দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

বিসর্জন ও বিজয়ার পার্থক্য কি?  যতই  বিসর্জন মন্ত্র থাক,  দেবীর বিসর্জন হয় না। নিরঞ্জন হয়। দেবী সাকার থেকে নিরাকারে পরিণত হয়ে চর্ম চক্ষুর অন্তরালে চলে যান। " নিরাকারা চ সাকারা সৈব..."।

নিরঞ্জনের সময় আমরা প্রার্থনা করি--- 

 ‘ওঁ গচ্ছ দেবি পরং স্থানং যত্র দেব নিরঞ্জনঃ। অস্মাকং তু সুখং দত্তা পুনরেস্যসি সর্বদা।’ তুমি নিরাকার স্বরূপে ফিরে যাও। সব সময় তুমি অবশ্য আসবে আমাদের আনন্দ দিতে।  মন চাই না বিদায় দিতে। ঘরের মেয়েকে বিদায় কি করে দেওয়া যায়?  তাই প্রার্থনা করে বলি---

‘ওঁ দেবি ত্বং জগতাং মাতঃ স্বস্থানং গচ্ছ পূজিতে। 
সংবত্সর ব্যতিতে তু পুনরাগমনায় চঃ।’

অর্থাৎ, হে দেবী, জগজ্জননী, পূজিতা হয়ে তুমি নিজ স্থানে গমন কর এবং এক বছর পরে আবার তুমি অবশ্য আসবে।
এব্যাপারে এক কাহিনী আজও প্রাসঙ্গিক। একবার দক্ষিণেশ্বরের জমিদার মথুরবাবু এক গোঁ ধরে বসে আছেন। বিজয়া দশমীর দিন কিছুতেই মাকে বিসর্জন দিতে দেবেন না। কারণ তিনি মাকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না, নিত্য পূজা করবেন। মায়ের কৃপায় তাঁর ধনের অভাব নেই। কিন্তু বিজয়া দশমীর নিয়ম তো বিসর্জন দেওয়া। কেউ তাঁকে বোঝাতে পারছে না। শেষে শ্রীরামকৃষ্ণ হূদয়ের অনুভূতিতে বোঝালেন, ‘তুমি মাকে ছেড়ে থাকবে, কে বললে? মা কি সন্তানকে ছেড়ে কখনও থাকতে পারে? এ কদিন বাইরের দালানে বসে মা পূজা নিয়েছেন, আজ থেকে মা হূদয়মন্দিরে বসে পূজা নেবেন।’ মথুরবাবু বুঝতে পারলেন তাঁর কথার অর্থ।
 
তিষ্ঠ তিষ্ঠ পরে স্থানে স্বস্থানে পরমেশ্বরী। যত্র ব্রহ্মাদয় সর্বে সুরাস্তিষ্ঠন্তি মে হূদি।' অর্থাৎ, হে মা, তুমি আমার হৃদয়েই থাকো। বিজয়ায় বিসর্জন নয়। মাকে ত্যাগ নয়, বিশেষরূপে অর্জন। এই কদিনের পূজাশেষে যে জ্ঞান অর্জিত হলো, তা হচ্ছে, মা স্বস্থানে কৈলাসে ফিরে গেলেন।
কাম, ক্রোধ, লোভ নামক শত্রুর দ্বারা সব সময়ই মানুষ আক্রান্ত। ভক্তের প্রার্থনা তাই মায়ের পুনরাগমনের। ‘ওঁ গচ্ছ ত্বং ভগবত্যম্ব স্বস্থানং পরমেশ্বরী। শত্রোদর্পবিনাশায় পুনরাগমনায় চঃ।’ ভক্ত অনুনয় করে ভালোভাবে শোনার জন্য, মনে করে রাখার জন্য।
 
মায়ের নিজ স্থান ভক্তের হৃদয়মন্দিরে। ভক্ত নিজ হূদয়েই মাকে ফিরে যেতে অনুরোধ জানায়। কারণ হৃদয় মন্দির সব। সেখানেই ব্রহ্মা এবং সব দেবতা বিরাজ করেন"।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours