জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

এটা ভালো খবর। সাম্যবাদীদের ডাকা সভাগুলিতে মানুষ আসতে শুরু করেছে। কিন্তু যেখানে সতর্কতার কারন, লক্ষন ভালো হলেও - হলেও তাতে আশার আলো দেখতে শুরু করাটা বিপদের কারন হতে পারে। ইতিহাসের প্রতিটি বাকে, তা চরম বিপদের দিকে হোক, কিংবা উত্তোরনের কালে অথবা উভয়ের সংমে, যাকে আমরা চৌ-মাথা বলি, ইতিহাস সব সময় মায়াজাল বিস্তার করে চলে।
----- সেই মায়াজাল, সেই সংগঠনই  ভেদ করে ইতিহাসের গতিমুখ পরিস্কার করতে পারেন, যে সংগঠনের আভ্যন্তরীন গনতন্ত্রের ডাইনামিজম সামাজিক গতির অভিমুখী। এই সুত্র ধরেই বুঝে নিতে হবে, জাতিয় সংকটে কিংবা ইতিহাসের বাকে, সাম্প্রতিক কালে উদারবাদী দলগুলির সমর্থক গোষ্টি যদি, নিজের দল ভেঙ্গে ফ্যাসিস্তদের দিকে ঢল নামায় তার প্রধান কারন, সে সব দল আভ্যন্তরীন গনতন্তের বিধানই নেই।ওরা নাকি একটা আন্দোলন। জনশ্রোত যে দিকে যাবে, তিনিই নাকি নেতা। 
----- এরা বুঝতেই চায় না, যে জনশ্রোত আপনাআপনি ইতিবাচক পথ নেয় না। উদারবাদীরা যদি শক্ত সাংগঠনিক কাঠামো এবং ভাবাদর্শগত দিক দিয়ে, নিজের আভ্যন্তরীন স্তিতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, তবে
----- সংকটকালে ফ্যাসিস্তরাই ওদের হাতে কল্কে খেয়ে যাবে।এমনি এক উৎক্রমন কালে, মেরুকরন শুরু হয়ে যায়, একপ্রান্তে সাম্য য মুখীন গনতন্ত্রের দিকে, এবং অন্য প্রান্তে ফ্যাসিবাদের দিকে। 
এমন একটা সময়ে, সাধারনভাবেই, একটু সুযোগ পেলেই সমাজবিজ্ঞানের প্রতি কিঞ্চিৎ ঝোক রয়েছে, এমন সব মানুষের মধ্যে রাজনৈ্তিক সমাবেশে যোগ দেওয়ার একটা প্রবনতা দেখা দেয়। ফ্যাসিবাদীদের সভায় লোকটানে ধর্মীয় ফুৎকার এবং বর্তমান ভারতীয় সময়কালে, টাকায় আসে এবং ভয়ে আসে।
----- সে কারনেই বামদের সভাগুলিতে বেশী মানুষ আসা উৎসাহ ব্যঞ্জক। তবে সমাবেশের চরিত্র,  তার সাথে সে সভায় যে মঞ্চ নির্মিত হবে এবং সেই মঞ্চের দিকে, মানুষের অবস্থানকে দৃঢ় করা এবং এক ধারাবাহিকতা থাকবে কী নয়, তা নির্ভর করবে  বামপন্থী দলগুলির, ভেতরকার ডাইনামিজমে কত পরিমান, সাম্যবাদী উপাদান নির্মিত হচ্ছে তার উপরে।
----- এই প্রসংগেই  ১৯৭২ এবং ১৯৭৭ সালের নির্বাচন পূর্ব জনসভাগুলির চরত্রের দিকে যদি নজর রাখা যায়, দেখা যাবে উভয় সময়েই, বিপুলভাবে লোক জমায়েত হয়েছে। প্রথম ক্ষেত্রে , ব্যক্তিগত খুনোখনীতে স্বরযন্ত্র এতো গভীর ছিলো যে সরকারী প্ররোচনাতেই (সিদ্ধার্থ রায় সরকার) সর্বজন শ্রদ্দেয় নেতা হেমন্ত মুখার্জীকে হত্যা করা হোল। এতদসত্বেও জনসমাবেশগুলিতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বাধা বা প্রতিরোধ ছিলো না। লাগাতার হত্যাকান্ড, জেলে, ছাটাই ইত্যাদিতে চিত্ত শৃংখলিত থাকলেও সমাবেশগুলি, ১৯৭৭ এর পরিপ্রেক্ষিতে উন্মুক্ত মনের পরিস্থিতির তুলনায় জনসমাগম হয়েছে বেশী।
----- ১৯৭২   এর নির্বাচনের দু'দিন আগে দুর্গাপুর কমরেড জ্যোতি বসুর সভা হোল, লাল ময়দানে, সকাল ১০টায়। আদপেই লোক হবে কী না, সন্দেহ ছিলো। কিন্তু লোক এলো আশাতীত।সন্ত্রাস ছিলো, তবু আমার ধারনা সেই নির্বাচনে আমরা হেরেই গিয়েছিলাম দুর্গাপুরে। 
----- সে সব বিচারে, সারদা আর নারদার ঠেলায়, শ্রীমতি মমতা যখন  জেরবার,  ফ্যাসিস্তদের সাথে তলে তলে একটা ব্যবস্থা রেখেও, উভয়ে উভয়ের বিরুদ্ধে যেভাবগে গদা-ঘুরিয়ে চলেছে এবং রাজনীতিকে কিছুতেই গনতন্ত্রের সাম্যবাদী অভিমুখের দিকে ঝুকতে দেওয়া আটকানো হচ্ছে, সর্বশক্তি দিয়ে তখন 
------ দলের অভ্যন্তরের রাজনৈতিক বিতর্কে ভাবাদর্শগত অবস্থানের সাথে, প্রকাশ্য অবস্থানের সাথে কতটুকু সেতুবন্ধন করতে পারছে, তার উপরেই ভবিষ্যত নির্ভর করবে।
এই সুত্রেই আভ্যন্তরীন ভাবাদর্শ দুর্বল থাকলে, অন্যসব প্রভাব, মানুষকে মরিচিকা্র জালে,  যাকে ইংরাজীতে ই্যলিউসারী বলা হয়, সেখানে জনমত জড়িয়ে যাবেই। আর যে মানুষ আসছেন, তাদের সিংহভাগ আসছেন, তৃনমুলি সন্ত্রাস সিথিল হয়ে যাওয়ার পর, আমাদের সমর্থকগোষ্ঠি, জনসভায় চলে আসছেন। এরা সাধারনতঃ অঞ্চলের সব সভায় আসেন। তবে, গুরুত্বপূর্ণ বাকিদের মধ্যে উপস্থিতি এতোকাল একেবারে প্রান্তিক ছিলো, সেটা ভাংছে বলেই মনে হয়। 
সাম্য বা শ্রমিক নেতৃত্বের দিক থেকে সব থেকে বড় বিপদ যে বিন্দুতে দাড়িয়ে, সেটা চিহ্নিত করা এবং প্রয়োজনীয় প্রতিশেধকটি চিহ্নিত করাই
আজকের দিনে সাম্যবাদী অভিমুখের সামনে বড় সমস্যা। ভাবাদর্শ এবং সংগঠনের দিক থেকে, দুর্বল কেন্দ্রিকতায় দলের গনতন্ত্র অসীম হলেও, সেই  গনতন্ত্র যুক্তিবাদী বা ভাবাদর্শগত ভাবে কোন রাজনৈ্তিক অভিমুখ নিতে পারছে না।
------  কে কী বলবেন, সেটা আগে থেকে বুঝতে না পারলেও, আপনি নিশ্চিত বলে দিতে পারবেন, কী ধরনের কথা উঠবে এবং জবাবগুলিও যেভাবে অনাদি অনন্ত কাল ধরে একই অভিমুখে চলবে, সেটাও নিশ্চিত বলা যাবে আগে থেকে।এটাই একটা সাম্যবাদী দল, যাকে বিপ্লবী গনপার্টী হিসেবে গড়ে তোলার কথা তার,'বিপ্লবী' শব্দটা বাতিল হয়ে যাওয়ার পরিনাম। এই পরিস্থিতি চলছে সেই সেদিন থকে
(ক) যেদিন সোভিয়েত ভেংগে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে, বাংলার সরকারকে টিকিয়ে রাখাটাই, সাম্যবাদী দলের অভিমুখ হয়ে দাড়াতে চাইলো এবং দলের কর্মসূচী্তে  'বহূজাতিক' এবং 'একচেটেদের  বিপদকে 'খাটো করে দেখতে শুরু করলাম। এইভাবে শ্রমিকদের হাত থেকে 'আন্তর্জাতীকতাকে' কার্য্যতঃ ছেটে দেওয়ার ব্যবস্থা করলামঃ অংশত সচেতন এবং অংশত অবচেতনভাবে।
(খ) যিনি ভারতের সাম্যবাদী আন্দোলনের একমাত্র  'আলোবর্তিকা' হিসেবে আন্তর্জাতীক পরিচিতি পেয়েছিলেন, এবং সাম্যবাদী অভিমুখ ধরে বিশ্ব স্টেটস ম্যানসিপের পরিচিতি পেয়েছিলেন, তাকে বিশ্বের সব থেকে হিংস্র মিলিটারীতন্ত্রের দেশে বাংলার জন্য পুজি যোগারে পাঠিয়ে দিলামঃ অথচ জাত গেলেও পেট ভরলো না।
(গ) সোভিয়েত ভেংগে যাওয়ার পর মার্ক্সসবাদী-লেনিনবাদী ধারাটিকে ভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতে বিকশিত না করে, কার্য্যতঃ সংগঠন এবং রাজনীতির অভিমুখ থেকে ভাবাদর্শটাকেইও উড়িয়ে দিতে, কার্য্যতঃ পেরোস্ত্রোয়ীকা মেনে নিলাম। উল্লেখ যোগ্য, সারা বিশ্বে স্তালিনের নব জাগরন শুরু হলেও, ভারতে সাম্যবাদী দলগুলিতে, তাকে নিয়ে উৎসাহ তলানীতে। 
এইভাবে আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে অসীম গনতন্ত্র থাকলেও সেই গনতন্ত্রকে পুজিবাদী সীমা অতিক্রম করে যাওয়ার সব ব্যবস্থা তুলে নেওয়ায়, ফ্যাসিস্ত মোকাবিলায় ভাবাদর্শগত অবস্থান ক্রমাগত দুর্বল হয়েছে। 
----- অথচ ফ্যাসিস্ত ভাবাদর্শ, ভারতের আকাশে ছড়য়ে থাকা ধুলো মাটির মতো উরন্ত রয়েছে, দেশের অতি-অতীত পুজ-রক্তে এবং সেই ধূলোতে যুক্ত হয়েছে, আমেরিকান চোরাই টাকা এবং ওদের সংস্কৃতির সব থেকে উচ্চিষ্ট  এবং বিষাক্ত ভাবশ্রোত। (ক্রমশ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours