স্বপন দাস, প্রবীণ সাংবাদিক, কলকাতা:
   
গত ৩৮ বছরের যে ধারা চালু ছিল, সেই ধারা এবছরও একটু বাড়াবাড়ি পর্যায়ে রয়েছে বাঙ্গালীর একমাত্র উৎসব শারদোৎসবকে ঘিরে। আশির দশকের শুরুতে তৎকালীন বামদলগুলি এই দেবীর আরাধনাকে মন থেকে না মানলেও , এই দেবী আরাধনার প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে নেমেছিল নিজের দলের প্রচার ও মতবাদের প্রচারে। নানা মার্ক্সিয় পুস্তিকা তাঁরা এই সময়ের জন্য প্রকাশ করত। আর সেই সব পুস্তিকা মা দুর্গা, তুমি কেমন যেন হাওয়াপন্থী হয়ে গেলে! কাছে বিক্রি বা বিনামুল্যে দিতেন। সেই সময়ের নেতারা মনে করতেন , এই উৎসবকে ঘিরে আপামর বাঙ্গালীর মনের উন্মাদনা ও সপরিবারে বাইরে বেরিয়ে আসাটাকে কাজে লাগিয়ে জনসংযোগের কাজটাকে সেরে নেবেন। বেশ কিছু নেতা এটাকে মেনে নিতে পারেননি। তবুও মার্ক্সবাদি দলগুলি এই ভাবেই দুর্গাপুজোকে প্রচারের হাতিয়ার করে তুলেছিল।দেশের মধ্যে এই ধারার প্রবর্তক অবশ্যই মার্ক্সিয় মতকে আঁকড়ে থাকা দলগুলি। পরবর্তী কালে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি এই পথে জনসংযোগে নেমে পড়ে। নব্বই দশকের শেষভাগে যখন বাংলার এই উৎসব ধীরে ধীরে কর্পোরেট চেহারা নিতে শুরু করেছে, আর সেই সুত্র ধরে থিম পুজোর আসাটাকে মানুষ অন্যভাবে দেখতে শুরু করল। সাবেকি থেকে পুজোর আঙ্গিকের আমুল পরিবর্তন হতে থাকল। একসময়ে কুমারটুলী সার্বজনীনকে ঘিরে নেতাজী একেবারে নেপথ্যে যে রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করে , স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন দেবী দুর্গার আরাধনাকে। সে ভাবেই রাজ্যের নানা রাজনৈতিক দল নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে শহর কলকাতার নামকরা দুর্গাপুজোগুলিকে দখল করতে শুরু করল। এখানে অবশ্য বামেরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়ল। ডানেদের দখলে চলে গেল দুর্গা পুজো বহু কংগ্রেসি নেতারা যুক্ত হয়ে পড়লেন শহর কলকাতার পুজোতে। তাঁদের নামেতে পুজোর চল শুরু হয়ে গেল। একদিকে কর্পোরেট দুনিয়ার হাত , অন্যদিকে বামেদের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করার কাজে রাজনৈতিক নেতাদের হাতে পড়ে দুর্গা পুজোর চেহারাটাই পালটে গেল।
তবে যতটা না বাম আমলে পাল্টেছিল,তার প্রায় ৩০০ গুণ পালটে গেল ৩৪ বছরের বাম জমানার অবসানের পর। তৃণমূল ক্ষমতায় এসেই ক্লাবের সঙ্গে পুজো কমিটিগুলি দখল করার খেলায় নেমে পড়ল। একসময়ে দেখা গেল , মন্ত্রী থেকে সান্ত্রী , সবাই গলি থেকে রাজপথের পুজোর সভাপতি। নয়ত প্রধান পৃষ্ঠপোষক। নাম মাহাত্ম্যে পুজোর তোলাবাজির বাজার রমরমিয়ে বেড়ে উঠেছে গত আট বছরে। পুজোর ক্লাবগত, কমিটিগত হাজারো টাকার অনুদান, আর কার্নিভালে এখন প্রত্যেকটি পুজোই একটি করে শাসক দলের রাজনৈতিক প্রচার ক্ষেত্র। তবে এবছর সে গুড়ে কিচকিচে বালি হয়ে দেখা দিয়েছে, বিজেপি নামক ,প্রধান বিরোধীদল। ফাঁকা মাঠে গোল দেবার রাস্তাটাও একেবারে নিস্কন্টক রাখতে চায় না এই দল। এদিকে শাসক দল সিঁদুরে মেঘ দেখে , উত্তর থেকে দক্ষিণের নামী পুজোগুলির উদ্বোধন মহালয়ার আগেই সেরে ফেললেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ফলে এবছর পুজোর ক্যালেন্ডারে আরো দুটো দিন বেড়ে গেল এবছর থেকেই। অন্যদিকে কম যায় না বিজেপি। তারাও লড়াইয়ের ময়দানে। স্বরাস্ট্র মন্ত্রী থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এনে , দেবী দুর্গার আরাধণার বাজারকে আরো গরম করে দিলেন। দেখা যাক আগামী কটা দিন কেমন কাটে মাতৃ আরাধনার।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours