গৌতম দাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, রাজ্য আবগারি দফতর ও লেখক, কলকাতা:

টালা ব্রিজের ভবিষ্যত নিয়ে এই মুহূর্তে কলকাতার মানুষ যখন চরম সঙ্কটে, এই ব্রীজের নির্মাণ বা রক্ষনাবেক্ষন নিয়ে আলোচনা, সমালোচনার ঝড় উঠেছে সব স্তরে, তখন ভারতের প্রাচীনতম এক বিস্ময়কর ব্রিজ বা সেতুর জানা অজানা গল্প করি:- এই সেতুটি ভারতের দক্ষিন উপকূলকে লঙ্কার সাথে যুক্ত করে ছিল, আজ থেকে সতেরো লক্ষ পঞ্চাশ হাজার বছর আগে, কথিত আছে ত্রেতা যুগে এই বিশাল সেতুটি রামভক্ত নলের তত্ত্বাবধানে মাত্র পাঁচ দিনেই তৈরী করেছিল বানরসেনারা, হ্যাঁ ঠিক ই ধরেছেন, এই সেই সেতু যার উপর দিয়ে হেঁটে  রামচন্দ্র, লক্ষ্মণ, হনুমান আর বানর বাহিনী লঙ্কা পৌছোয়, তারপরের গল্প সবার জানা, শ্রীরামচন্দ্র রাবণ বধ করে লঙ্কা জয় করেন আর অশোক বনে বন্দিনী সীতাকে উদ্ধার করেছিলেন।                                 
                     সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্র রামায়ণ অনুযায়ী ভগবান শ্রীরামের পবিত্র নাম পাথরে লিখে উত্তাল সমুদ্রের জলে নিক্ষেপের পরও পাথর গুলো অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ভাবে জলে নিমজ্জিত না হয়ে ভেসে উঠেছিল, আর এইভাবেই সমুদ্রপথে একটি পাথরের সেতু তৈরি হয়েছিল। সেই সেতুর নামই হয় 'রাম সেতু'।            
এখন বিতর্ক হতেই পারে আধুনিক মানুষের উদ্ভবের দেড়-দু লক্ষ বছর আগে এই 'রাম সেতু' তৈরী করা সম্ভব হলো কি ভাবে!
সম্প্রতি বিখ্যাত মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা (NASA) তাদের নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে রামায়ণে উল্লেখিত এই 'রাম সেতুর' অবস্থানকে চিহ্নিত করেছে, নাসা আরও জানিয়েছে, সেতুটি তিরিশ কি.মি. দীর্ঘ এবং বর্তমান ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশের রামেশ্বরমের ধনুষ্কোডি দ্বীপ থেকে শ্রীলঙ্কার মান্নারের তালাইমান্নারের পর্যন্ত বিস্তৃত। শোনা যায় পনেরেশো শতক পর্যন্ত নাকি এই 'রাম সেতু' দিয়ে  চলাচল করা যেত, তখন এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উপরে ছিল এমনটাই বলা হয়ে থাকে তবে এর সত্যাসত্য কারুরই জানা নেই। চুনা পাথর দিয়ে তৈরী এই সেতুটির অস্তিত্ব এখনো কোথাও সমুদ্র থেকে তিন ফুট তো কোথাও তিরিশ ফুট গভীরে পাওয়া যায় এবং এর ফলে জাহাজের নেভিগেট কঠিন করে তোলে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবথেকে বিস্ময়কর এক সৃষ্টি এই 'রাম সেতু' যা আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে, সনাতন ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত এই কাহিনী কি তাহলে আধুনিক বিজ্ঞানকে পথ দেখাবে, যার মাধ্যমে বিশ্ব ব্রহ্মান্ড তথা মানব সভ্যতার ইতিহাস আবার নতুন করে লেখা হবে!                                                      আবার বহু মুসলমান মানুষ বিশ্বাস করে থাকে যে হযরত আদম(আ) শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতে গমন করেছিলেন এই সেতুর মাধ্যমে। এই সেতুকেই কিন্তু পশ্চিমের দেশগুলো বলে থাকে আদমের সেতু, পশ্চিমি উপকথা থেকে জানা যায় যে, বর্তমান যেখানে দক্ষিণ ভারত আর শ্রীলঙ্কার অবস্থান, বাইবেলে সেই স্থানটি পার্থিব প্যারাডাইস বা স্বর্গোদ্যান বলে খ্যাত। এই উপকথা অনুযায়ী অ্যাডাম যখন স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হন, তখন এই অ্যাডামস-ব্রিজ আদমের  সেতু নির্মিত হয়, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে শুধু এখানেই কেন, অন্য কোন সাগর-মহাসাগরে কেন এরকম কোনো সেতু হতে পারলো না!  স্বাভাবিকভাবেই এর উত্তর পশ্চিম দুনিয়া দিতে পারেনি! হয়তো জানাও নেই! আচ্ছা যদি সহজভাবে এর উত্তর দিতে চাই একজন গর্বিত ভারতবাসী হিসেবে তাহলে অবশ্যই বলতে হবে বাইবেলে উল্লিখিত আদমের সেতু আসলে সেই সেতু যা শ্রীরামচন্দ্রের বানানো 'রাম সেতু' , উল্লেখ করা যেতেই পারে যে অ্যাডামস ব্রিজ বা আদমের সেতুর উল্লেখ কিন্তু আমারা রাম সেতুর অনেক পরে পাই।              শেষ করি একটু মজার বিতর্ক দিয়ে, পশ্চিমের দেশগুলোর এই বর্ণনা আর নাসার সাম্প্রতিক তথ্য  থেকে একটা ধারণা স্পষ্ট হচ্ছে যে সভ্য মানুষ শৃষ্টির আগেই এই সেতুটির শৃষ্টি হয়েছিল,
এরথেকেই একটা  আবেগ তৈরী হচ্ছে মনে :-    ভারতবর্ষই হয়তো সেই হারানো স্বর্গ, যেখানে অতীতে ছিল দেবতাদের বাস।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours