার স্নিগ্ধতা।কৈশোরে ভীষণ রাগ ছিল আপনার উপর।চৌরিচোরায় অত্যাচারী ইংরেজ অত্যাচারিত স্বদেশবাসীর হাতে মার খেলো তাতে আপনি ক্ষেপে গেলেন কেন?কেনো স্বাধীনতার নির্ণায়ক লড়াইয়েও অহিংস হতে হবে আন্দোলন কে? কৈশোরে কত কু-কথা শুনেছি এবং যুক্তি দিয়ে সমর্থন করেছি সেই কু-ভাষ্য গুলি। প্রাক-যৌবন থেকেই স্বপ্নের পুরুষ এক রোমান্টিক নায়ক ,যার স্বল্প দাড়ি গালে, মুখে চুরুট ,মোটরসাইকেল নিয়ে যে ডাক্তার লাতিনআমেরিকার এদেশ থেকে আরেক দেশে মুক্তির বার্তা বয়ে নিয়ে বেড়ায়। আর্জেন্টিনায় জন্মে কিউবায় নিপীড়িত মানুষ কে সশস্ত্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে শোষণ মুক্ত করে আবার বলিভিয়ার জঙ্গলে ছুটে যায় বিশ্বমানবতাকে শৃঙ্খল মুক্ত করতে সেই চে ,চে গুয়েভারা । তাকেই আলোকবর্তিকা করেছি বাপু। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষেত্রেও নেতাজি ভেবেছি আরেক রোমান্টিক পুরুষ সুভাষ চন্দ্র বসুকে আপনার ওপর রাগ হতো ভীষণ সুভাষ চন্দ্রকে সমর্থন না দেবার জন্য। হিটলার, মুসোলিনি কিংবা তোজও তো ব্রিটিশ বিরোধী তাহলে কেন তাদের সাথে যুক্ত হয়ে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাবে না? সেদিন উত্তর গুলো খুঁজে পাইনি। জীবনে , যৌবনে ,দেশপ্রেমে, শোষিত নিপীড়িত মানুষের মুক্তির পথ হিসেবে অর্ধ সত্য সোভিয়েতের সংগ্রাম এর গল্প বা রূপকথার চাইনিস লংমার্চের গল্পের নির্মাণের ওপর দাঁড়িয়ে চে গুয়েভারা কে জীবন, মরণ, হাসি ,কান্না, স্বপ্ন ও প্রেমের আদর্শ করে যেদিন এগিয়ে চলতে চেয়েছি, সেদিন কোথায় আপনি? কোথায় আপনার অহিংস দর্শনের প্রভাব।
বিশ্বাস করুন গডসের মতন একদিন, একবার নয় প্রতিদিন বারবার আপনাকে খুন করতে চেয়েছি। আজ আপনার মৃত্যুর সত্তর বছর পর প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে আপনি পিতা বারবার পিতা। নিজের মধ্যে কার সব হিংসাকে উপাদান কে আপনি ধুয়ে দিচ্ছেন পরম পিতার স্নেহে। আপনাকে যারা খুন করেছে অন্তত নাথুরাম গডসের সঙ্গী দেরও আজ আপনি পিতা। আজ ভারতবর্ষ শুধু স্বাধীনই হয়নি আজ আপনার ভারতবর্ষ পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ গণতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। ভারতবর্ষের ডান, বাম, অতি বাম ,অতি দক্ষিণ , উদার গণতান্ত্রিক সকলে আজ আপনার অনুগামী , 2রা অক্টোবর সবার কাছে এক উৎসবের দিন । অহিংসা মানুক আর না মানুক কেউই অস্বীকার করতে পারে না ।সশস্ত্র বিপ্লবের নামে জঙ্গলে আধঘন্টার বিচারে গণ আদালতে যারা মানুষকে মৃত্তু দণ্ড দেয় তারাও ধরা পড়লে গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থায় বিচার চায় । আমাদের রাজ্য পশ্চিমবাংলায় সাড়েতিন দশকের এক শাসন ভেঙে দেয় আপনার পথ 'অনশন'। আপনার অহিংস পথে শুধু রাজনৈতিক সাফল্য লাভই নয় আজ গোটা বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দর্শন হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে আপনার অহিংস পথের দিশা।কত শক্তি আপনার নিজস্ব দর্শনে ,যারা আপনার মৃত্যু চেয়েছিলো প্রতি 2রা অক্টোবর তারাই বার বার বার আপনার পুনর্জন্ম ঘটাচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী জখন বলেন আমরা বিশ্বকে যুদ্ধ নয় বুদ্ধ দিয়েছি তখন উনি নিশ্চই কপিলাবস্তুর রাজপুত্রের সাথে সাবরমতির শান্তি দূতের কথাও বলতে চেয়েছেন। তা শুনে আবার মিঃ ট্রাম্প অনেকেই জাতির জনক বলে ফেললেন ,তাও তো আপনারই কথা ভেবে। আজ জীবনের পরিণত বয়সে বুঝি আপনাকে খুন করতে চেয়ে বেশী বেশী করে বার বার মেনে নিয়েছি আপনি পিতা ,আপামর জগৎ সংসারের আপনি পরম পিতা।দর্শনে ,মননে চিন্তায়, চেতনায় আপনি পিতা।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours