ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর মহকুমার প্রত্যন্ত একটি গ্রাম ' ধবনী ' যে গ্রামের সন্তান সাধক কবি নীলকন্ঠ! এই গ্রামের ৫ কিঃমিঃ উত্তর পুর্বে ঝাঁঝরা গ্রামে অজয়ের অন্যতম উপনদী কুনুরের উৎস স্হল!
সাধক কবি নীলকন্ঠ ধবনী গ্রামে ১২৪৮ বঙ্গাব্দে জন্ম গ্রহন করেন! তাঁর পিতা বামচরন মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন কালী সাধক! দিনের বেশীর ভাগ সময় তিনি কাটাতেন শ্মশানে কালী সাধনায়!
নীলকন্ঠ সেই সময় কৃষ্ন যাত্রার পালাগান করতেন অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত, বিশেষ করে রাজবাড়ীগুলিতে! কৃষ্ন যাত্রায় আর তাঁর স্বরচিত পদাপলীর খ্যাতি ছিল বাংলা জোড়া! স্বয়ং রামকৃষ্নদেব ও বিকেকানন্দ তাঁর পদাবলী গানের ভক্ত ছিলেন! তিনি বহুবার দক্ষিনেশ্বরে ঠাকুরকে গান শুনিয়ে এসেছেন! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর পদাবলী গানের ভক্ত ছিলেন এবং তিনি সহজ পাঠ পাঠাপুস্তকে কন্ঠ মশাই -এর কথা উল্লেখ করেছেন!
নীলকন্ঠের গ্রামের নির্জন স্হানে একজন তান্ত্রিক একটি পঞ্চমুন্ডির বেদীতে কালীপুজা করতেন! হঠাৎ একদিন সেই তান্ত্রিক উধাও হয়ে যান! বন্ধ হয়ে যায় কালী পুজা ! নীলকন্ঠ তখন বালক , তিনি স্বপ্নাদেশ পান তান্ত্রিকের আরাধ্যা দেবীকে তাঁদের বাড়ীতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য! বালক নীলকন্ঠ সেই স্বপ্নাদেশের কথা পরিরারকে জানালে শুরু হয় কালী পুজা! প্রথমে মাটীর কাঁচা মন্দির হলেও পরে পাকা হয়!
ধবনীর মুখার্জী বাড়ীতে নীলকন্ঠ পরে রাধা মাধব অর্থাৎ শ্রীকৃষ্নের মন্দির ও বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন! সেটিও অলৌকিকভাবে!অধুনা আউসগ্রাম -২ নং ব্লকের কালিকাপুর গ্রামের তৎকালীন জমিদার রাধামাধবের মন্দির নির্মান করে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার পুর্ব রাত্রে মারা যান! তাই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা হয়নি! স্বপ্নাদেশ পেয়ে নীলকন্ঠ সেই বিগ্রহ নিজগৃহে প্রতিষ্ঠা করেন! একই বাড়ীতে শাক্ত ও বৈষ্নব ধর্মের এক অপূর্ব মেল বন্ধন ঘটেছে !
ধবনী গ্রামের মুখার্জী পরিবারের পুজা শুরু হওয়ার পূর্বে তান্ত্রিক প্রতিষ্ঠিত বেদীতে প্রথম পুজা হয়! পূজার ব্যবস্হা করে আর একটি মুখার্জী পরিবার! এখানে একটি ছাগ ও মাগুর মাছ বলি দেওয়া হয়! এই মাগুর মাছ বলি নিয়ে নিয়ে কিংবদন্তী শোনা যায়,একবার বলির জন্য মাগুর মাছ সংগ্রহ হয়নি! সকলেই বুঝতে পারলেন এবার থেকে মাগুর মাছ বলি বন্ধ হ'ল! কিন্তু অলৌকিক ভাবে পুজা শুরুর কিছুক্ষন পূর্বে অঝোর বৃষ্টি হ'লে বেদীর সামনের ডোবা থেকে একজোড়া মাগুর মাছে হঠাৎ ডাঙায় বেদীর সামনে চলে আসে! নির্ভঘ্নে বলি হয়! আর একটি ঘটনার কথা শোনা যায়, একবার সেবাইতরা মাগুর মাছ সংগ্রহ করতে যাচ্ছিলেন! গ্রামের শেষ প্রান্তে এক বুড়ি মাছ বিক্রেতা জিজ্ঞাসা করেন তাঁরা কোথায় যাচ্ছেন? যখন শোনেন তাঁরা মাগুর মাছের খোঁজ করছেন, সেই বুড়ি বলেন তার কাছে মাগুর মাছ আছে!সেই বুড়ি তাঁদের মাগুর মাছ দেন! তাঁরা থলি থেকে পয়সা বের করে পয়সা দিতে গিয়ে দেখেন,বুড়ি উধাও!
এখানে পুজার পর নীলকন্ঠ মুখার্জী র পরিবারের পুজা শুরু হয় মধ্য রাতে! মায়ের পঞ্চব্যাঞ্জন সহ অন্নভোগ ছাড়াও প্রথম বলি হওয়া ছাগের একটি পা রান্না করে মাকে ভোগ দিতে হয়!
শাক্ত মতে পুজা হওয়ায় প্রথমে একটি কালো ছাগ পরে আরো ৫/৬ টি ছাগ বলি দেওয়া হয়! মানত করা ছাগ বলি হওয়ার পর মানতকারীর বাড়ী নিয়ে যাওয়ার নিয়ম নেই!
পরদিন মায়ের দই চিঁড়া ভোগ১ দেওয়া হয়! সেদিন দুপুরে থাকে পংতিভোজের ব্যবস্হা!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours