গৌতম দাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, রাজ্য আবগারি দফতর ও লেখক, কলকাতা:

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতাশ জন সদস্য ভারত সরকারের নিমন্ত্রণে কাশ্মীরে এসেছেন। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম এটা বর্তমান সরকারের একটা প্রচেষ্টা, যাতে সাজিয়ে গুছিয়ে কাশ্মীর যে বর্তমানে 'স্থিতিশীল' সেই পরিস্থিতিটাকে এদের মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষের কাছে তুলে ধরা, বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা এই ব্যাপারটা একদম সহজ ভাবে নিচ্ছে না, তাদের বক্তব্য এটা একদম লোক ঠকানো হচ্ছে, প্রতারণা করা হচ্ছে, এই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতাশ জন সদস্য ভারতে শুধু মাত্র বেড়াতে এসেছেন, তাজমহল দেখার মতো কাশ্মীর দেখতে এসেছে! এদিকে এই সফর চলাকালীন কাশ্মীরে গ্রেনেড হামলায় সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, তারপর আবার এক পৈশাচিক হত্যালীলায় জঙ্গিদের হাতে প্রাণ গেল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের  পাঁচ নিরীহ তরতাজা বাঙালী শ্রমিকের, আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্যি এরা সবাই কিন্তু মুসলিম! এরপরে কাশ্মীরে আবার কেউ যাওয়ার সাহস দেখাবে! ক্ষতিটা কিন্তু কাশ্মীরেরেই হলো!  আচ্ছা ওই প্রতিনিধি দল এই ঘটনায় কি ধারণা করবে, গ্রেনেড হামলার মতো এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড কি তাহলে সরকারের সাজানো ঘটনা!
গত তিন মাসে পাকিস্তান সীমান্ত ছাড়া কাশ্মীরের আর কোথাও  জওয়ানদের গুলির আওয়াজ শোনা যায়নি, অথচ চোরাগোপ্তা জঙ্গি হামলা বন্ধ হয় নি, কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েই চলেছে জঙ্গিদের হাতে, এসবই কি সাজানো ঘটনা, এসব কি তাহলে কাশ্মীরের মানুষের ওপরে ভারত সরকারের অত্যাচারের নমুনা! এর পেছনেও কি সেনাবাহিনী বা ভারতের প্রতিরক্ষা দপ্তরের হাত আছে! সেনাবাহিনীকে ছেড়ে কাশ্মীরের অর্থনীতিকে টার্গেট করছে এখন পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিরা, ট্যুরিজম কে ধ্বংসের পর এবার বেছে নিয়েছে তাই আপেল শিল্পকে। সেকুলার বুদ্ধিজীবীর দলকে এই হত্যালীলা নিয়ে কখনও কিন্তু একটা কথাও বলতে শোনা যায় না! কেন কাশ্মীরের অর্থনীতিতে এই মরিয়া জঙ্গি আক্রমণ!   বিতর্ক সরিয়ে একটু পর্যালোচনা করা যাক:-                                                  পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থা তো দীর্ঘ দিন ধরেই চরম শোচনীয়, সাধারণ খেটে খাওয়া পাকিস্তানি  মানুষের অবস্থা তো বর্ণনা করার মতো নয়, তার উপর ভরতকে সামলাতে বা ভারতে নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করতে গিয়ে, সামরিক খাতে প্রচুর পরিমাণে খরচ বাড়িয়ে ফেলে একেবারে হিমসিম খাচ্ছে, বলতে গেলে ল্যাজে গোবরে অবস্থা! আচ্ছা তারপরও দীর্ঘ সময় ধরে ভারতে বিভিন্ন সময়ে  আতংকবাদী হামলা করানোর পয়সা আসছিল কোথা থেকে! আরব দেশ গুলোও তো প্রায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অনেকদিন! জাল নোট আর ড্রাগের ব্যবসাও তো সেরকম ভালো চলছে না শোনা যাচ্ছে, তাহলে এতদিন ধরে কি করে চলেছিল এই জেহাদি উৎপাদন করার কারখানা আর জঙ্গিদের রাজত্ব! এতো ইনভেস্টমেন্ট আসতো কোথা থেকে! এই প্রশ্নটা কি কারুর মাথায় আসছে না, কেন পাকিস্তানের এতো শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন!                          কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য ভারত সরকার যে বিপুল পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করে এসেছে সত্তর বছর ধরে,  সেই টাকাই কাশ্মীরের সাংবিধানিক পদে থাকা পরিবার গুলোর মাধ্যমে ঘুরপথে চলে যেত পাকিস্তানি জঙ্গিদের হাতে! তাই তো আর্টিকেল 370 আর 35 বিলোপের পর সব থেকে বেশী ছটফট করছে পাকিস্তান! কিসের এতো  সমস্যা পাকিস্তানের কাশ্মীর নিয়ে, সত্যি কথা বলতে কি পাকিস্তানের অর্থনীতিতে কাশ্মীরের একটা বিরাট ভূমিকা আছে! হাজার হাজার কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করে ভারত সরকার কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য, অথচ সেই টাকার সিকি ভাগও খরচ করা হতো না কাশ্মীরের দরিদ্র মানুষের জন্য, বিভিন্ন সময়ে কাশ্মীরের প্রশাসনিক পদে থাকা কিছু স্বনামধন্য ব্যাক্তি শুধু নিজেদের সম্পত্তি একশো গুণ বাড়িয়ে নিয়েছে! বিদেশে সম্পত্তি বাড়িয়েছে, নিজেদের পরিবার কে বিদেশে দুধেভাতে রেখে, নিশ্চিন্তে কাশ্মীরে বসে দিনের পর দিন রাজনীতি করে গেছে। কাশ্মীরের গরিব মানুষের প্রাপ্য টাকা লুঠ করে ভারতের সর্বনাশ করতে পৌছে দিয়েছে গদ্দার পাকিস্তানের হাতে! কাশ্মীরেরই কিছু মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন আর ওইসব বিখ্যাত ব্যক্তির মাধ্যমে পৌছে যেতো আমাদেরই কষ্টের করের টাকা জঙ্গিদের হাতে! এতদিন সব জেনে শুনেও চুপচাপ ভারত সরকার জুগিয়ে গেছে টাকা, হিসেব নেয়নি, কাশ্মীরিদের অবস্থা কি রকম আছে! আদৌ উন্নয়ন পৌঁছাচ্ছে কিনা সাধারণ মানুষের কাছে! জানার চেষ্টাও করে নি, আর সেই সুযোগে কাশ্মীরের অনুন্নয়নের গল্প প্রচার করে পাকিস্তানের  জঙ্গি তৈরীর কারখানা রমরমিয়ে ব্যবসা করে গেছে!
মোদী সরকার হয়তো strategically এবং politically সেই রুটটাই  বন্ধ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে! যাতে কাশ্মীরের জন্য বরাদ্দ টাকা শুধুমাত্র কাশ্মীরের উন্নয়নেই  ব্যবহার করা যায়, প্রথমেই কাশ্মীরকে sterilized করে  তারপর বাকি সবকিছু! প্রথমে রাষ্ট্রপতি শাসন, বিপুল সেনা মোতায়েন, এবং সর্বশেষে আর্টিকেল 370 এবং 35A বিলোপ এই প্রক্রিয়ারই হয়তো একটা অংশ মাত্র। কাশ্নীরের নিয়ন্ত্রণ সন্ত্রাসবাদীদের হাত থেকে জোর কেড়ে নেওয়ায়, ভারতের অনেকেরই অস্বস্তি বেড়েছে, বিশেষত জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতিশীল কিছু তথাকথিত সেকুলার নেতা, কয়েকটি ভোট ব্যাংক-পন্থী রাজনৈতিক দল তো আছেই আর সঙ্গে ইমরান খান সহ সেই দুটি বিখ্যাত আবদুল্লা আর মুফতির পরিবার, তাদের কাশ্মীরের গরিব মানুষের জন্য দরদী প্রাণ যেন ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছে! রাজনীতি থাকুক রাজনীতির যায়গায়, কিন্তু আতঙ্কবাদী জঙ্গিদের সমর্থনে যে দেশোদ্রোহীরা ধর্মের নামে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে এখন নিরীহ মানুষকে টার্গেট করছে, ট্রাক ড্রাইভার, দোকানি থেকে শুরু করে অসহায় শ্রমিকদের জেহাদের নাম করে হত্যা করছে, যে জঙ্গিদের ভয়ে ছোট বাচ্চা ছেলে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে, কাশ্মীরের উন্নয়ন বন্ধ করার জন্য আদা জল খেয়ে লেগে আছে, তারাই আবার নির্লজ্জ ভাবে মিথ্যে খবর তৈরী করে প্রচার করছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অপমান করছে......                          "সেনাবাহিনী নারী নির্যাতন করছে, নিরীহ শিশুদের রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, নির্বিচারে মানুষকে হত্যা করছে"... এসব মেনে নেওয়া সম্ভব নয়, কিছু নির্বোধ মানুষকে এইসব কথা হয়তো কিছু দিন বিশ্বাস করানো যাবে, কিন্তু সাবাইকে সারাজীবন আর বোকা বানিয়ে এই সব মিথ্যে গল্প বোঝানো যাবে না বোধহয়!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours