দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

১২২ বছর আগে লাভপুরের ফুল্লরা তলায় সতীপীঠে তারা মায়ের পুজো করে নিঃসন্তান জমিদার হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায পুত্র লাভের আশায়। বছর ঘুরতেই ঘরে কোল আলো করে জন্ম পুত্র তারা শঙ্করের। সেই থেকে বংশ পরম্পরায় চলে আসছে এই পুজো। তাঁর লেখনীতে অমর হয়ে থাকা বিখ্যাত লেখা 'গণদেবতা, ধাত্রীদেবতা, কবি, প্রভৃতি উপন্যাসে তারা মা প্রসঙ্গ উল্লেখিত হয়েছে নানা ভাবে। 

পরিবার সূত্রে জানা গেছে,   জমিদার হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এই পুজোর পওন করেন।  হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী প্রভাবতী দেবীর প্রথম সন্তান ভূমিষ্ট হযেই মারা যায়। এই কারনেই তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন বন্দ্যোপাধ্যায় দম্পতি। এই সময় এদিন বিহার থেকে এক পরিব্রাজক সন্ন্যাসী তন্ত্র সাধক লাভপুরের সতী পীঠ ফুল্লরা মায়ের কাছে এলেন তন্ত্র সাধনা করতে। সেই তন্ত্র সাধক রাম জী গোঁসাইকে হরিদাস বাবু ও তাঁর স্ত্রী তাদের সন্তান না থাকার কথা জানান। সাধক গোঁসাই সব শুনে বিধান দের পুরান বর্নিত তন্ত্র মতে দশমহাবিদ্যার এক রূপ উগ্র 'তারা' মাযের পুজোর আয়োজন করতে। হরিদাস বাবু পুজো করা মনস্থির করলে পরিব্রাজক সন্ন্যাসী পুজোর স্থান নির্বাচন করে যান। সেই মত লাভপুর গ্রামের দক্ষিণ দিকের মাঠে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের জায়গায় পুজোর সূচনা হয়। দেবী মূর্তি রূপটি কেমন হবে, কেমন তার গায়ের রং, কেমন তার অলংকার বসন পুরান বর্ণিত রুপ ব্যাখা করে প্রতিমা তৈরি করান সন্ন্যাসী।১৮৯৭ সালের চতুর্দশী তিথিতে মধ্যরাতে তাঁরা পূজোর পর আর গ্রামে থাকেন নি পরিব্রাজক। কিন্ত বছর ঘুরতেই ১৮৯৮সালের ২৩ জুলাই বন্দ্যোপাধ্যায় গৃহে এল পুত্র সন্তান। তাঁরা পুজো করে পুত্র সন্তান লাভ করায়  বাবা নাম রাখলেন তারা শংকর। সন্ন্যাসী চিহ্নিত স্থানে সেই বছরই তৈরি হল দেবীর মন্দির। ঐ জায়গার নাম হযে গেল তারা মা ডাঙা।

পুরাণ বর্নিত দশমহাবিদ্যার তাঁরা রূপটি সম্পূর্ণ আলাদা। দেবীর গায়ের রঙ আকাশে নীল। চার হাত। দেবীর মাথায় গেরুয়া জটা। জটায সাপ জড়ানো। পরণে বাঘ ছাল। গলায় হাতে মাথায় সাপ জড়ানো। গলায় মুন্ডু মালা। দেবীর চরন তলে গেরুয়া জটাধারী শব রূপে মহাদেব। হাতে নর মুন্ডু কৃপাণ। দেবীর লম্বা উদর। অদ্ভুত এই দেবী মূর্তি বর্নণা দিয়ে তৈরি করান পরিব্রাজক সন্ন্যাসী। আজ সেই মূর্তি রূপের কোন পরিবর্তন হয় নি।

শুক্রবার রাতে মহা সমারোহ সেই পুজো অনুষ্ঠিত হবে। শতাব্দী প্রাচীন পুজোয় আজ ও সমান নিষ্ঠায় পালন করে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। তারাশংকরের ভাইপো বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,শুধু হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় নয় তারাশংকর যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন নিষ্ঠার সংগে সংগে এই পুজো করিয়েছিলেন। 

হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় যখন স্থায়ী ভাবে এই পুজো চালু করলেন তখন পুরোহিত হিসেবে দায়িত্ব পেলেন হরিনারাযন তর্কালংকার। সেই পরিবারের সদস্য সুভাষ ভট্টাচার্য দীর্ঘ ৩০ বছর থেকে এই পুজো করে আসছেন। সুভাষ বাবুর কথায়, তন্ত্র সাধক রামজী গোঁসাই এর নির্দেশ মত যে মূর্তি প্রথম তৈরি হয়েছিল সেই ঐতিহ্য ও নিয়ম মেনেই প্রতিবছর মূর্তি তৈরি করেই পুজো হয়। অদ্ভুত দর্শনা এই দেবী মূর্তি আরাধনা বর্তমানে প্রায় বিরল 

বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের অনেকেই কর্মসূত্রে বাইরে থাকলেও তারা পুজোয় অংশ নিতে আজ ও সকলেই হাজির হয় লাভপুরে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours