জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

দেখতে দেখতে আজ আরও একটি গান্ধী জয়ন্তীর মুহুর্তে আমরা দাঁড়িয়ে...

আজ দু'রা অক্টোবর।
মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন।
তাকে লক্ষ কোটি প্রনাম।

রাজনীতিতে তখন সবে এসেছি। অনেক সময় মাথায় এসেছে, কেন আধুনিক ভারতের অভিমুখ হিসেবে রবীন্দ্রনাথ কিংবা পরে জওহরলাল নেহেরুকে জাতির জনক হিসেবে না মেনে, মহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে
জাতির জনক হিসেবে মানা হবে।  
ক্রমে যখন বুঝলাম একটা জাতির যখন নির্মান হয় কিংবা এমন কী যখন নতুন করে জাগরন ঘটে, তখন বহু উপাদানের প্রয়োজনেই, বিভিন্ন সত্বা আসেন। একপ্রান্তে জাতি নির্মান, অন্যপ্রান্তে জাতির আধুনিকরনের দু'টি প্রকৃয়া পাশাপাশি চলতে থাকে। 

নিজে যখন সর্বাধুনিক শ্রমিক শ্রেনীর প্রথম পজন্মের সাথে কাজ করেছি, তখন যেমনভাবে স্পষ্ট হয়েছে, এখনো কিভাবে স্যুট-প্যান্ট-টাই লাগানো মানুষজনের মধ্যেও, ভুর-ভুরে দাসত্বের দু'র্গন্ধ ফিনকি দিয়ে বেরুচ্ছে, তখান ক্রমে স্পষ্ট হয়েছে, 
-----  একটা সমাজ নিজেই যেখানে হাজার হাজার বছর ধরে, একেবারে গ্রাম স্তর থেকেই ঘৃণার পারস্পরিকতার ভিত্তিতে বিভক্ত, এখনো বিদ্যালয়ে যাই পড়াশুনা করুন না কেন --- মনে মনে যেন 'সূর্য্য-পৃথিবীর' সম্পর্কটাকেই এখনো উল্টো করে দেখে সামাজিক ক্রিয়াচারের সাথে নিজেকে যুক্ত করছে,  নিজের লাভ ক্ষতির হিসেব নিয়েই বিশ্ববোধের বিচার করতে চাইছে নিজের অজান্তেই 
-----  সেখানে স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে দেওয়ার প্রশ্নে, যখন আধুনিকতার থেকেও গ্রামভিত্তিক পারস্পরিক হিংস্রতা থেকে মুক্তিটাই প্রধান তখন সেই ভিত্তিতেই ঠিক হয়ে যায়
----- কোন জাতি নির্মানে কাকে প্রথম স্থান দেবেন।

সেই সুত্রে সমাজ বিজ্ঞানীদের দায় হোল, ব্যক্তির মধ্যে ইতিবাচক দিকগুলিকে চিহ্নিত করে, সেগুলিকে আধুনিকতার শ্রোতে এগিয়ে দেওয়া এবং নেতিবাচকতাগুলিকি বিচ্ছিন্ন করে একেবারে কেরোসিনের আগুনে পুড়িয়ে মেরে, আধুনিকতার  সিংহ দ্বারকে উন্মুক্ত করা।
---- আজ  OFFNEWs   এ দেওয়া লেখায়, সাম্যবাদী আন্দোলনেও, এই যে একটা রীতি হয়ে গেছে  - ইতিহাসের কোন কালে কেউ যদি কোন ভূল করেন, তখন তার জীবনশ্রোতের ইতিবাচক দিকগুলিকে খুজে বেড় করে  সাম্যের প্রবাহে না নিয়ে আসা - এই রীতিই ভারতীয় সাম্যবাদী আন্দোলনে ভাবজগতের মালা গাথার কাজটি বিলম্বিত করছে।

