জয়ন্ত কুমার সাহা, ফিচার রাইটার, কলকাতা:

কিন্তু এই ব্যর্থতার কারণ কী ?
এর কারণ কোথাও 'ইজম' নয়। এর কারণ আমাদের লোভ ও ভোগবাদ। প্রায় প্রতিটি মানুষ এক একজন অপরিমেয় লোভ ও ভোগবাদের আকর। এবং তারা নিজেদের নিজেদের অবস্থান অনুযায়ী চরিত্র ঠিক করে। যে ব্যক্তি শ্রমিক সে সাম্যবাদী কিন্তু সেই মালিক হলে চরম পুঁজিবাদী। উল্টোটিও সত্য। সমাজতন্ত্র নিয়ে লেকচার দেওয়া প্রবন্ধ লেখা ব্যক্তি যৌথ পরিবার ছেড়ে সুখ ও বৈভবের জীবনে বাস করেন। শ্রমিক নেতা সুযোগ পেলেই সুইজারল্যান্ডে মধুচন্দ্রিমায় যান। 
এর কারণ ইজম প্রায়শই ভান। আসলে সকলেই এক অতৃপ্ত আগ্রাসী লোভ কতৃত্ব ও ভোগবাদের বাসনা লালন করে চলেছি। 
নৈতিক চরিত্র ঠিক না হলে সমাজতান্ত্রিক সাম্যবাদ সোনার পাথরবাটি। নৈতিক চরিত্র ঠিক হলে, মানুষ সৎ ও চরিত্রবান হলে যে কোন ব্যবস্থাতেই মানুষ সুস্থ ও সুন্দর ভাবে থাকতে পারে। তাই সে মার্কসবাদ, ফ্যাসিবাদ বা জাতীয়তাবাদ যাই হোক না কেন। তাই ইজম নয় ব্যক্তির ও পরবর্তী ব্যক্তি সংগঠনের নৈতিক চরিত্রই প্রধান। 
ব্যক্তি যদি উচ্চ চিন্তা ও সাধারণ জীবন যাপনে বিশ্বাসী হয়, যদি যথাসম্ভব সৎ ও নির্লোভ হয়, যদি ভোগবাদে আত্মোৎসর্গ না করে তবেই তেঁতুল পাতায় ন’জন নাহলে কচু পাতায় একজন। নৈতিক চরিত্র এমন না হলে সমাজতান্ত্রিক সাম্যবাদ সফল হতেই পারে না। এবং পুঁজিবাদ সেই শূন্যতা দখল করবেই করবে।
এখন কথা হল নৈতিক চরিত্র ঠিক করে গড়ে তোলার উপায় কী ? এবং কারা এটিতে সাহায্য করতে পারে ?
অনেকেই বা অনেককিছুই । তবে মূলত তিনটি সংগঠন। এক - বাবা মা, দুই - বিদ্যালয়, তিন - রাষ্ট্র । 
রাষ্ট্র করবে না কারণ চরিত্রবান নাগরিকের প্রাচুর্য ক্ষমতালোভী রাষ্ট্রশক্তি বা রাজনৈতিক দলের কাছে একেবারেই কাঙ্খিত নয়। 
বিদ্যালয় করবে না কারণ হয় তারা প্রকারন্তরে দলীয়
রাজনীতির বা সরকারেরঅঙ্গীভূত অথবা সেগুলি নিখাদ ব্যবসায়িক ক্ষেত্র।
বাবা মা করবেন না কারণ সময়ের ইদুর দৌড়ে সন্তানকে নৈতিক শিক্ষা দিয়ে সময় নষ্ট করে প্রতিযোগিতার বাজারে পিছিয়ে দেওয়ার মতো আপাত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত তারা নেবেন না।
কাজেই পুঁজিবাদ চলছে চলবে। এবং যত বেশি পুঁজিবাদ চলবে সমাজতান্ত্রিক সাম্যবাদকে নিয়ে তত বেশি ফ্যান্টাসিও চলবে। যাকে বলে ভাবের ঘরে চুরি। 
তবু পৃথিবী জুড়ে আওয়াজ উঠছেই শত প্রতিবন্ধকতার অন্দমহলে, সমাজতান্ত্রিক সাম্যবাদের প্রয়োগ সফল নয় কারণ এর প্রচারকরা এতে বিশ্বাস করেন না। পুঁজিবাদ সফল কারণ এর প্রচারকরা এতে প্রবলভাবে বিশ্বাস করেন। ব্যতিক্রম বিচার্য নয়। নীতি ও তার রূপায়নের প্রতি সৎ ও দায়বদ্ধ না হলে লক্ষ্যপূরণ হয় না। সমাজতান্ত্রিক সাম্যবাদ এক ধরনের সন্ন্যাস। ভিতরে ভিতরে তীব্র ভোগবাদ, লোভ, অসততা ও স্বৈরাচার লালন করে সমাজতান্ত্রিক ভেক ধরলে যা হবার তাই হয়। ভালো মানুষ বা ভালো উপাদান ছাড়া ভালো নীতির রূপায়ন দিবাস্বপ্ন মাত্র। এবং যত দ্রুত আমাদের নৈতিক চরিত্রের অবনমন ঘটছে তত দ্রুত রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি সর্বত্র অবক্ষয় ঘটছে। এর জন্য বিশেষ কোনও নীতি বা দল বা ব্যক্তিকে দায়ী না করে সমস্যার গভীরে না ঢুকলে সমাধান চিরকালই অধরা থাকবে।(ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours