নাজমীন মর্তুজা, লেখক ও গবেষক, অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়া:

যার চলে যায় সেই বোঝে হায় বিচ্ছেদের কি যন্ত্রনা!
অবুঝ শিশুর অবুঝ প্রশ্ন,কী দিয়ে দেব সান্তনা?
যার যায় সেই বোঝে ;মানুষ কি আর বোঝে ,
দু মিনিটের নিরবতার মতো আহা ! উহ ! করেই শেষ।
কিন্তু কষ্টের জগদ্দল পাথর তো বাবা মা বয়ে বেডা়য় জীবন ভর । গত দুদিন মনটা সত্যি খুব বিষাদে ভরে আছে । আমি আমার জীবনে একটা জিনিস খুব উপলব্ধী করি , যখন দিন ভালো যায় না চারদিক দিয়ে যেন সংকট আঁকড়ে ধরে , কোথাও কেটে গেলে যেমন কারণে অকারণে সেই কাটা জায়গাটাতেই আঘাত লাগে , ঠিক তেমন , মন খারাপ থাকলে .. আরও অনেক গুলো কারণ যোগ হয় আরও বেশী মন খারাপ হতে। 
আবরারের জন্য খুব কেঁদেছি , মনে হচ্ছে আমার অপরিচিত কেউ নয় , আমার খুব কাছের কেউ , নিস্পাপ একটা মুখ ! আর ওর বাবার কান্না মুখ আমাকে ঘুমোতে দিচ্ছে না । 
আমার বেবীদের স্কুল বন্ধ , তাই রোজ ওদের বায়নার লিষ্ট ধরিয়ে দেয় , আজ এটা তো কাল ওটা , যতদূর পারা যায় , নিজের কাজ গুটিয়ে লেগে যাই ওদের নিয়ে । গতকাল রাতে যখন আবরারের ভিডিও ফুটেজ দেখছিলাম , আমার বড় মেয়ের কত কত প্রশ্ন , মা ও তো গুড স্টুডেন্ট ছিল , কেন বুলি করছিলো ওর সিনিয়র রা, বুলি খুব খারাপ মা , ও কেন টিচার কে বলে নি , আমি তো বলতে পারছি না , যে টিচার কিছু করে না মা ! আবার বলছে একটা স্টুডেন্ট কে ২৫ পিপলস পেটালো কিন্তু ঐ বিল্ডিং এ তো অনেক স্টুডেন্ট ছিল মা , সবই মিলে ওকে রেসকিউ করলো না কেন ? পুলিশে ইনফর্ম করলো না কেন? 
তবে কি সব স্টুডেন্ট পচা । হেল্প করে না বাংলাদেশে? 
আমি বল্লাম ভয়ে মা ... পরে ওদের কে টর্চার করবে। 
এজন্য। আবার রায়া বল্লো নট ফেয়ার মা , সব স্টুডেন্ট রা এখন যেমন মিছিল করছে তখন মিছিল করলে ও বাঁচতো, ভেরি ফানি মা ! যে ইউনিতে এতো প্রব্লেম তবুও পেরেন্টস রা কেন ওদের গুড বেবীদের ওখানে পড়তে পাঠায় । তুমি ভালো করছো এখানে এসে , এখানে বুলি করলে টিচার কে বল্লে ওদের পানিশমেন্ট হয় । 
আর মা ঠিক আছে স্টুডেন্ট  রা বলতে পারে না যখন ভয় পায় , তখন কেন  সিসি ক্যামরার মত সেন্সর লাগায় না , কেউ জোড়ে চিৎকার করলেই পুলিশ চলে আসবে ... ভেরি ইজিলি রেসকিউ করতে পারবে , আর যারা মারে তাদেরকেও ধরতে পারবে । বাংলাদেশের পি এম এতো বোকা কেন মা ? এমন একটা ইউনি তে কেন পড়তে হবে , যেটা সিকিউড ওটাতে পড়তে পারতো ও। 
বাবা মা কে বেশী বেশী কেয়ার করতে হবে মা , এমন পচা ইউনিতে পড়লে। 
এতো প্রশ্নের উত্তর দেবার মতো ক্ষমতা নেই আমার রায়ার ছোট্ট মনটাকে আশ্বস্ত করবার মতো। 
শুধু বার বার বলছে নাইন ওয়ান ওয়ান  কেন কল করলো না । বুঝি না , মা আমি বড় হয়ে অষ্ট্রেলিয়ার পি এম কে বলবো আমাদের বাংলাদেশের ইউনিতে বুলি করে , তোমরা তোমাদের পুলিশ দেবে ওদের কে টেক কেয়ার করতে , বিকজ ওরা ভেরী গুড স্টুডেন্ট । ওদের তো লটস অব মানি নাই তাই , অষ্ট্রেলিয়া আসতে পারে না। 
তোমাদের তো অনেক ভালো পুলিশ আছে। দিয়ে দাও বাংলাদেশে। 
দেখো মা আমি চিঠি লিখলে ঠিক দেবে । একটু বড় হই । তারপর লিখবো ভাবছি। 
সারা দিন শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন । ওদের নিয়ে মন খারাপ থাকলে এখানকার একটা সপিং এন্ড এন্টাটেইনমেন্ট সেন্টারে নিয়ে যাই , ওরা বেশ মজা করে ,  বিভীন্ন খাবার ট্রাই করে । আমারও ভালো লাগে। 
সপিং শেষে রায়া বায়না ধরলো মা দুটো ফ্লাওয়ার বুকে কিনে দাও আর ক্যান্ডোল , বল্লাম কেন কোন ইভেন্ট যে এসব কিনতে হবে ? অযথা টাকা নষ্ট! 
রায়া বল্লো দাও না মা , একটা কিনে দাও , আমি আবরার ভাইয়ার রুমের জন্য পাঠাবো .. মামুন চাচ্চু না হলে মেজো ফুপি গিয়ে দিয়ে আসবে । 
আমার চোখ ভিজে গেল , বল্লাম এগুলো পাঠাতে হবে না , ওখান থেকে তোমার হয়ে বলবো মামুন চাচ্চুকে দিয়ে আসবে। 
এখন চলো .... !
ফিরে আসলাম ঠিক কিন্তু বিষাদ আমার পিছু ছাড়লো না । 
শুধু এই টুকু চাইবো , সুবিচার যেন হয়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন (বিচারে) তোমরা কথা বলো, তখন ন্যায্য বলবে; যদিও (বিচারাধীন ব্যক্তি) নিকট-আত্মীয় হয়।’ (সূরা আল-আনআম, আয়াত: ১৫২)
ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো অপরাধীর প্রতি মায়া-মমতা এবং সহানুভূতি যেন আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সুবিচার করতে বাধা প্রদান না করে।
পরিশেষে এই গানটার কথাগুলোই আজ মনে হচ্ছে বারবার কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে সিক্ত?
কত প্রদীপ শিখা জ্বালালে জীবন আলোয় দীপ্ত?
কত ব্যাথা বুকে চাপালে তাকে বলি আমি ধৈর্য?
নির্মমতা কত দূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ?
আমি চিৎকার করে কাদিতে চাহিয়া, করিতে পারি নি চিৎকার!
বুকের ব্যাথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।
কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে সিক্ত?
কত প্রদীপ শিখা জ্বালালে জীবন আলোয় দীপ্ত?
কত ব্যাথা বুকে চাপালে তাকে বলি আমি ধৈর্য?
নির্মমতা কত দূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ?
আজো কানে ভাসে সেই কথাগুলো কে জানে হবে যে শেষ কথা,
নিয়তির ডাকে দিলে যে সাড়া ফেলে গেলে শুধু নীরবতা।
যার চলে যায় সেই বোঝে হায় বিচ্ছেদের কি যন্ত্রনা!
যার চলে যায় সেই বোঝে হায় বিচ্ছেদের কি যন্ত্রনা!
অবুঝ শিশুর অবুঝ প্রশ্ন,কী দিয়ে দেব সান্তনা?
আমি চিৎকার করে কাদিতে চাহিয়া, করিতে
পারি নি চিৎকার! 
বুকের ব্যাথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours