অর্পিতা দে, সাংবাদিক, কলকাতা:
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায় , কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ...
কিন্তু বাস্তবজীবনে কিছু মানুষের কাছে আজ ও সৌন্দর্যের মান নির্ধারন করে চামড়ার রঙ ,কিছু মানুষ সে ধ্যান ধারনার থেকে কিছুটা বেরিয়ে আসতে পারলেও , আজও বেশ কিছু মানুষের চিন্তা ধারা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে|
তবে আজ সময় পেরিয়ে গেলেও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত অর্থাৎ পূর্ব এশিয়া থেকে আমেরিকা সব জায়গাতেই রয়ে গেছে বর্ন বৈষম্য| আমাদের দেশ ভারতবর্ষ , যেখানে জনসংখ্যা ১৩৭ কোটি, ভাষা ২২ টি ,তবুও গোটা জাতি মাত্র দুটি ভাগে বিভক্ত আর সেই বিভাজন একটি কারনে এবং সেটি বর্নবৈষম্য অর্থাৎ ইংরেজিতে যাকে বলা হয় কালারিজম (Colourism)। এর ফলে তুলনা মুলক হালকা চামড়ার মানুষদের মধ্যে গাঢ় চামড়ার মানুষদের ছোট করে দেখা কিংবা কুৎসিত বলে বর্ননা করার প্রবনতা দেখা যায় , যার ফলাফল স্বরূপ গাঢ় চামড়ার মানুষদের মধ্যে হিনমন্যতা কিংবা ফর্সা হওয়ার দুর্নিবার আকর্ষন জন্মায়| ভারতবাসীর মধ্যে এই আকর্ষনকে মাথায় রেখে ১৯৭৫ হিন্দুস্থান আনলিভার বাজারে নিয়ে আসে “ফেয়ার এন্ড লাভলি” এটি একটি ক্রিম যেটি গাঢ় চামড়ার রঙ কে হালকা করতে সহায়তা করে , এর পর বাজারে এসে যায় আরো অগনিত ফেয়ারনেস ক্রিম , যেগুলির বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয় প্রথম সারির নায়িকাদের এবং শুধু মাত্র নারীদের নয় পুরুষদের উদ্দেশ্যে কোনো নায়ক কিংবা ক্রিকেটারকে দিয়ে বলানো হয় আত্মবিশ্বাস তখনই ফিরে পাওয়া যায় যখন চামড়া হয় উজ্জল|
অর্থাৎ এক কথায় যেন বুঝিয়ে দেওয়া কর্ম সাফল্যের কারন নয় শুধু মাত্র চামড়ার রঙ আনতে পারে সফলতা|
সুতারাং বিবিধের মাঝে মিলনে জাতি, সংস্কৃতি ছাড়াও বর্নবৈষম্যও সমাজে ভেদাভেদ সৃষ্টি করেছে |
তবে কিছু সংখ্যক উদারচিন্তা পোষনকারী যারা বিশ্বাস করেন চামড়ার রঙ দিয়ে কখনও সৌন্দর্য বিচার করা যায় না , তারা লড়তে শুরু করে বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে , তাদের লড়াই এর স্লোগান #unfairandlovely অর্থাৎ “অসম এবং সুন্দর” ইন্স্টাগ্রামে এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং অন্যদিকে নন্দিতা দাস যিনি একজন চলচ্চিত্র তারকা তিনি “Dark is Beautiful” অর্থাৎ “ কালো রা সুন্দর” নামে একটি অভিযান চালান ২০১৩ থেকে এবং তিনি বলেন তিনি চান প্রত্যেকে তার নিজস্ব বর্ণ নিয়ে তৃপ্তিতে থাকুক।
তার এই অভিযানের সাথে ছিলেন অনেক চলচিত্র তারকা যারা বিশ্বাস করে ১৩০ কোটির দেশে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন রকম চামড়ার রঙ এই বৈষম্য বিভেদ না সৃষ্টি করে আমাদের উদযাপন করা উচিত |
আসল সত্য তো এটাই যেখানে নারী পুরুষের সমান সমান দাবি করার সাথে সাথে আমাদের সব বর্ণের মানুষকে সমান শ্রদ্ধা কিংবা সমান সুন্দর ভাবতে হবে , আমাদের মেনে নিতে হবে বাহ্যিক ভাবে সুন্দর হওয়ার থেকেও মানষিক ভাবে সুন্দর হওয়াটা অত্যান্ত জরুরি| আজকাল হয় কিছু বিজ্ঞাপনে গাঢ় চামড়ার মডেলদের প্রাধান্য দেওয়া হয় এভাবেই তারা প্রতিনিয়ত প্রাধান্য পাক সফল হোক আর আস্তে আস্তে দুরে যাক বর্ণ বৈষম্য, আগামীতে আর কারোর চামড়ার রঙ নয় বরং তার সফলতার চাবিকাঠি হোক তার সুন্দর মন এবং কঠোর পরিশ্রম|
খুব সুন্দর উপস্থাপনা।
ReplyDelete