পরিনামে আজ ফ্যাসিস্তরা মহাত্মার নেতিব্যাক দিকগুলির, যেগুলির অধিকাংশ  নেহেরু ভাবনা তো বটেই রবীন্দ্রভাবনার বিপরীত মেরুতে
অবস্থান করে। 
----- যদি খুটিয়ে বিবেচনা করা যায়, দেখা যাবে, বিজেপি এর 'রাম মন্দির' কিংবা 'হিন্দুত্বের' জন্মদাতা 'মহাত্মার' রাম রাজ্য ভাবনা। আধুনিকতার বিরুদ্ধে এক ধরনের কৎসিৎ দুর্গন্ধ। 
------আবার যদি দ্বান্দ্বিক নিয়মে দেখা যায়, দেখা যাবে - গুজরাট দাসত্ব সংস্কৃতি পৃষ্টভূমিতে, ভারতে ঔপনিবেশিকতা এবং সামন্তিক ব্যবস্থার জঠরে যে শিল্পপুজির বিকাশ শুরু হয়েছিলো - তার আশ্রয়ে থেকে কোন ব্যক্তির পক্ষেই বিশ্ব আধুনিকতা কিংবা রেনেশাঁর সাথে যুক্ত হওয়া সম্ভব ছিলো না। 
-----  আরো স্মরনে রাখতে হবে, রবীন্দ্রনাথ যদি  তার বিশ্ববোধকে ভারতীয় সমাজের দীর্ঘ অতীতের দর্শনের ইতিবাচক দিকগুলির সাথে ইউরোপের অতি উন্নতা সামাজিক বিপ্লবের সাথে সংশ্লেষন করে পেয়ে থাকেন, তবে জওহরলাল নেহেরু, রবীন্দ্রনাথকে পেয়েছেন একপ্রান্তে, অন্যপ্রান্তে সারা ইউরোপের মানুষ এবং অক্টোবর বিপ্লবকে পেয়েছিলেন পজ্জলিত মশাল হিসেব। 
----- মহাত্মা পেলেন কেবল 'দক্ষিন আফ্রিকা'। 

এর মধ্যেই বুঝে নিতে হবে, সমাজ বিজ্ঞানীদের যেহেতু 'ভগবান তত্বে বিশ্বাস রাখার কোন উপায় নেই, তাদেরকেই প্রতিটি ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বকে  চিরে-চিরে দেখতে পারতো। তখন এই সিদ্ধান্তেই আসতে হোত - মহাত্মা নিশ্চিত ভাবে, বর্ণসমুহের পারস্পরিক আত্মমর্য্যাদার তত্বকে তিনি
'বর্ণাশ্রম' নিশ্চিহ্ন করার প্রশ্নের সাথে যুক্ত না করার কারনে,
-------   শেষ পর্য্যন্ত যদি  কোনকিচুই কার্য্যকরি না হয়ে থাকে, তার কারন স্বাধীনতা উত্তরকালে, মহাত্মা যা দিয়ে গেলেন তাকে এগিয়ে দিয়ে, বর্ণাশ্রম প্রথার বিনশের দিকে নিয়ে যাওয়াই গেলো না ব্রাহ্মন্যবাদের দাপটে। বরং হিন্দুত্ব প্রচারের চালচিত্রের ছায়ায় ব্রাহ্মন্যবাদী দাবী হিসেবে, সেই পুরো রিজার্ভেসন পদ্ধতিটাই নাকচ করার দাবীকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। এখানে সাম্যবাদী আন্দোলনে ব্রাহ্মন্যবাদী প্রভাব কম ক্ষতির কারন হয় নাই।
শেষে একটা না জানা কাহিনী বলেই লেখাটা শেষ করছি। ইতিহাসের অতিগুরুত্বপূন বিষয়টি সাম্প্রতিক কালে, যাদবপুর ইউনিভারসিটির, এমিরাইট বিষয়ের এক অধ্যাপকের লেখায়। লেখাটি দ্যা টেলিগ্রাফে প্রকাশ পেয়েছে। 
---- সিমীত বর্ণাশ্রম বিরোধীতার মহাত্মার লাইন এর কারনে ভারতের কোন প্রদেশ , এমন কি গুজরাট পর্য্যন্ত তাকে আশ্রয় দিতে অস্বিকার করেছেন। আন্দাজ করুন - কে তখন আশ্রয় দিতে পারতেন।  ট্র্যাজেডি হোল এখানে যার কাছে আশ্রয় পেলেন এবং যে বিশ্ববোধের কারনে এই আশ্রয় আসতে পারে?
-----  ট্র্যাজেডি এখনে, যে মুহুর্তে গান্ধীজী, মহাত্মা হলেন সেই সময় থেকেই, মহাত্মার 'রামরাজ্য' তাকে এবং তার বিশ্ববিদ্যালয়ের গলা টিপে ধরেছিলেন।  কাজেই, বুঝে চলতে হবে, ইতিহাসে ব্যক্তি কথা বলে না, ইতিহাসই ইতিহাসের কথা বলে। 
রহস্যটা তা হলে খুলে দি! তখন মহাত্মাকে তিনিই আশ্রয় দিতে পারতেন, যাকে 'চন্ডালিকা'  লেখার পর, অন্য এক বিখ্যাত বাংগালী সংগিতজ্ঞ, বিলেতে গিয়ে রোঁমা রোলাকে বলে এসেছিলেন
-----  চন্ডালিকার পর ' বাঙ্গলা'  সমাজ কী আর বেঁচে থাকবে । 
সেই মানুষটি রবীন্দ্রনাথ ব্যতিরেখে অন্য কেউ নয়।

তাই আজও আমাদের জীবনের সমাজের দেশের যাবতীয় পদেক্ষেপে করমচাঁদ ও রবিঠাকুরের মাগদর্শন একান্ত প্রাসঙ্গিক।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours