নীলাঞ্জনা চৌধুরী, ফিচার রাইটার, সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার ও শিল্পোদ্যোগী, কলকাতা:

এই সবে গেল ভাই ফোঁটা, তার আগে দীপাবলীর আগের দিন ভুত(নরক) চতুর্দশী, তারও আগের দিন ধনতেরস। প্রতিটি দিনের মাহাত্ব সম্পর্কে আমরা কম বেশি জানি। কিন্তু, একটা জিনিস খেয়াল করেছেন? এই যে ধনতেরস থেকে ভাইফোঁটা, প্রতিটি অনুষ্ঠানে একজন “কমন” তিনি হলেন যমরাজ। উত্তর ভারতের প্রচলিত লোক কথা অনুযায়ি, বৈশ্য হিমার পুত্রব্ধু, স্বামীর অকালমৃত্যু ঠেকাতে, ধনতেরসের রাতে আলো আর সোনার স্তুপ সাজিয়ে রেখে স্বামীর প্রাণ নিতে আসা যমরাজের চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিলেন। এরপরে, নরক চতুর্দশীর দিন, দরজার পাশে “যমদীপ” দেওয়ার প্রথা আছে, যাতে পরিবারে কেউ অকাল মৃত্যুর শিকার না হ’ন।মা কালী যে কাল-হন্ত্রী সে ত সবাই জানি, সঙ্গে এ ও জানি যা “কাল” হল যমরাজের অপর নাম। এরপর ভাইফোঁটা, এর সাথে যমরাজের সম্পর্ক আর নতুন করে বলতে হবে না। এছাড়া কিন্তু যমের পুজার আর কোন অনুষ্ঠান সারা বছরে আর হয় না। যম হিন্দু মতে মৃত্যুর দেবতা, তাই হয়ত কিছুটা ভয়ে, কিছু অস্বস্তিতে তাঁকে দূরে সরিয়ে রাখা। 
যমের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋক বেদে। দশম মন্ডলের, দশম, চতুর্দশ এবং পয়ত্রিশ সংখ্যক সুক্ত তাঁর উদ্দেশ্যে রচিত। এখানে তাঁর পরিচয় তিনি মৃত্যুর দেবতা, পিতৃলোকের অধিপতি এবং দক্ষিণ দিকপাল।  তিনি বিবস্বান (সুর্যের আরেক নাম) এবং সরণ্যু এর জমজ পুত্র, তাঁর জমজ বোন যমী। যমের আর এক ভাই আছেন তিনি শ্রাদ্ধদেব মণু ( ইনিই কি বৈবস্বত মণু?)। শনিদেব তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই। ঋক বেদে একথাও বলা হয়েছে যম মানুষের বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন এবং প্রথম মানুষকে তার নিজস্ব মনোবৃত্তি অনুসারে নিজের জীবন পথ নির্ধারণের স্বাধীনতা প্রদান করেন।
এখানে একটা আকর্ষণীয় তথ্য দিতে চাই, পার্শীদের ধর্ম Zoroastrianism এ মৃত্যুর দেবতার নাম Yima (য়িমা), কি অদ্ভুত মিল !! তাই না?
হিন্দুদের নানা পুরাণে যমকে বিভিন্ন বিষয়ের অধিপতি বলে বর্ননা করা হয়েছে  এবং তা এক এক উপাখ্যানে এক এক রকম। যেমন ব্রহ্মাপুরাণে তাঁকে ধর্ম ও বিচারের অধিপতি হিসেবে বর্ননা করা হয়েছে, অন্য পুরাণে কিন্তু তাঁকে ধর্মাধিপতি হিসাবে বলা হয় নি।
ঋকবেদ অনুসারে যম হলেন প্রথম মানুষ যাঁর মৃত্যু হয়। সেই ভাবেই তিনি পিতৃলোকের প্রথম অধিবাসী, এবং যেহেতু তাঁর কোন সন্তানাদি নেই তাই তিনি কখনো পিতৃলোক থেকে মুক্তি পান না। এই সন্তানাদি ও পিতৃলোক থেকে মুক্তি বা পুনর্জন্ম নিয়ে ভবিষ্যতে কথা বলা যাবে, আজ অন্য প্রসঙ্গ। 
ঋকবেদের এক কাহিনী দিয়ে শুরু করিঃ 
যম ও যমী হলেন পৃথিবীর প্রথম মানব ও মানবী । একবার যমী কামনার্ত হয়ে যমের প্রেমাকাংক্ষায় আকুল হলেন। যমীর ইচ্ছা যম তাঁর গর্ভে সন্তানের সুচনা করেন।
যম বললেন “কোন নারী ও পুরুষ, যাদের মধ্যে রক্ত সম্বন্ধ আছে (অর্থাৎ তারা একই পিতা মাতার সন্তান), তাঁদের মধ্য শারিরীক সম্পর্ক আমার পছন্দ নয়, ভগবান সব দেখছেন।”
যমী মিলন কালে ভগবান দেখছেন, এই নিয়ে বিন্দুমাত্র লজ্জিত হলেন না এবং ভগবান এর কথা উপেক্ষা করে বললেন “এর মধ্যে লজ্জার কি আছে? স্বাভাবিক ব্যবহার নিয়ে আপনি চিন্তিত কেন?”
একদিকে যমী সত্যই বলেছিলেন, অতীতে দেবতারা পরস্ত্রীহরণ, বহুগমন সহ বহু পাপকার্যে লিপ্ত হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরা সন্তান উৎপাদন করেন নি। যম মুলতঃ, যমীর সঙ্গজাত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।
যম বললেন “পূর্ব পুরুষেরা যে ভূল করেছেন, আমরা তা পুনরাবৃত্তি করতে পারি না, বরং  আমাদের তা সংশোধন করে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ।“
তখন যমী বললেন “ প্রজাপতি ব্রহ্মা আমাদের দুজন কে সংযুক্ত করেই মাতৃগর্ভে স্থাপন করেছেন, তিনি আমাদের মিথুন হিসেবেই সৃষ্টি করেছেন, তাহলে আমরা কেন প্রকৃতির বিরুদ্ধে যাচ্ছি?”
যমী আরও বলেন “আপনি যে পাপের ভয় পাচ্ছেন, তা কখনোই পাপ নয়। তাছাড়া কে আমাদের মিলন দেখতে পাচ্ছে? তাহলে পাপ কিসের?”
অর্থাৎ যমী ইশারা করছেন যে যদি কোন সমাজ বর্জিত কার্য কেউ প্রত্যক্ষ করেন তবে তা পাপ, নইলে নয়। কোনটা পাপ আর কোনটা নয়, তা সমাজ তৈরি করে, যে সমাজ মানুষেরই সৃষ্টি।
এরপর যমী বলেন “আমি আপনার সাথে মিলনের জন্য উৎগ্রীব, আমি আমার শরীর আপনাকে পত্নি রূপে সমর্পণ করতে চাই।” লক্ষনীয়, যমী কিন্তু এখানে বিবাহের কথা বলছেন না, কিন্তু তিনি পত্নি কথাটা ব্যবহার করছেন।
যম তখন যমীকে বলেন যে, তিনি যমীর ইচ্ছাপুরন করতে অপারগ, কিন্তু যমী অন্য কারোর সাথে মিলিত হতে পারেন। দেখা যাচ্ছে যে যম কিন্তু শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের বিরুদ্ধে নন, তিনি শুধু দুইজন রক্ত সম্পর্কিত স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন, বিশেষতঃ সন্তান উৎপাদনের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও, ঋকবেদে (১০/১২/৬) পাওয়া যায় যে যম একবার তাঁর মাতাকে শারীরিক আঘাত করেন। কেন তা করেন তার কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না। ধারনা করা যেতে পারে যে তাঁর মা হয়ত, তাঁর বোন যমীর মতই মিলনেচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, কিম্বা কন্যা যমীর ইচ্ছাতে সহমত পোষন করেন।
ঘটনা যাই হোক, এই সমস্ত কথার মধ্যে দিয়ে, আমরা যমের এবং সেই সুত্রে ঋকবেদের সমকালীন ভারতীয়দের বৈজ্ঞানিক চিন্তা ধারার প্রকাশ দেখতে পাই। 
আজকের Genetics বলে যে, সমগোত্রীয় বিবাহ বা শারীরিক সম্পর্কের ফলে যে  সন্তানাদির জন্ম হয়, তাদের মধ্যে বংশগত রোগ, বিকলাঙ্গতা  হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বৃদ্ধি পায় । শুধু তাই নয়, এর ফলে পুরুষের Y Chromosome খর্ব হয়ে যায় (shrinks), যা মানব বিলুপ্তির কারন হতে পারে। সেই সুদূর অতীতে, কোন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই  তাঁরা Genetics এর এই মহাসত্য উৎঘাটন করেন, সম্ভবত শুধুমাত্র পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে।
আবার যমের কথায় আসা যাক, এর পরে যম ভবিষ্যত-বাণী করেন এই বলে যে “ সময় আসছে, ভাবীকালে একই পিতা-মাতার সন্তান ভাই বোনের মধ্যে বিবাহ বা সেইরূপ সম্পর্ক সম্পুর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ হবে”।
শেষপর্যন্ত যম মানব কল্যাণে নিজের অমরত্বকে অস্বীকার করেন।(ঋকবেদ ১০/১৩/৪), তিনি ‘বৃহস্পতি যজ্ঞে’, নিজের প্রিয় শরীর আহুতি দেন ও মৃত্যু বরণ করেন। তিনিই প্রথম মানব যিনি মৃত্যুর অভিজ্ঞতা লাভ করেন। এর পরেই তিনি দেবত্ব লাভ করেন ও পিতৃলোকের অধিপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
এদিকে প্রিয় ভাই এর মৃত্যুতে যমী কান্নায় ভেঙ্গে পরেন, তখন দেবতারা এসে তাঁকে সান্তনা দেন ও তাঁকে ‘যামিনী’ নামে অভিহিত করে, রাত্রির অধিষ্ঠাত্রী দেবীতে উন্নিত করেন। বলা হয় এর আগে শুধুমাত্র দিন ছিল এবং সময়ের পরিমাপ সম্ভব ছিল না। যমী, যামিনী রূপে অনন্তকাল ধরে দিবা রুপী যমকে (সূর্যের পুত্র হিসেবে?) অনুসরণ করতে থাকেন। ফলে দিবা-রাত্রি হিসেবে সময়ের একটি এককের সৃষ্টি হয় এবং সময়ের পরিমাপ সম্ভব হয়। 
অন্য এক মতে দুঃখিনী যমী এক নিরুচ্ছাস নদীতে পরিণত হন,  যাকে আজ আমরা যমুনা বলে থাকি।
এদিকে প্রিয় বোনের যন্ত্রনা দেখে যম পিতৃ লোক থেকে এসে, যমীকে বলেন যে প্রতিবছর কার্তিক মাসের দ্বীপান্বিতা অমাবস্যার পর দ্বিতীয় দিনে তিনি তাঁর বোনের সঙ্গে দেখা করে যাবেন এবং এই দিনে যে বোন ভাই এর মঙ্গল কামনায় তাকে তিলক করবেন, যম তাঁর দিকে অসময় দৃষ্টি দেবেন না। এই হল আমাদের “ভাই ফোঁটা” এর উৎস।
এদিকে যম তাঁর বোনের গর্ভে সন্তান উৎপাদনে অসম্মত হলেন, ফলে মনুষ্যজাতির বংশবৃদ্ধির কি হবে? সে এক অন্য কাহিনী, এবার সে প্রসঙ্গে আসি।
যম ও যমীর এই কাহিনী দেখে, ব্রহ্মা চিন্তিত হয়ে পরলেন, যে সৃষ্টি  কিভাবে সম্ভব?
এরপর তিনি সপ্ত ঋষির এবং তাঁদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেন, তাঁরা হলেন গৌতম, ভরদ্বাজ, বিশ্বামিত্র, জমদগ্নি,  বশিষ্ঠ, কাশ্যপ এবং শান্ডিল্য। এই ঋষিদের সন্তান- সন্ততি থেকেই প্রাথমিক ভাবে গোত্রের শুরু, তা সংখ্যায় ছিল ৪৯। তার সঙ্গে সমাজে সগোত্র বিবাহ নিষিদ্ধ হয়। এই ক্ষেত্রে গোত্র মুলত, পিতৃ শোনিত সম্বন্ধিত, ফলে, সগোত্র নারী এবং পুরুষকে একই পিতা-মাতা উৎপন্ন ভাই-বোনের সম্পর্ক বলে মনে করা হয়। পরবর্তিতে এই সপ্তঋষির সন্তান-সন্ততি এবং তাঁদের শিষ্যদের থেকেও বহু গোত্রের উদ্ভব হয়, বর্তমানে হিন্দুদের এক এক ভাগে এক এক সংখ্যক গোত্র, যেমন রাজপুত ও জাঠদের মধ্যে প্রায় ৩০০০ গোত্র আছে এবং আজও সগোত্র বিবাহ নিষিদ্ধ।
ঋকবেদের কাল আজ থেকে আনুমানিক ৪০০০ বছর আগে। সেই সময়ে পৃথিবীর অন্য প্রান্তেও বিভিন্ন সভ্যতার বিকাশ হয়েছিল। দেখে নেওয়া যাক, সেই সব সমাজে রক্ত-সম্বন্ধিত বিবাহের (Incest) ব্যাপারে কি মত পোষন করা হত।
প্রথমেই আসি মিশরীয় সভ্যতায়, এই সমাজে ভাই বোনের মধ্যে এমন কি মা-ছেলের মধ্যে বিবাহ (বা সম্পর্ক) অনুমোদন পেত। মিশরীয় পুরাণে দেবী-দেবতাদের মধ্যে ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহের বহু কাহিনী পাওয়া যায়। ফলে রাজ পরিবারে তা অনুকরন করা হত বলাই বাহুল্য।রাজা যেখানে দেবতার বংশধর। তাছাড়া, রাজ পরিবারে, রক্তের শুদ্ধতা কঠোর ভাবে রক্ষা করা হত। এর অতি বিখ্যাত নমুনা হল, বিখ্যাত বালক ফ্যারাও টুট-আনখ-আমুন। আধুনিক DNA পরীক্ষা থেকে জানা গেছে, যে টুট-আনখ-আমুন এর বাবা ফ্যারাও আখ-এটন-আটেন এবং মা, বাবার সৎ বোন (তাঁর নাম জানা যায় না), আবার অন্য এক মতে টুট-আনখ-আমুন এর মা হলেন তাঁর ঠাকুরমা, বাবা আখ-এটন-আটেন এর মা, রানী টিয়। টুট-আনখ-আমুন এর স্ত্রী ছিলেন তাঁ নিজের বোন আনখ-সেন-আমুন। সুতরাং বলা যাচ্ছে যে মিশরীয় সভ্যতায় রক্ত-সম্বন্ধিত বিবাহ অনুমোদিত ছিল, হয়ত বা বহুল প্রচারিত ছিল, বিশেষত উচ্চপদস্থ ও উচ্চবর্গীয় মানুষদের মধ্যে। অনেক প্রত্নতত্ববিদ টুট-আনখ-আমুন ও তাঁর বাবার চেহারার (বিশেষতঃ করোটির আকার) বিকৃতি ও বিবিধ অসুস্থতার পেছনে এই রক্ত সম্ভধিত বিবাহ ও তার ফলে Genetic Disorder/ Chromosomal Abarration কে দায়ী করেন। টুট-আনখ-আমুন ছিলেন এক বিকলাঙ্গ কিশোর, তাঁর পা দুটো গোড়ালি থেকে ভেতর দিকে ঘোড়ানো ছিল (Clubbed foot), ফলে খুঁড়িয়ে হাটতেন ও লাঠি ছাড়া চলাফেরা করতে পারতেন না। সঙ্গে মুখের উপরের ঠোট এবং তালু দুইভাগ করা, আর মাথার খুলির অদ্ভুত গঠন। তাঁরা বাবা আখ-এটন-আটেনও ছিলেন অস্বাভাবিক চেহারার মানুষ। ছিল মাথার খুলির অদ্ভুত গঠন ও সঙ্গে Gynaecomastia, অর্থাৎ তাঁর বক্ষ ছিল মহিলা সুলভ।
এবার আসি মেসোপটামিয়াতে, এই সভ্যতার পুরাণেও মিশরের মত দেব-দেবীদের মধ্যে ভাই-বোন, বাবা-মেয়ে, মা-ছেলে, এমন কি ঠাকুরদা –নাতনির মধ্যে বিবাহের বর্ণনা পাওয়া যায়। সুতরাং এই প্রথা মানুষের মধ্যে, বিশেষত রাজ-পরিবারে অনুসরন করা হত বলাই বাহুল্য। এই প্রথা চলে খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত, যখন পারস্য রাজত্ব শুরু হয়।
ব্যাবিলনিয়াতে বিখ্যাত রাজা হামুরাবীর আইন (Hammurabi Code) খ্রীঃ পূঃ ১৭৯২-১৭৫০ এ রচিত। এই আইনে সগোত্র বিবাহ কঠোর ভাবে শাস্তিযোগ্য ছিল। কিন্তু হামুরাবির আগে এ ব্যাপারে সেই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এতটা কঠোর ছিল কি না বোঝা যায় না।
সব মিলিয়ে এটা ধারনা করাই যায় যে, বর্তমান বৈজ্ঞানিক সন্ধানের বহুযুগ আগে ভারতে রক্ত-সম্বন্ধিত বিবাহের কুফল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ছিল এবং তা নিষিদ্ধ ছিল।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours