ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ বর্ধামান স্টেশন থেকে ২৭ তিনি উত্তরে বড়বেলুন গ্রাম! বর্ধামান-কাটোয়া রাজ্য সড়ক ধরে বর্ধমান থেকে কাটোয়া যাওয়ার পথে বর্ধমান থেকে ভাতারের দুরত্ব ২০ কিঃমিঃ এখানে থেকে পুর্বদিকে ভাতার - মালডাঙা রাস্তা ধরে ৭ কিঃমিঃ অতিক্রম করলে বড়বেলুন গ্রাম ! বড় বেলুল গ্রামের ঐতিহ্য 'বড়মা' নামে খ্যাতা ১৪ হাত উচ্চতার কালীমা!
বড়বেলুন গ্রামের ভট্টাচার্য্য ( বন্দ্যোপাধ্যায়) পরিবার বড় মায়ের সেবাইত! ভট্টাচার্য্য পরিবারের মতে তাঁদের বড় মায়ের পুজার পত্তন হয় প্রায় আটশো বছর পূর্বে !তাঁদের উর্ধতন ৩২ তম পুরুষ সিদ্ধ সাধক তান্ত্রিক ভৃগুরাম স্বামীর কেতুগ্রাম থানার অট্টহাস ( বহুলা) সতী পীঠের নিকটস্হ গ্রাম থেকে স্বামী বড় বেলুন গ্রামে এসে একটি মাটির কালী প্রতিমা নির্মান করে পুজা অর্চ্চনা করতে থাকেন!
কথিত আছে, মা কালী ভৃগুরাম স্বামীকে স্বপ্নাদেশে ১৪ হাত উচ্চতার তাঁর প্রতিমা নির্মান করে পুজা করার জন্য! ভৃগুরাম স্বপ্নে যেমন মায়ের রূপ দেখেন সেইরূপ প্রতিমা নির্মান করিয়ে কার্তিক অমাবশ্যায় পুজা শুরু করেন!
জনশ্রুতি, সর্প দংশনে মৃত প্রায় এক বালিকাকে বড় মায়ের মন্দিরে আনা হ'লে ভৃগুরাম তন্ত্রবলে তাকে সুস্হ করে তোলে! পরে দৈব ইচ্ছায় সেই বালিকাকে বিবাহ করেন ! তাঁর গর্ভে তিন সন্তানের জন্ম হয়! তাঁদের বংশধরাই বর্তমানে বড় মায়ের সেবাইত! এঁদের মূল পদবী বন্দ্যোপাধায়! রাজ অনুগ্রহে ' ভট্টাচার্য্য' পদবী লাভ করেন!
বড়বেলুনের মা কালী বড়মা নামে 'খ্যাতা ' হওয়ার কারন গ্রামে আরো কয়েকটি কালীপুজা হয় কিন্তু বড়মার প্রতিষ্ঠা হয়েছে আট'শ বছর পূর্বে এবং বিশাল উচ্চতার ( ১৪ হাত বা ২১ ফুট)!
বড়মার পুজার কয়েকটি ব্যতিক্রমী নিয়ম আছে! পুজা হয় নিশিভোরে! পুজায় আরতি এবং হোম হয়না! এই বংশের প্রথম পুরুষ ভৃগুরামের তিন সন্তানের বংশধরদের বয়ঃজ্যেষ্ঠদের পুজায় বসতে হবে! কেউ অসুস্হ বা অপারগ হলে পরের যিনি বয়ঃজ্যেষ্ঠ তাঁকে পুজায় বসতে হবে! বর্তমানে ভট্টাচার্য্য পরিবারের বয়ঃজ্যেষ্ঠ কৃপাসিন্ধু, তৃপ্তিনাথ ও কালীকৃষ্ন! পুজার শেযে ছাগ বলি দেওয়ার নিয়ম প্রথমে সেবাইতদের প্রদত্ত ছাগ বলি দেওয়া হয়, এর পর মৃৎশিল্পীর দেওয়া ছাগ বলির পর বংশের দৌহিত্রদের পক্ষ থেকে প্রদত্ত ছাগ বলি হয়!
পরদিন অর্থাৎ পতিপদের দিন পুনরায় পুজা ও,ছাগ বলি হয়! থাকে পংতিভোজের ব্যবস্হা! ভাতৃদ্বিতীয়ায় রাত্রে প্রতিমা নিরঞ্জন করার পুর্বে গ্রাম প্রদক্ষিন করা হয়!
ভাতারের বড় বেলুনের বড়মার পুজা উপলক্ষে হাজার হাজার ভক্ত সমাগম হয়! ভক্তদের বিশ্বাস ' বড়মা ' খুব জাগ্রতা দেবী! তিনি সকল ভক্তের মনস্কামনা পুর্ন করেন! তাই কালীপুজো থেকে ভাইফোঁটা তিন দিন বড়বেলুনে বড়মার পুজোকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় এক অভাবনীয় উন্মাদনা!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours