স্বপন সেন, ফিচার রাইটার, হালিশহর:
ষাটের দশকের কথা, নয়াদিল্লিতে সরকারি উচ্চ পদে বসলেন বারণসসীর ওপারে রামনগরের এক ভদ্রলোক । একদম সাদামাটা মানুষ, না আছে বিলেতের কোন ডিগ্রি না পারিবারিক কৌলিন্য । ছোটখাটো চেহারা হলে কি হবে, নিজের আদর্শ ও সিদ্ধান্তে ছিলেন বজ্রকঠিন।
এহেন মানুষটির দুই ছেলে ভর্তি হলো রাজধানীর নামকরা সেন্ট কলম্বাস স্কুলে । অভিজাত পরিবারের সন্তানরা পড়তো সেখানে, স্বভাবতই প্রায় সবাই আসতো নিজেদের গাড়িতে। এই দুই শ্রীমান কিন্তু যেতো ভাড়া করা টাঙ্গায়, তাদের যে গাড়ি নেই । সরকার থেকে তাদের বাবার জন্য একটা সবসময়ের গাড়ি থাকতো, কিন্তু তাদের একগুঁয়ে বাবাটি আবার পছন্দ করতেন না পারিবারিক কাজে সেটা ব্যবহার হোক।মাঝেসাজে বাবার নজর এড়িয়ে যেদিন দুভাই গাড়িতে আসতে পেতো সেদিন তাদের আনন্দ দেখে কে!
ক্রমে বাড়ির সবাই ওনাকে চেপে ধরলো একটা গাড়ি কেনার জন্য । ওনার তখন কাজের চাপে নাওয়া খাওয়ার সময় নেই, বাধ্য হয়ে এর জন্য সেক্রেটারি কে ভার দিলেন । তিনি আবার সব দেখেশুনে একটা ফিয়াট গাড়ি পছন্দ করলেন যার দাম বারো হাজার টাকা! এদিকে ওনার ব্যাঙ্কে তখন পড়ে আছে মাত্র সাত হাজার । অগত্যা পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের পার্লামেন্ট স্ট্রিট শাখা থেকে লোন নিলেন পাঁচ হাজার টাকা । কেনা হলো 1964 মডেলের ক্রিম কালার একটি ফিয়াট।
এলো 1966 সাল, জানুয়ারি মাসে জরুরী এক সরকারি কাজে ওনাকে বিদেশে যেতে হলো । তারপরেই এলো দুঃসংবাদ...... ১১ই জানুয়ারীর রাতে বিদেশের মাটিতেই অকস্মাৎ হলো তাঁর মৃত্যু।
আপাদমস্তক সজ্জন মানুষটির মৃত্যুও এক রহস্যে মোড়া । পরিবারের লোকজনদের হাজার অনুরোধেও তাঁর দেহের পোষ্ট মর্টেম করতে দেয়া হয়নি । খুঁজে পাওয়া যায়নি তার সঙ্গে যাওয়া পরিচারক কে, এমনকি তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এম কে চুঘ দিল্লির রাস্তায় লরী চাপা পড়ে মারা যান।
সেসব অন্য কাহিনী, এখন লোনের টাকা কে শোধ করবে ? যথাসময়ে PNB ওনার বিধবা স্ত্রীর কাছে নোটিশ পাঠালো । সেই স্বল্পশিক্ষিত মহিলা বা তাঁর পরিবার ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া। ভাগ্যিস একালের নীরব মোদি বা বিজয় মালিয়ার মতো দেহে বনেদী রক্ত ছিলোনা । আর তাই ধারের পরিমাণ ১১ হাজার ৪০০ কোটির বদলে মাত্র তিন হাজার টাকাও হলেও সেদিন তিনি পরলোকগত স্বামীর পেনশন থেকে তা পাই পাই শোধ করে দিয়েছিলেন।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours