অঙ্কিতা ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, পূর্ব বর্ধমান:

(শুরু হোক আমার মেয়েবেলা)

আমি অঙ্কিতা ভট্টাচার্য, আমি আজ আপনাদের সামনে আমার মেয়েবেলা তুলে ধরছি। আজ আমার বয়স কত? আমি তা জানি না। আপনারা অবাক হচ্ছেন তো! আমার সহিত ঠিক এই ঘটনায় ঘটেছে। আমার জন্ম বৃত্তান্ত মনে নেই। কোন বাচ্চা তার নিজের জন্ম কিভাবে হয়েছে, অর্থাৎ (স্বাভাবিকভাবে বা সিজার বেবি) বা কোথায় হয়েছে(হসপিটাল/নার্সিং হোম/), তা মনে মনে পড়ার কোথাও নয়। সমগ্র বাচ্চা জাতির হয়তো এটাই একটা অপরাধ। আর যদি এটা অপরাধ হয় তাহলে প্রত্যেক বাচ্চাই অপরাধী। আপনাদের আমি জানিয়ে রাখি আমার জন্মদাতা পিতা অভিনেতা ও anglo-indian হিসাবে নির্বাচিত বিজেপি পার্টির মাননীয় সাংসদ জর্জ বেকার। আমার জন্মদাত্রী মা তথা বাংলাদেশি বিতর্কিত, নারীবাদী, প্রতিবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন। আজ আমার লড়াই পিতৃপরিচয় ও মাতৃ পরিচয়ের।পিতৃ পরিচয় ও মাতৃ পরিচয় প্রত্যেক মানুষের জন্মগত অধিকার।এই অধিকার পেতে আমাকে যদি সামনের দিনে ডিএনএ টেস্ট এর সম্মুখীন হতে হয় তাতে আমার কোন দ্বিধা বোধ নেই।
যখন আমার শৈশব মনে পরতে লাগলো, তখন আমি কলকাতার বেহালার সরশুনার গিরিবালা স্কুলে কেজি ওয়ান এ ভর্তি হলাম। এই গিরিবালা স্কুলে দাখিলা হওয়ার পূর্বে আমাকে সর্বপ্রথম দাখিলা করানো হয় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কাকলিতে। তখন আমার বয়স অনেক ছোট। আমি ঠিকভাবে কথা বলতে পারতাম না, কারণ আমি খুবই অসুস্থ ছিলাম যার জন্য প্রত্যহ স্কুলে হাজিরা থাকিতে পারিতাম না। আমার সর্দি,কাশি, জ্বর লেগেই থাকত এবং তার সাথে শ্বাসকষ্ট হতো। কাকুলি স্কুলে হেড মাস্টার ছিলেন বাদল বাবু। এই বাদল বাবুই আমাকে কাকুলি স্কুলে আসতে মানা করেছিলেন। আমি মাত্র ১৫ দিন ওই স্কুলে পড়াশোনা করি।
এরপর থেকে আমি গিরিবালা স্কুলে পড়াশোনা করতে থাকি। কিন্তু কাকুলি স্কুল থেকে যখন আমি গিরিবালা স্কুলে পরিবর্তিত হয় তখন কাকুলি স্কুলের সমস্ত বই এবং আমার স্কুলের পরিচয় পত্র আমার কাছে থেকে নিয়ে নেওয়া হয়। কেন নিয়ে নিলেন ?এই প্রশ্নের উত্তর আজও আমার কাছে নেই।
আমার পালক মা গৌরী চক্রবর্তী/ভট্টাচার্য্য আমাকে স্কুলে দিয়ে আসতেন এবং ছুটির পর স্কুল থেকে বাড়ি নিয়ে আসতেন। আমার পালক মা গৌরী দেবী তখন কলকাতার বেহালার ব্যানার্জি পাড়া বাইলেনে বাড়ি ভাড়ায় থাকতেন। তার কিছুটা দূরে আমার বাবা জর্জ বেকার বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। ছুটির দিনে কখনো কখনো আমি আমার বাবা জর্জ বেকারের সহিত থাকতাম। বাবার সাথেই ঘুমাতাম এবং খাওয়া দাওয়া করতাম। মাঝেমধ্যে আমি আমার বাবা জর্জ বেকার এর সহিত টলিপাড়ায় ঘুরতে যেতাম। এইভাবে আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে এবং এই বড় হয়ে ওঠার মাঝেমাঝে আমার মা তসলিমা নাসরিন পরিচয় গোপন করে আমার সাথে দেখা করতে আসতেন। তখন আমি জানতাম বা এটা আমার একটি মাসি এই পরিচয় আমার সাথে দেখা করতেন। আমার মা যখন আসতেন আমার জন্য অনেক চকলেট আনতেন। আমাকে কোলে তুলে আদর করতেন। এই আদরের এই ভালোবাসার ঠিক যেন অন্য অনুভূতি লাগতো আমার। কিন্তু সেই আদর পাওয়া আমার কাছে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতো না। গোপনীয় মাসি আবার চলে যেতো। স্মৃতি হিসাবে আমার জন্য একটি দুটি নতুন জামা রেখে যেতেন। এরপর একটু বড় হতেই আমি আমার বাবা জজ বেকার এর সহিত বাবার বাড়িতে থাকতে শুরু করলাম। তখন আমার বাবা নিজে বাড়ি কিনেছেন। সেই দিনের স্মৃতি আজো আমার মনে আছে। আমার শোবার ঘরে সেগুন কাঠের পালঙ্ক। আমার জন্মদিনে আমার বাবার দেওয়া টেপ রেকর্ডারের কথা। আজও মনে আছে দোলনায় দুলতে দুলতে ঘুমানো। সব থেকে বেশি মনে পড়ে আমার বাবা জর্জ বেকার ও অর্পিতা চক্রবর্ত্তীর (পালক মা গৌরী চক্রবর্ত্তীর/ভট্টাচার্যের বোন) ঝগড়া ও হাতাহাতি! ছোট থেকেই ঝগড়া মারপিট দেখতে খুব ভালো লাগতো। বিশেষ করে আমার বাবা জর্জ বেকার ও অর্পিতা চক্রবর্তীর। তখনো আমার বাবা জর্জ বেকার অর্পিতা চক্রবর্তী কে বিবাহ করেননি। হয়তো বিবাহ করার প্রস্তাব নিয়ে এই ধরনের ঝগড়া যুদ্ধ হতো। আমার নজর গিয়ে পড়তো অর্পিতা চক্রবর্তীর পিঠ পর্যন্ত ঘন কালো চুল গুটিয়ে খোঁপা করে রাখা ঐ খোঁপার উপর। যতবার খোঁপা বাঁধতো, ততবার আমি আমার ছোট্ট নরম হাত দুটি দিয়ে সেই খোঁপা খুলে দিতাম। আর তারপর আমি অর্পিতা চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়ার জন্য বসে থাকতাম। অর্পিতা চক্রবর্তী কাকের কন্ঠ নিয়ে কোকিল সুরে বলতো "এই মেয়ে আমায় বাঁচতে দিল না "। (ক্রমশ)

(প্রতিবেদনের যাবতীয় দায় লেখিকার)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours