সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুর:
হাসলে শরীর ভালো থাকে। হাসতে হবে নিয়ম মেনে। হাসবেন কারন হার্ট, লাঙ সব তড়তড়িয়ে চলবে।তাই হাসির ইমোজিতে সোসাল মিডিয়া ঠাসা।
আছে হাসি হাসি সেল্ফির ভিড়।যুগলের আনন্দ মাখা হাসি মুখের প্রোফাইল পিক।
তাই বিষয়টা ভীষন জরুরী অত্যাবশ্যক জিনিস বা এসেনসিয়াল কমোডিটি।
তাই দারিদ্র্যতার নিরিখে দেশের নিম্নগামী সূচক তাতে পেট ফোলা ব্যাঙের বিকট হাসি।
নোবেল জয়ী অর্থনীতিকের সম্পর্কে অন্যের বোকা পোষ্টে পেট ফাটানো ইমোজি।
সম্প্রতি এক দুর্ঘটনার ছবিতে আমি হাসির সাইন দেখেছি।
তাই ভবিষ্যতে এই হাসিই প্লাস্টিকের মত বহুল ব্যবহারে ব্যান্ড হবার সমূহ সম্ভাবনা।
তাই ব্যক্তিগত কিছু হাসি নিয়ে এই প্যাচালপিরন।
আমার হাসির ইতিহাস খুব চমকপ্রদ।ছেলেবেলায় বিস্তর মোটা ছিলাম সঙ্গে গালভরা হাসি।তাই হাসতে হাসতে এরতার কোলে চেপে মায়ের কষ্ট বেশ লাঘব করেছি। আবার তিনমাস বয়সে এক অবিবাহিত কাকুর কোলে চেপে তার বিয়ের সম্বন্ধ ও ভেঙেছি।তিনি আমাকে নাকি আমতা গুলু গুলু বললেই আমি তার কোলে চেপে খুশ।তা আমার মতো মধ্য চল্লিশের প্রায় সকলের শৈশবের গল্প প্রায় এক।
তা ,একটু বড় হলে হাসির প্রকার বদলালো।বকুনি খেয়ে ও হাসি,অকারণে হাসি।তার জন্যে মার।তবু হাসি।হাসি আর থামেনা। খুন্তি হাতে তেড়ে আসা জননী।চুপ করবি। তা দেখে ,হাসতে হাসতে বাথরুমে ছুট।
এই দুই হাসিকে নির্মল বলা যেতে পারে। বয়স বেড়ে হাসি এসে পরলো রাস্তায়।সাইকেল নিয়ে এ ওর গায়ে পরে যাওয়া।নিন্দুকেরা বললো ঢলানী।আসলে হাসিও বয়োসন্ধি।
দুই মিনিট নিরবতা পালনের লাইনে দমচাপা হাসি।খিকখিক,খুকখুক,হাহা,হিহিতে কলেজ পার।
জীবনে নতুন অধ্যায়ে,প্রথম হেসে , বৌটা বড্ড বেহায়া।খালি হাসে।
চাপা হাসি মাপা কান্না কথাটা এই প্রথম একটু বোঝার চেষ্টায় ঐ খ্যাকখ্যাক হাসি লিপস্টিকের আড়ালে চাপা পরতে লাগলো।
হাসিতে ভ্যারাইটি এল। শ্বশুর ভাসুর হাসি,ননদ দেবর হাসি,শাশুড়ি গোত্রীয়দের জন্যে হাসির শ্রেণী বিভাগ।সাথে নতুন ডিগ্রি, "ঘর জ্বালানি পর ভোলানী"।
পুরোনো বন্ধুদের দেখলেই না নিয়মের বেড়া সরে যায়।বুকের মধ্যে উথাল পাথাল তবু সেই প্রিয় বন্ধু ঠিক বুঝেই যেত কি হয়েছে তোর
তাকে বলা হয়নি ,আগের মত হাসতে চাই।
চাকরী জীবনে কিছু দুরুহ হাসির আড়ালে ছুড়ির আঘাত হাসির প্রাণনাশের ক্ষমতা অনেকেই মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন।
ফোকলা হাসি থেকে দেতো হাসির যে জার্নিটা আমরা পার করে জীবনের প্রায় সত্তোর ভাগ পার করে এসে, একটা কথা বারবার ফিল করেছি সরল নিস্বার্থ হাসির মূল্য পাওয়া যায়না। তবে মূল্যহীন ভেবে এই হাসি হাসবোনা ভাবাটা ও বোকামি।
তবে ,প্রতিনিয়ত হাসির অবক্ষয় হচ্ছে।বিপদজনক ভাবে বেড়ে চলেছে মেকি হাসির জঞ্জাল।
"চোখে জল মুখে হাসি" একটা বোকা কথা।চোখে জল।তুই কি চাড্ডি মাইরি।
শা... লা দ্যাখ ঢ্যাম... নামো করছে।চোখ জল হি হি।
হাসির বিপরীতে কান্না।ধুস।ওতো কাজল, লাইনার মেকআপ ঘেটে যাবার ভয়ে কবেই দেশান্তরী।
আমরা সবাই হাসছি দেখো, হাসছি মোরা, হাসছি দেখো সব মেকি।
তাই এখন থেকে হাসি কান্নার ব্যালেন্স না করলে মানব জীবনের ইকোসিস্টেম অচিরেই ধ্বংসের কানাগলিতে মুখ থুবড়ে পরবে বলার আপেক্ষা রাখে না।
তাই আজকের বস্তা হাতে রাষ্ট্র নায়ক তখন হয়তো দু ফোটা চোখের জলের জন্যে বিশ্বের দরবারে হাত পাতবেন।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours