গৌতম দাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, রাজ্য আবগারি দফতর ও লেখক, কলকাতা:

কালীপুজো নিয়ে সারা বাংলায় অনেক কাহিনি আর সেইসব কাহিনি থেকেই কালী ভিন্ন ভিন্ন নামে বিখ্যাত হয়ে পূজিত হচ্ছেন বিভিন্ন জায়গায়। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে এই কালীপুজোর সঙ্গে বা কালী ঠাকুরের নামকরণের সাথে আইন আদালতের সম্পর্ক জড়িয়ে গেছে এমন ঘটনাও আছে। বর্ধমান শহরের খোসবাগানে পুজো হয় এক অদ্ভুত নামের কালী ঠাকুরের 'ফৌজদারি কালী মা'। এই নামের পেছনে কিন্তু একটা অসাধারণ গল্প আছে, যার সঙ্গে ভিষন ভাবে আইন আদালত জড়িয়ে রয়েছে, আর সেই কারণেই এইরকম অদ্ভুত নামকরণ।
সময়টা ছিল 1952 সাল, দেশ সদ্য সদ্য স্বাধীন হয়েছে, পুলিশ-প্রশাসনের বেশ কড়াকড়ি তখন, সেই সময়ে বর্ধমান শহরের খোসবাগান অঞ্চলে ছিল এক বাগদি পাড়া, আর সেখানেই হত এই কালীপুজো। সেবার কালীপুজোর বিসর্জনের দিন শোভাযাত্রা নিয়ে এক বড়সড়ো গোলমাল হয়ে যায়, পুলিশ অনুমতি না দিলেও বের হয়েছিল কালী ঠাকুরের বিসর্জনের বিশাল শোভাযাত্রা, পুলিশের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে কালী প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা বের হওয়ার পর, পুলিশ সেই শোভাযাত্রা মাঝপথেই আটকে দেয় এবং পনেরো-কুড়ি জনকে গ্রেফতারও করে, এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, আর কালী প্রতিমা পড়ে থেকে যায় রাস্তার পাশেই। ধৃতদের জামিনের আবেদন করে মামলা গড়ায় নিম্ন আদালতের সীমানা ছাড়িয়ে একেবারে কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত, তারপর অবশেষে ভাইফোঁটার পরের দিন ধৃতদের জামিন মঞ্জুর করে আদালত এবং সাথে শোভাযাত্রার অনুমতিও দেয়, আর সেই দিনই পড়ে থাকা সেই কালী প্রতিমা নিয়ে ধুমধাম করে বর্ধমানের রাস্তায় আবার শোভাযাত্রা বের হয়েছিল, সেই ঘটনা থেকে সবার মনে বিশ্বাস জন্মায় যে মা কালীর মাহাত্ম্যেই এই কঠিন মামলায় জয় সম্ভব হয়েছে, তখন থেকেই এই দেবীর নাম হয়ে যায় 'ফৌজদারি কালী'।
পরের বছরেই ওখানে মন্দির তৈরি করে মা কালীর প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করা হয় ধুমধাম করে। সেই মামলা জেতার বছরের ঐতিহ্যকে মনে রেখে এখনও ভাইফোঁটার পরের দিনেই এই কালী প্রতিমার বিসর্জন হয়।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours