গৌতম দাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, রাজ্য আবগারি দফতর ও লেখক, কলকাতা:

কাশ্মীরের ভূমিপুত্র কারা! কাশ্মীরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে কাদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনা উচিত! কাশ্মীরে বসবাসকারী সংখ্যাগুরু মুসলিমদের নাকি একদা বিতাড়িত কাশ্মীরি পন্ডিতদের কথা শোনা উচিত! কিম্বা ওমর আবদুল্লা বা মেহবুবা মুফতিদের মত বংশ পরম্পরায় কাশ্মীরের উন্নয়নের কাণ্ডারী বা বলা ভালো অতি কাশ্মীর দরদী জন নেতাদের ইচ্ছের উপরেই কি কাশ্মীরের ভবিষ্যত নির্ভর করবে নাকি সেই মহারাজা হরি সিং কেন কি কারণে, কোন যুক্তিতে, কি চুক্তিতে ভারতে কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তি হয়েছিল এসবের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তৈরি বসবো আমারা নতুন করে!                        সাম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন বহু মানুষ, বলছে:- "জোর যার মুলুক তার বা সংখ্যা গরিষ্ঠতাই কি সব ঠিক করে দেবে কিম্বা গায়ের জোরে আইন পাস ইত্যাদি" নানান গবেষণা মুলক বিবৃতি শুনছি রোজ, তলায় তলায় সাম্প্রদায়িকতার আগুন জ্বালানোর চেষ্টাও চলছে!
প্রাচীন কাশ্মীরের ইতিহাস প্রসঙ্গে একটু বিশ্লষণ করলে বোঝা যাবে, এই কাশ্মীর অঞ্চলের আদি বাসিন্দা বা ভূমিপুত্র আসলে কারা ছিল, এই ইতিহাস বহু প্রাচীন, বর্তমানের মধ্য-এশিয়া, দক্ষিণ-এশিয়া এবং পূর্ব-এশিয়ার কিছু অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিল প্রাচীন কাশ্মীর।ঐতিহাসিক ভাবে, কাশ্মীর উপত্যকা বলতে একটি বৃহত্তর অঞ্চলকে বোঝায়, যার মধ্যে ভারত-শাসিত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য (যা জম্মু, কাশ্মীর উপত্যকা এবং লাদাখ নিয়ে গঠিত), আজাদ কাশ্মীর এবং গিলগিট-বালতিস্তানের পাকিস্তান-শাসিত অঞ্চল,  চিন-প্রশাসিত অঞ্চল আকসাই চিন এবং ট্রান্স-কারাকোরাম ট্র্যাক্ট এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল।                                            
প্রথম সহস্রাব্দের প্রথমার্ধে, এই কাশ্মীর অঞ্চল প্রথমে হিন্দু ধর্ম এবং পরে বৌদ্ধধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে, পরে নবম শতাব্দীতে এখানে শৈব-বাদের উত্থান ঘটে এবং তারও পরবর্তীত কালে কিন্তু কাশ্মীরের  ইসলামীকরণ ঘটে।
মোটামুটি তেরোতম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যে কাশ্মীরের ইসলামীকরণ পুরোপুরি সংঘটিত হয়েছিল এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই তখন কাশ্মীরে পুরোপুরি ভাবে শৈব ধর্মের পতন ঘটে। তবে, আগের সভ্যতার নিদর্শন গুলি কিন্তু পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি তার প্রমাণ বিভিন্ন প্রাচীন হিন্দু মন্দির বা ধাম থেকে পাই।                1339 সালে শাহ-মীর, কাশ্মীরের প্রথম শাহ মীর রাজবংশের পত্তন করেছিলেন এবং শাহ-মীর ই কাশ্মীরের প্রথম মুসলিম শাসক, এরপর পরবর্তী পাঁচ শতাব্দীর জন্য বিভিন্ন মুসলিম সম্রাটরা কাশ্মীর শাসন করছেন, এবং ভারতে ইংরেজদের আগমনের পর আস্তে আস্তে মুসলিমরা সারা ভারতবর্ষের মতোই কাশ্মীরেও কোনঠাসা হয়ে পড়ে। মহারাজা রণজিৎ সিংয়ের নেতৃত্বে শিখরা একবার কাশ্মীর অধিকার করেছিল অল্প সময়ের জন্য, কিন্তু 1846 সালে প্রথম অ্যাংলো-শিখ যুদ্ধে শিখদের পরাজয়ের ঘটে এবং অমৃতসর চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশদের কাছ থেকে (7.5 million Nanakshahee Rupees) ওই  অঞ্চল ক্রয় করেন জম্মুর রাজা গোলাব সিংহ এবং কাশ্মীরের নতুন শাসক হন। ইংরেজদের তখন প্রবল দাপট সারা  ভারতবর্ষে। এই জম্মু ও কাশ্মীরে রাজা গোলাব সিংহ ও তাঁর বংশধরদের শাসনকাল 1947 সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।                                                                  তাহলে এই ক্ষুদ্র আলোচনা থেকে যেটুকু উঠে আসছে, আদি কাশ্মীর উপত্যকায় প্রথমে হিন্দু তারপর বৌদ্ধ তারপর আবার শৈব অবশেষে মুসলিম ধর্মের প্রচলন ঘটেছিল, আসলে ভূমিপুত্র বলে কিছু হয় না, ভূমিপুত্র খুজতে গেলে তাম্র বা প্রস্তর যুগে যেতে হবে, সবার আগে আমাদের দেশ ভারতবর্ষ এক জাতি এক প্রাণ।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours