অপর্ণা ভট্টাচার্য্য, লেখিকা ও সমাজকর্মী, আসানসোল:
যবে থেকে একজন ভারতীয় নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষিত হয়েছে তবে থেকে সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম। সমগ্র দেশবাসী গর্বিত হলেও উত্তেজিত নন বা অমার্জিত শব্দ উচ্চারণের আগে দশবার ভাবেন। আসলে তাদের মগজে তো বাঙালীর মতন রাশি রাশি বুদ্ধি ঠাসা নেই। প্রথমেই বলে নেই আমার এই লেখা রাজনৈতিক নেতাদের চাপান উতরের বাইরে। তাঁদের বক্তব্য অনুধাবণ করার মত উচ্চকোটির মেধা আমার নেই। একজন ছাপোষা মধ্যবিত্ত ভারতীয়র ভাবনা থেকে এই লেখা।
কেন বলুন তো আমরা নিজেদের প্রথমে ভারতীয় তারপর বাঙালী ভাবতে পারিনা? অভিজিৎ বিনায়কের বিনায়ক আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে গেল? মারাঠী মা বাঙালী বাবা। এত যে উন্নতমনস্ক জাতি বলে নিজেদের দাবি করি ,তবে কি আমরা পুরুষতান্ত্রিকতায় বিশ্বাসী? মারাঠী অর্থনীতিবিদ্ মায়ের অস্তিত্ব ভুলে গেলাম! নাকি ছেলেকে মানুষ করায় মায়ের কোন অবদান নেই। কেন আমরা বলতে পারিনা নোবেলজয়ী একজন ভারতীয়।
আমাদের দ্বিচারিতাটা খুব সুন্দর ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সমগ্র দেশের সামনে আমরা তুলে ধরলাম। একদিকে বাঙালী নোবেলজয়ী বলে গলা ফাটাচ্ছি অন্য দিকে পাঁক ঘেঁটে তাকে কত নীচে নামানো যায় সেই প্রতিযোগিতায় মেতেছি। সত্য সেলুকাস কি বিচিত্র এই জাতি।
আমাদের হাবভাবটা হল, আরে নোবেল তো প্রায়শ ই আসে বাংলায়, ওটা পেতে এমন কিছু পরিশ্রম করতে হয় না। তার চাইতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হল লোকটির ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে টানাটানি করা। চায়ের ভাঁড় নিয়ে রগরগে আসর জমানো যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় নোবেলজয়ীকে কাঁচা খিস্তি করে অপার্থিব আনন্দ লাভ করা যায়। আর অর্থনীতি, ওই বিষয়টা তো আমাদের গুলে খাওয়া।
আচ্ছা সোশ্যাল মিডিয়ায় কি বিষয়ের ওপর কত বছর গবেষণা তিনি করলেন, অথবা বারবার ক্ষেত্র সমীক্ষা করতে গিয়ে কত রকম কঠিন কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিলেন এই আলোচনা গুলো ভাইরাল হতে দেখেছি?
আমরা কিন্তু একবার ও নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবিনা। একবারো ভাবিনা এই নোংরা আলোচনায় ওদের কতটা ক্ষতি হচ্ছে। অবশ্য যে জাতি কবিগুরুকেও ছেড়ে কথা বলে নি তাদের কাছে এমন ব্যবহার স্বাভাবিক।।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours