কাজল ভট্টাচার্য, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:

এ নোবেল সে নোবেল নয়।
অর্থনীতির নোবেল সে নোবেল নয়।
সে নোবেল মানে?
আলফ্রেড নোবেল প্রবর্তিত নোবেল পুরস্কার।
নোবেলের পুরস্কারেরও জাতবিচার আছে, সেটা জানেন কি?
অর্থনীতির নোবেল সে অর্থে মোটেই কুলীন নয়। এমনটাও অপবাদ আছে।

নোবেল পুরস্কারের ইতিহাস শুরু সাল ১৮৯৫ থেকে। সুইডিশ কেমিস্ট আলফ্রেড নোবেল মারা যাওয়ার আগে এক উইল তৈরি করেন। সেই উইলেই তিনি নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কথা বলে যান। রেখে যান তাঁর জীবনের সঞ্চিত অর্থ। আলফ্রেড নোবেল যে বিষয়গুলিতে পুরস্কার দিতে চেয়েছিলেন, তার মধ্যে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, মেডিসিন ছাড়াও ছিলো সাহিত্য ও শান্তি পুরস্কার। তারমধ্যে জায়গা ছিলো না ইকোনমিক সায়েন্সের।

ইকনোমিক্সে নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় সুইডেনের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক, Sveriges Riksbank- এর উদ্যোগে। ১৯৬৮ সালে ব্যাঙ্কের তিনশোতম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন হয়। সেই উপলক্ষ্যেই নোবেল ফাউন্ডেশনের হাতে মোটা টাকার অনুদান তুলে দেয় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ব্যাঙ্কের অনুদানের টাকাতেই অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। তবে নিয়ম- কানুন সবই এক। কাঁদের হাতে নোবেল তুলে দেওয়া হবে, তা ঠিক করে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস। ১৯৬৯ সাল থেকে প্রতিবছর অন্যান্যদের সঙ্গেই এক সারিতে দাঁড়িয়ে অর্থনীতিবিদরা নোবেল পুরস্কার নেন।
এতোকিছুর পরে, আজও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি অর্থনীতির নোবেল পুরস্কারের।

হার্ড লাইনার রক্ষণশীলরা তো আরও একধাপ এগিয়ে। তাঁরা ইকনোমিক্সের নোবেলকে আদৌ নোবেল বলেই মানতে চান না। তাঁদের অকাট্য যুক্তি,  অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কথা বলে যাননি পুরস্কারের প্রবর্তক। এমনকি ওই বিষয়ের পুরস্কারের সঙ্গে নোবেল পদবি জড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারটাকেও সুনজরে দেখছেন না আলফ্রেড নোবেলের পরিবার। পরিবারের এক সদস্য পিটার নোবেল। তিনি আবার সুইডেনের মানবাধিকার সংগঠনের আইনজীবী। তাঁর মত, পুরস্কারের সঙ্গে তাঁর পূর্বপুরুষ আলফ্রেড নোবেলের নাম জড়িয়ে তার অপব্যবহার করা হচ্ছে।

অর্থনীতির নোবেলের মতোই বিতর্ক তৈরি হয়েছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে নিয়েও। অনেকের মত, এক মার্কিন নাগরিকের বঙ্গীকরণ ফেলেছি আমরা। তবে এটাও সত্যি খাতা- কলমে অভিজিতবাবু মার্কিন নাগরিক হলেও এ শহর, এ দেশের সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান। জলঘোলা হয়েছে অভিজিতবাবুর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও।
ওদিকে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এক প্রস্থ কথাবার্তা হয়েছে নোবেলজয়ীর। দু'পক্ষই খুশি তাঁদের আলাপ- আলোচনায়।

এরপর আজ, মঙ্গলবার রাতেই শহরে আসছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিত বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।
কলকাতায় তিনি কী খাবেন?
মায়ের হাতের কোন রান্না খেতে ভালবাসেন?
একদিন হাতে থাকতেই সে সব জানতে বালিগঞ্জের সপ্তপর্ণীতে ছুটেছিলেন সাংবাদিক। প্রশ্ন একটাই,
নোবেলজয়ীর একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে এতো মাথা ঘামানো কেন? তার সঙ্গেই আর এক মারাত্মক প্রবণতা, ওই বিশেষ কৃতী ব্যক্তিটিকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া।
ঠিক একই প্রবণতা সাধারণ মানুষের মধ্যেও। সোশ্যাল মেডিয়ায় ঝড় উঠেছে অভিজিতবাবুর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে। সংবাদমাধ্যমের আগ্রহ অভিজিতবাবুর খাওয়া নিয়ে। সাধারণ মানুষের আগ্রহ অভিজিতবাবুর দাম্পত্য নিয়ে। দুটোই একজন মানুষের একেবারে নিজস্ব ব্যাপার। সেই ব্যক্তিগত পরিসরে ঢুকে যাওয়ার উদ্দেশ্যেটা কী?
অভিজিতবাবুর মেনু, অভিজিতবাবুর দাম্পত্য, দুটোই সমানভাবে অপ্রয়োজনীয়। আমরা তাঁকে চিনেছি তাঁর নোবেলপ্রাপ্তির জন্য। তাঁর গবেষণার বিষয় নিয়ে কোনও অজানা, চমকে দেওয়া কথা শুনছি নাতো!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours