জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

আগের লেখাগুলিতে একটা কথাই বলার চেষ্টা করেছি। ইতিহাসের আলোকে জ্ঞান কিংবা সৃজনী নয়, জ্ঞান এবং সৃজনীর আলোকেই ইতিহাস।  ইতিহাস এবং জ্ঞান-সৃজনীর এই অন্তসম্পর্কের আবিস্কারের কাজটাই 'রেনেশাঁ' র মাধ্যমে নবজাগ্রত পুজিঁ করে গেছেন।
 জ্ঞান-সংস্কৃতির অভিমুখ ধরেই যে  ইতিহাস এবং মানবিক বোধের অগ্রগতি ঘটেছে, সেটাই  কার্ল মার্ক্সের ইতিহাস বিজ্ঞান  প্রমান করেছে।
তিনি দেখিয়েছেন, চতুর্দশ শতাব্দি থেকে  রেনেশাঁ যে  তার উদ্যাম গতি নিয়ে, বিজ্ঞানের তিনটি প্রধান গতির আভ্যন্তরিন শক্তির উন্মোচন করছিলেন এবং হাতে হাত মিলিয়ে, সাহিত্য-কলা-ভাষ্কর্য্যের বিপুল বিকাশ ঘটিয়ে চলছিলেন.। এই ভাবে সেকালে  পুঁজির স্বাধীন  জ্ঞানের অন্বেষন, একটা অখন্ড বিশ্ব সত্বার উন্মোচন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো।

 দাসযুগ এবং পরবর্তী মধ্যযুগের অন্ধকারের আবিস্কারগুলি, পুঁজির  হাত ধরে কি করে যুক্তিবাদী জ্ঞাণে আত্মপ্রকাশ করছিলো, তা, ফেড্রিক এঞ্জেলসের, লিখা প্রকৃ্তির দ্বান্দ্বিকতা নামক পুস্তকে বর্ণন আছে। যাদের পড়ার আগ্রহ কম, সে রকম সমাজ বিজ্ঞানী বা সাম্যবাদীরা নিশ্চিতভাবে সেই পুস্তকের, ভুমিকাটি পড়বেন। দেখবেন কেমনভাবে, রেনেশাঁ কালে অতীতের অনুমান ধর্মীতা ক্রমে, একটি অখন্ড জ্ঞানের পথে অগ্রসর হয়েছে। এর সাথে যখন ইতিহাস তারা পড়বেন, দেখবেন - কালে কালে যদিও ইতিহাসের ক্ষয়িষ্ণু শক্তিগুলি জ্ঞান-সৃজনীর যুগলবন্দি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু
----- কালের যাত্রা এসবকে ভেংগে দিয়ে এই যুগলবন্দিকেই এগিয়ে দিয়েছে।. 

এই সুত্রেই বুঝতে হয়, কার্ল মার্ক্সের আবির্ভাবই ঘটতে পারতো না, যদি  না পুজিতন্ত্রের কেন্দ্রিভবন এবং বন্ঠনের সংঘাত, জ্ঞান-সৃজনীর যাত্রাকে কেন্দ্রিভুত পুজি, 
---- মন বা চিত্তের প্রশ্নে  ফ্রয়েড বা ম্যালথাসে এসে শেষ  করে না দিতো। যিনি অর্থনীতিতে কিঞ্চিৎ পড়াশুনা করেছেন, দেখবেন এই দুই তত্ব 'মনের' শরীর সর্বস্ব রুপে পৌছেই আটকে গেছে।
 সেখান থেকে 'মনের' বিচরন ভূমি হিসেবে, তার সৃজন রুপ কিংবা অনুভুতির রুপে বিকশিত হতে দেয় নাই। কিন্তু দেখুন প্রকৃ্তি নিজেই নিজের মধ্যে একটা সন্তুলিত প্রতিমূর্তী ধারন করে রেখেছেন।  যে মুহুর্ত 'মনের' বিচরন ক্ষেত্রকে সংকুচিত করে দেওয়া হোল
----- সে  মুহুর্ত থেকে, প্রকৃতি, ইতিহাসের  মধ্যেই অন্য ব্যবস্থা করে নিলো। সে বিচারেই বুঝতে হবে, , মার্ক্সের জন্মটাই হোল, প্রকৃ্তি নিজেই নিজেকে জ্ঞান-সৃজনের  এক অখন্ড সন্তুলিত রুপ হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করতে চাইলো।  মার্ক্স নিমিত্ত মাত্র। সেখানে মার্ক্স না থাকলেও, অন্য কেউ আসতেন,  ইতিহাসের কাছে এবং শ্রমিক শ্রেনীর কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য। 

ইতিমধ্যে  শ্রমিক শ্রেনীর  শুধু আবির্ভাব ঘটেছে, তাই নয় - আধুনিক  শ্রমিক শ্রেনীর আবির্ভাবে সৃজনের  অতি নিম্নদশাকে ক্রমে যান্ত্রিক শ্রমে উত্তরন ঘটিয়েছে। শ্রমিক শ্রেনীর মধ্যে শারিরীক অস্তিত্বের সংগ্রামের মধ্যেই সামাজিক-রাজনৈ্তিক যোগদানের আকাংখ্যা প্রবল হতে শুরু করেছে। 

এইসুত্রেই বুঝতে হবে,  পুজিবাদী উৎপাদনের সাথে বন্ঠনের সন্তুলন, ভেংগে যাওয়ার কারনেই, অষ্টাবিংশ শতাব্দির শুরুতেই, অর্থনী্তির সাথে সাথে  রেনেশাঁর সংকটের নিদান হিসেবে  মার্ক্স ফ্রয়েডকে অনেক দূর এগিয়ে অনুভুতি এবং সৃজনকে পর্বত চুড়ায় উঠিয়ে দিলেও, পাল্টাটাও  শুরু হয়ে যায়।

পুজিতন্ত্র 'চিন্তা' যে প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ট রুপান্তরের প্রতিরুপ সেই যুগান্তরকারী মার্ক্সীয় আবিস্কারকে নস্যাৎ করতে, 'মহাব্র্যহ্ম' তত্বকে সামণে আনতে শুরু করলো প্রবল বিক্রমে।যে বিজ্ঞান, রেনেশারঁ শুরুর কাল থেকেই প্রকৃ্তিকে ক্রম বিকশিত সত্বা হিসেবে, দেখেছে, হটাৎ করেই, সেই একই রেনেশারঁ শ্রষ্টারা, প্রকৃ্তিকে স্থবীর হিসেবে চিহ্নিত করতে শুরু করলো। 

এঙ্গেলস প্রকৃ্তির দ্বন্দ্বিকতার ভূমিকায় লিখছেনঃ
" প্রকৃ্তিবিজ্ঞান, যা গোড়ায় ছিলো এত বৈপ্লবিক, হটাৎ দেখা গেলো যে তা দাঁড়িয়ে আছে এক আগাগোড়া রক্ষণশীলতার মুখোমুখি, যেখনে এমন কি আজো সবকিছু আজো,তেমনি আছে, যেমনটি ছিলো শুরুতে এবং পৃথিবীর আয়ুস্কাল পর্য্যন্ত বা অনন্তকাল ধরে সব কিছু তেমনই থাকবে যেমন থেকেছে প্রথম কাল থেকে।"

এই কারনেই, দেখা যাবে অক্টবর বিপ্লব যখন বিশ্বকে এক মহামানবিক অভিমুখে প্রসারিত করছে, তখনই 'পরমব্রহ্ম'  এবং স্থবীরতার তত্বকে    সামনে, এনে অতি-অতীতের প্রেতাত্মাকে টেনে তুলতে লাগল।
পরিনামে একপ্রান্তে যখন  সারা বিশ্বে যখন সাহিত্য, কলা সহ চিন্তা জগতে বিপুল রুপান্তর ঘটছিলো, তখন উল্টো দিকে সারা বিশ্বেই অতি-অতীতের 'উলংগ প্রেতাত্মার জাগ্রুতীর আয়োজন চলছিলো।

এই সংঘাতের মধ্যেই ভারতে, ঈশ্বরচন্দ্র থেকে রবীন্দ্রনাথ পর্য্যন্ত, সেখান থেকে প্রেমচন্দ্র, রাহুল সংস্কৃত্যায়ন থেকে কল্লোল যুগের সাহিত্যিকদের আবির্ভাব ঘটলো। খোদ রাসিয়, লিও তলস্তয়ের সাথে মিলন হোল গোর্কী, মায়াভস্কি, পুসকিন থেকে যব যুগান্তরকারী সাহিত্যের ভান্ডার। লেনিন হয়ে উঠলেন কালান্তরের পথে মার্ক্সের পর সর্বকালের শ্রেষ্ট বৌদ্ধিক স্তম্ভ।
------ অন্যপ্রান্তে, পুজিরঁ কেন্দ্রিভবনের সাথে 'পরমব্রহ্ম' ধারনার মিলনে রাসির গৃহযুদ্ধ এবং ক্রমে তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্ম দিলো। এইভাবে দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে  চিন্তনের সংঘাত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেলো - রক্ত সুদ্ধি বনাম প্রগতির সংঘাতে। সোনা যায়, কমিউনিষ্ট বুদ্ধিজীবি, নেহেরু-কৃষ্ণমেনন যুগল বন্দির বাইরে একমাত্র জগদিশ চন্দ্র বসু ছাড়া প্রায় সব  ভারতীয় বুদ্ধিজীবি  কোন না কোন ভাবে, মুসৌ্লিনির সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। শোনা যায়, অতিদ্রুত সংশোধন করে নিলেও রবীন্রনাথের সাথেও সেরকম কিছু যোগাযোগ হয়েছিল।

QUESTION ARISES HERE WHETHER COMMUNISTS IN INDIA DID EVER UNDERSTOOD ABOUT WHAT DOES MEAN , IN REAL SENSE, THE COLLAPSE OF SOVIET UNION IN TERM OF KNOWLEDGE-CREATIVITY 
এখানে যদি স্তালিনের শেষ দুটি ভবিষ্যতবানীর সাথে সাধারন মার্ক্সীয় তত্ব মিলিয়ে বিচার করা হোত, তবে নিশ্চিতভাবে সোভিয়েত উত্তরকালে
সাম্যবাদী আন্দোলন
---- নিশ্চিতভাবে বুঝতেন


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours