শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

ক্ষমতাধর সম্রাট ছিলেন আওরঙ্গজেব ও বাহাদুর শাহ জাফর ছিলেন সে তুলনায় খুবই দুর্বল শাসক। বাহাদুর শাহ জাফর  দুর্বল শাসক ছিলেন। যদিও তিনি যখন মুসলিম শাসকদের চীরশত্রু হিন্দু জাঠদেরও যুদ্ধে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন।  অথচ তার স্ত্রী জিন্নাত মহল বৃটিশদের চর হিসেবে কাজ করতেন! দুই জনই ছিলেন কট্টর মুসলিম সম্রাট কিন্তু তারা এমন কিছু বলেছেন ও করেছেন আজ তা করা বা বলা প্রায় অসম্ভব।

ঘটনা ১,  
সম্রাট আওরঙ্গজেব তখন সবে সিংহাসনে আরোহন করলেন। তার সকল সহদরকে পরাজিত ও হত্যা করে। পিতা বন্দী, বোন সেচ্ছাবন্দী। এমন সময় সম্রাটের অভিষেক চলছে। আওরঙ্গজেব নিজে আরবী ও ফার্সী ভাষায় সু-পন্ডিত ছিলেন। ছিলেন কোরআনের হাফেজ। আরবি ব্যাকরণেও দক্ষ। তার বাল্যশিক্ষক অভিষেকের দিন দরবারে এসে সম্রাট মহিউদ্দিন আলমগীর আওরঙ্গজেবের নিকট পুরস্কার দাবী করেন। 

আওরঙ্গজেব সবিনয়ে তার বাল্য শিক্ষককে কদমবুচি  করেন। কিন্তু তার এই বাল্যউস্তাদকে পাল্টা প্রশ্ন করেন; " আপনি আপনার বাল্যছাত্র শাহাজাদা আওরঙ্গজেব কেন ইতিহাস ও ভূগোল সম্পর্কে শিক্ষা দেননি? কেন ইউরোপ সম্পর্কে কিছুই শেখাননি? কেন ভবিষ্যত সম্রাটকে ইতিহাস ভূগোল শেখানোর প্রয়োজন অনুভব করেননি!  আমাকে আপনি কেবল মাত্র আরবী ব্যাকরণের জ্ঞান বিতরণ করে আপনার কর্তব্য শেষ করেছেন? আমার জীবনের একটি মূল্যবান অংশকে শুধুমাত্র ধর্মপুস্তক পড়িয়ে শুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত করেছেন? সম্রাটের রাজ্য শাষণ আর রাজা প্রজার কি সম্পর্ক সে বিষয়ে আপনি আমাকে কেন শিক্ষা দেননি? বিশ্বের পাশ্চাত্যবর্গের যুদ্ধ পদ্ধতি সম্পর্কে  কোন কিছু শিক্ষা দেননি। সৌভাগ্যবশত আমি আমার  বন্ধু-বান্ধবদের নিকট  থেকে কিছু শিক্ষা লাভ করতে পেরেছি। আপনার কাছ থেকে যে শিক্ষা পেয়েছি, তা অসম্পূর্ণ। যুগোপযোগী নয়। সুতরাং আপনাকে পুরস্কৃত করতে পারলাম না বলে আমি দুঃখিত।"
আজকের ২০১৯ সালেও এমন কথা উচ্চারন করার হিম্মত কোন শাসকের নেই। 

ঘটনা ২ 
দিল্লী দখল করতে ইংরেজরা পাগল প্রায়।  হিন্দু সম্প্রদায়েরও অনেকেই বাহাদুর শাহ জাফরের পক্ষে যুদ্ধ করছে সমান তালে। খোদ  মোঘল শেষ বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফেরের প্রিয়তমা স্ত্রী জিন্নাত মহল লাল কেল্লায় বসে  ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়েছেন। তবুও ইংরেজরা পারছে না।

 তাই ইংরেজরা তাদের তাবেদার দিয়ে ছড়িয়ে দেয়; মুসলিম বাদশারা তো ঈদে গরু কোরবানী দেয়। কেন তোমরা  তোমাদের মা খাদকে  এমন করে সহায়তা করছো? দিল্লির  বাইরের হিন্দুরা বিষয়টি মেনে নেয় এবং যুদ্ধ থামিয়ে দেয়। এমনকি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধার উপক্রমও হয়। দিল্লীর বাদশাহ গুপ্তচর মারফত এই সব দুঃসংবাদ অবগত হয়ে দ্রুত ফরমান জারি করেন। প্রচার পত্রও বিলি করলেন।
 "এবার আসন্ন ঈদে শহরের কোন মুসলমানই গরু কোরবানী দেবে না। যদি জানতে পারি যে কোন মুসলমান আমার আদেশ অমান্য করে দিল্লীতে গরু কোরবানী দিয়েছে ; তাহলে তোপের মুখে ফেলে তাকে উড়িয়ে দেওয়া  হবে।" 

বাহাদুর শাহ জাফর স্বয়ং ঈদের দিন ঈদের ময়দানে ভেড়া কোরবানী দিলেন। দিল্লী শহরে কোথাও কোন গরু কোরবানি দিতে দেয়া হলো না; হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখার জন্য। এবং ঈদের দিনে হাজার হাজার মুসলিম ঈদের দিনেই জমায়েত হলো হিন্দু সম্প্রদায়ও  তাদের সাথে অংশ নিলো। কিন্তু বাদশার দরবারের বিশ্বস্ত দুজন সঙ্গী ও তার স্ত্রীর ষড়যন্ত্রে এবার দিল্লীর লাল কেল্লা দখল করে নেয় বৃটিশরা। উল্লেখিত দুজন শাসকই ছিলেন কট্টর মুসলিম অথচ তাদের এই দুইটি সিদ্ধান্ত ছিলো প্রচলিত ধারনা বিরোধী।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours