দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
চল আমার বাপের বাড়ি দেখে আসবি! বললেন মা দুর্গা, তাঁর দুই সখি জয়া ও বিজয়াকে! তাঁরাও এক পায়ে খাড়া!
পুরাণের এই কাহিনী দেখতে হলে আসতে হবে রামপুরহাটের ১৪ নং ওয়ার্ডের চৌধুরী বাড়িতে!
সব জায়গাতেই সপরিবারের আসেন। কিন্তু ব্যতিক্রম রামপুরহাটের ১৪ নং ওয়ার্ডের চৌধুরী বাড়িতে! এখানে তিনি পরিবারের সাথে নিয়ে আসেন দুই সখি জয়া ও বিজয়াকে। অনেক জায়গায় সরস্বতী ও লক্ষ্মীর বদলি হিসেবে নিয়ে আসেন। শুধু এখানেই পরিবারের সাথে দুই সখিকে সাথে নিয়ে আসেন।
১০ বছর ধরে চলছে চৌধুরী বাড়ির পুজো। চৌধুরি পরিবারের আদি বাড়ি ঝাড়খণ্ডের গন্ধর্বপুর। পরিবারের সদস্য কৌশিক চৌধুরী বলেন, নীলকর সাহেবরা ম্যাসেঞ্জার ড্যামের কাছে নীল চাষ করার জন্য আদিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে চৌধুরীদের চার পাঁচশ বিঘে জমি দেয়। সেখানে স্বল্প মুল্যে শ্রমিক পাওয়ার কারণে নীলকর সাহেবরা নদীর তীরে উর্বর জমিকেই বেছে নেয়। সেখানেই নীল চাষের প্রচলন হয়। সমৃদ্ধির জন্য সেখানেই চৌধুরী পরিবার নীল চাষ শুরু করে। আসীম কান্ত চৌধুরী আবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী। তাঁর ছেলে কৌশিক চৌধুরী পেশায় ব্যবসায়ী। জানাগেছে, শিল্পী রবি শঙ্কর প্রথম দিকে মূর্তি গড়তেন। তিনি গত হওয়ার পর সুভাষ সুত্রধর বিগত তিন বছর ধরে মূর্তি গড়ে চলেছেন। এই মূর্তির মুখ কোন ছাঁচে তৈরী হয় না। হাতে তৈরী। এক চালির দুর্গার পট আঁকা হাতেই। এই মূর্তির সাথে নগরীর রায় বাড়ি ও সুরুলের মূর্তির মিল আছে। সাবেকি রীতি অনুযায়ী পুজো। অষ্টমীর দিনে কুমড়ো ও আঁখ বলি হয়। এখানে মাছ দিয়ে অন্ন ভোগ নবমীর দিন। তার আগে লুচি ভোগ হয়। পুজো কদিন মন্দিরে মায়ের প্রসাদ সবাইকে দেওয়া হয়। মেনুতে থাকে মাছ। অষ্টমীতে হবে লুচির ভোগ।
ম্যাসেঞ্জারে সাঁওতাল বিদ্রোহ হলে চৌধুরী পরিবার সিউড়ির নগরীতে চলে আসে। পরে নগরী থেকে রামপুরহাট চলে আসেন তাঁরা। এই পরিবার ৪০ বছর পর ম্যাসেঞ্জার থেকে নগরীতে চলে আসে। সেখানে রায় পরিবারের সাথে একসাথে পুজোয় অংশ গ্রহণ করতেন তাঁরা। তারপর স্ত্রী সুতপা চৌধুরীর অনুরোধে কৌশিক চৌধুরী এই পুজোর প্রবর্তন করেন। নগরীর মূর্তি দেখে সুরুলে মূর্তি। আবার নগরীর পুজো দেখে রামপুরহাটে চৌধুরী বাড়ির মূর্তি। বাড়ির পুকুর থেকে ঘট ভরা এবং সেখানেই প্রতিমা নিরঞ্জন।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours