জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:
জ্ঞান যেহেতু সর্বশিক্ষা এবং ইতিহাসে সৃজনের সম্মিলিত নির্য্যাসের প্রতিরুপ - সেই সুত্রে সভ্যতাকেও বলা যাবে, 'জ্ঞান'- 'সৃজনের' দ্বৈরথে আবর্তনের এক চিরন্তনী প্রতিরুপ
------ সেই অর্থে গতির সর্বোচ্চ রুপ। সেজন্যে ইতিহাস একে ভাংগতে পারে, গতিপথ বিলম্বিত করতে মানুষকে কিছু সময় পর্য্যন্ত অজ্ঞানতার অন্ধকারে ঘুরপাক খাওয়তে পারে,
------- অনুরুপভাবে 'সৃজনীর' অভিমুখকে রুদ্ধ করে দিয়ে জ্ঞানের জয়যাত্রাকে রুদ্ধ করতে পারে না। পরন্তু ইতিহাসের কোন কালে, ইতিহাসকেই ছুটি নিতে হয়। ইতিহাসের এই 'ছূটী'টাকেই 'দর্শন' সভ্যতার কাল-গ্রহন মুক্তি বলে চিহ্নিত করেছে। এই 'মুক্তি টাকেই রবীন্দ্রনাথ 'চিত্ত মুক্তি' বলে উল্লেখ করেছেন, মার্ক্স বলেছেন, 'সাম্য বা মনুষ্য জাতির বাধা-বন্ধন হীন চিন্তনমুক্তি।
ইতিহাসের যারা অবচেতন কিংবা সচেতন নিয়ন্ত্রক, তারা প্রথমকালে অজ্ঞেয়তায় অতি-অধিনতার কারনে , বিশ্বাস বসেই, জ্ঞানের অভিমুখকে বন্ধ করতে চেয়েছে বাবার। জ্ঞান এবং সৃজনের সেতুবন্ধনে বাধা পেয়েছে বার বার। কিন্তু প্রতিবার জ্ঞান এবং সৃজনের যুগলবন্দিই জয়যুক্ত হয়েছে।
------ এইভাবে যে বিশ্বাস ছিলো অজ্ঞেয়তার কারনে, সেখানে এই 'বাধা'টাই ভয়ংকর হয়ে উঠতে লাগল, যখন 'নিয়ন্ত্রকদের' ব্যক্তিগত কিংবা সমস্টিগত স্বার্থই বিশ্বাসকে নিয়ন্ত্র করতে শুরু করলো। সেই বাধা ক্রমে ভয়ংকর হয়েছে, যখন স্বার্থবোভোগী লোক, উল্লেখিত যুগলবন্দিকে আটকে দিতে সব রকম গবেষনা তো বটেই, মানুষের ভাবপ্রবাহকেই প্রোদুষিত করার সব সুচতুর আয়োজন শুরু হোল। সেই আয়োজনে, ধর্যাজক সম্প্রদায়ের জন্ম এবং রাজার অসি শক্তির ডগায় ধর্মশক্তিকে জুরে দিয়ে ------ জ্ঞানের প্রতিরোধে গায়ের জোরের সাথে, এই জোরের সাথে একটা ভ্রমাত্মক আত্মিকতা জূরে দেওয়ার প্রকৃয়া শুরু হয়েছিলো। --------- সেই কারনেই দেখা যাবে, বিশ্বে যখন অবিমিশ্র দাসত্ব বিরাজমান ছিলো সে সময়ে এবং ইউরোপের সেই সব অঞ্চলে, যেখানে তুল্যমূল্যে মানুষের অধিকারে স্বিকৃ্তি পেয়েছিলো, সেসব অঞ্চল থেকেই দর্শনের আলোক রশ্মি বিশ্বকে যথেষ্টাংসে প্লাবিত করার সুযোগ পেয়েছিলো।
------ সে সময় কালে দর্শনকে অনুসরন করে, আনুমানের সাধনা বিশ্বকে যতটুকু খুজে পেয়েছিল, সেই পাওয়াকে যতটুকু যুক্তিবাদে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছিলো, অনুমান নির্ভর হলেও, সেগুলি ছিলো যুগান্তকারী এবং বিশ্বকে বিজ্ঞানের কাছাকাছি পৌছে দিয়েছিলো।
উল্লেখিত বিচারে,
যদি সমগ্র মধ্যযূগীয় ইতিহাসে কার্য্যতঃ কিছুই না পাওয়া গিয়ে থাকে, বরং সে কালে যদি ইতিহাসের পূর্ববর্তী কালের আবিস্কারগুলিকে পিছিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে, তবে তার কারনটা ছিলো খুব সোজা। ইতিহাসের সব থেকে লম্বা কাল যদি, মধ্যযুগ হয় এবং মধ্যযুগে যদি, জ্যোর্তিবিদ্যার (astronomy) কল্যানে, আরব দেশে জিয়োমেট্রি এবং অংকশাস্ত্রের কিছু কিছু আবিস্কার হয়েছিলো মাত্র। অবস্য সেগুলিিই পরবর্তী রেঁনেশার কালে,
------ বিজ্ঞানের বিপুল দিগবিজয়ের কারন হয়েছিল।
ইতিহাস এবং জ্ঞানর সংঘাতের ইতিহাসে, যদি জবাব খোজার চেষ্টা হয়, কেন মধ্যযুগকে অন্ধকারের কাল বলে এবং সেই অন্ধকারকে আলোকিত করতে গিয়ে, রেনেশারঁ কালেও, চার্চের বিচারে গ্যালিলিও সমেত,
------ অনেক জ্ঞানর স্তম্ভের উৎপাটন ঘটে থাকে, তবে অর্থটি স্পষ্ট। মধ্যযুগেই, 'অজ্ঞেয়তার বিশ্বাসের' সাথে 'স্বার্থের বিশ্বাস' এবং এই উভয় বিশ্বাসকে, মন্দির এবং গির্জাকে দিয়ে গায়ের জোরে মানিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা সেই কালেই ঘটেছিলো। সেজন্যেই রাজতন্ত্র বা সামন্ততন্ত্রের কালকেই সভ্যতার সর্ববৃহৎ অন্ধকারের কাল বলা হয়।
আমাদের দেশেও, প্রাচীন কালের অনুমান ধর্মী জ্ঞানকে এগিয়ে দেওয়ার অক্ষমতা থেকেই। এই অক্ষমতাই যখন দেশ বাইরের আক্রমনের মুখে ধ্বসে পরতে লাগলো
----- দেশকে বিজ্ঞানের অভিমুখে উন্মুক্ত করার কোন চেষ্টা না করেই রাজতন্ত্র, ব্রাহ্মন্নবাদের আশ্রয় নিলো, বর্ণাশ্রমের উন্মুক্তি ঘটিয়ে, দেশকে অমবস্যা থেকেও আরো ঘোরতর অন্ধকারে ঢেকে দেওয়ার ব্যবস্থা হোল।
---- মধ্যকালে ইউরোপে জ্ঞানের অগ্রগতি এবং মনুষ্য সৃজনকে আটকে দিতে সভ্যতাকে যে কী হিংস্ত্রতায় ডুবিয়ে দিয়েছে , সেসব কথা ইতিহাসে উন্মুক্ত হয়েছে। ভারতে সেখানে, রাজতন্ত্র এবং ব্রাহ্মনত্বের কারনে, কার্য্যত পংগু। সেখানে মানুষের নড়াচড়া করার ক্ষমতাই ছিলো না। তাই যা ঘটেছে, পুরো একমুখীন এবং ভয়ংকর।
------ খুব সোজা। ব্রাহ্মন্যবাদের চার বর্ণ ব্যবস্থা এবং ক্রমে তার সহস্র সহস্র শাখা-প্রশাখায় বিভাজন এবং সেখান থেকে মেয়েদের, সাধারনভাবে সমাজের ভোগসত্বা হিসেবে বিবেচনা ইত্যাদি হয়তো বা সমাজের কোন কোন প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা থেকেই শুরু এবং তা গড়াতে গড়াতে এক ভয়ংকর অবস্থার নির্মান হয়েছে।
------ সেখেনে সমাজ যেমনভাবে ;'ভোগী' এবং 'ভোগ্য' সম্পর্কে বিভাজিত হয়েছে, সেখানে উভয় দিকই কিন্তু এতসব কে 'প্রাকৃ্তি' নিয়ম হিসেবে মেনেছেন, কাল থেকে কালান্তরে। জল পড়া, আর পাতা নড়া যেমন প্রকৃ্তিগত দিক,
------ তেমনি উভয় দিকই মেনেছে, 'প্রজাকে' নতুন 'জুতো' দিয়ে পিটিয়ে জুতো ছিড়ে যাওয়ার পরেও, প্রজার কাছ থেকে 'জুতোর' দাম না নেওয়াতে প্রজা যেমন গদগদ আনন্দে ভরপুর, তেমনি, রাজা মেনেছেন, জূতো দিয়ে পিটিয়ে, ছিড়ে যাওয়া জুতোর দাম আদায় করাটা 'রাজার অধিকার'।
---- এইভাবে, মানুষের চিন্তা বা ভাবজগতকেই,আত্মসর্বস্বতা নামক বস্তুটিকে অকেজো করে দিয়ে, মানুষকে প্রকৃতির বিবর্তন ধারার জানোয়ারীর প্রবৃত্তির নির্জীবতাতেই ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো । ইতিহাসে একটু তলিয়ে দেখলেই দেখা যাবে,
---- নারীদের উপরে প্রথম অধিকার যে রাজাদের সে স্বিকৃ্তি ব্রহ্মন্যবাদ দিয়েছিলো। বছরে একবার করে এক এক রাজার প্রাসাদে, বালিকা কন্যার বালিকতা বিনাসের প্রতিযোগীতার ফলাফল ঘোষিত হোত। রাজারা কন্যার কান থেকে প্রতিবার মাকড়ি তুলে নিতেন। সেই প্রতিযোগীতার দিনে, সোনার মাপ ধরে, প্রথম - দ্বিতীয় প্রতিযোগীকে পুরস্কৃত করা হোত।
দর্শন ও ইতিহাসের ছাত্রদের মধ্যে,
যত সময় এই বিশ্বাস বদ্ধমুল না হবে, যে ইতিহাসের প্রতিকৃয়ার সাথে জ্ঞান এবং সৃজনীর সংঘাতে, মানুষ যত দ্রুততার সাথে, পরেরটির পাশে এসে দাড়াবেন, ততদ্রুত ভারত কাল-রাহু থেকে মুক্তি পাবে
----- সেই প্রত্যয়কে যত দ্রুত কারখানায়, খনিমুখে, বন্দরে এবং অফিস গেটে, একটা আবেগ এবং আবেগকে বিদ্রোহের স্তরে নিয়ে যেতে পারবেন, তত দ্রুততার সাথে
----- জ্ঞান এবং সৃজনীর পক্ষে, মানুষের প্রতি ভালোবাসার পক্ষে এবং শেষ পর্য্যন্ত সাম্যের পক্ষে মানুষকে এক করতে পারবে,
------ তেমনভাবেই সাম্য এবং জ্ঞান একাত্মতার বন্ধনে সমাহিত হতে থাকবে। বুঝতে পারবে, প্রায় তিন' শ বছর ধরে, ইউরোপে যে সংঘাত চলেছে, তা মুলতঃ রাজতন্ত্রের উপরে 'জ্ঞানের' প্রতিষ্ঠার কারনে। ইতিহাসে এই সংগ্রামই 'রেনেশার' জন্য সংগ্রাম বলে খ্যাত।
এখানেই বুঝতে হবে কিভাবে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন,
নিজের অজান্তেই -
জ্ঞান ও সৃজনের সেতুবন্ধনের বিপরীত পথেই হেটে চলেছেন।
ধরে ধরে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, অন্ততঃ নব্বই ভাগ
ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী জবাব দেবেন
----- চিন্তনের অধিকার নয়, পেটের ক্ষুদাই চিন্তনকে নিয়ন্ত্রন করে। কেন, জ্ঞান ও সৃজনের কোনও ভূমিকাই নেই।
এইভাবে প্রতি নিয়ত, বিপ্লবের নাম করেও, আমরা ট্রেড ইউনিয়ন নেতারাও মনের দিক থেকে, ব্যবস্থার কাজটা সেরে দিচ্ছি।
তাই বার বার সহস্ত্রবার বোঝানোর চেষ্টা করছি, অন্ততঃ অষ্টাবিংশ শতাব্দির ইউরোপে ফিরে যেতেও,
ভারতীয় শ্রমিক আন্দোলনকে কঠিন মূল্য দিতে হবে। (ক্রমশ)
জ্ঞান যেহেতু সর্বশিক্ষা এবং ইতিহাসে সৃজনের সম্মিলিত নির্য্যাসের প্রতিরুপ - সেই সুত্রে সভ্যতাকেও বলা যাবে, 'জ্ঞান'- 'সৃজনের' দ্বৈরথে আবর্তনের এক চিরন্তনী প্রতিরুপ
------ সেই অর্থে গতির সর্বোচ্চ রুপ। সেজন্যে ইতিহাস একে ভাংগতে পারে, গতিপথ বিলম্বিত করতে মানুষকে কিছু সময় পর্য্যন্ত অজ্ঞানতার অন্ধকারে ঘুরপাক খাওয়তে পারে,
------- অনুরুপভাবে 'সৃজনীর' অভিমুখকে রুদ্ধ করে দিয়ে জ্ঞানের জয়যাত্রাকে রুদ্ধ করতে পারে না। পরন্তু ইতিহাসের কোন কালে, ইতিহাসকেই ছুটি নিতে হয়। ইতিহাসের এই 'ছূটী'টাকেই 'দর্শন' সভ্যতার কাল-গ্রহন মুক্তি বলে চিহ্নিত করেছে। এই 'মুক্তি টাকেই রবীন্দ্রনাথ 'চিত্ত মুক্তি' বলে উল্লেখ করেছেন, মার্ক্স বলেছেন, 'সাম্য বা মনুষ্য জাতির বাধা-বন্ধন হীন চিন্তনমুক্তি।
ইতিহাসের যারা অবচেতন কিংবা সচেতন নিয়ন্ত্রক, তারা প্রথমকালে অজ্ঞেয়তায় অতি-অধিনতার কারনে , বিশ্বাস বসেই, জ্ঞানের অভিমুখকে বন্ধ করতে চেয়েছে বাবার। জ্ঞান এবং সৃজনের সেতুবন্ধনে বাধা পেয়েছে বার বার। কিন্তু প্রতিবার জ্ঞান এবং সৃজনের যুগলবন্দিই জয়যুক্ত হয়েছে।
------ এইভাবে যে বিশ্বাস ছিলো অজ্ঞেয়তার কারনে, সেখানে এই 'বাধা'টাই ভয়ংকর হয়ে উঠতে লাগল, যখন 'নিয়ন্ত্রকদের' ব্যক্তিগত কিংবা সমস্টিগত স্বার্থই বিশ্বাসকে নিয়ন্ত্র করতে শুরু করলো। সেই বাধা ক্রমে ভয়ংকর হয়েছে, যখন স্বার্থবোভোগী লোক, উল্লেখিত যুগলবন্দিকে আটকে দিতে সব রকম গবেষনা তো বটেই, মানুষের ভাবপ্রবাহকেই প্রোদুষিত করার সব সুচতুর আয়োজন শুরু হোল। সেই আয়োজনে, ধর্যাজক সম্প্রদায়ের জন্ম এবং রাজার অসি শক্তির ডগায় ধর্মশক্তিকে জুরে দিয়ে ------ জ্ঞানের প্রতিরোধে গায়ের জোরের সাথে, এই জোরের সাথে একটা ভ্রমাত্মক আত্মিকতা জূরে দেওয়ার প্রকৃয়া শুরু হয়েছিলো। --------- সেই কারনেই দেখা যাবে, বিশ্বে যখন অবিমিশ্র দাসত্ব বিরাজমান ছিলো সে সময়ে এবং ইউরোপের সেই সব অঞ্চলে, যেখানে তুল্যমূল্যে মানুষের অধিকারে স্বিকৃ্তি পেয়েছিলো, সেসব অঞ্চল থেকেই দর্শনের আলোক রশ্মি বিশ্বকে যথেষ্টাংসে প্লাবিত করার সুযোগ পেয়েছিলো।
------ সে সময় কালে দর্শনকে অনুসরন করে, আনুমানের সাধনা বিশ্বকে যতটুকু খুজে পেয়েছিল, সেই পাওয়াকে যতটুকু যুক্তিবাদে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছিলো, অনুমান নির্ভর হলেও, সেগুলি ছিলো যুগান্তকারী এবং বিশ্বকে বিজ্ঞানের কাছাকাছি পৌছে দিয়েছিলো।
উল্লেখিত বিচারে,
যদি সমগ্র মধ্যযূগীয় ইতিহাসে কার্য্যতঃ কিছুই না পাওয়া গিয়ে থাকে, বরং সে কালে যদি ইতিহাসের পূর্ববর্তী কালের আবিস্কারগুলিকে পিছিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে, তবে তার কারনটা ছিলো খুব সোজা। ইতিহাসের সব থেকে লম্বা কাল যদি, মধ্যযুগ হয় এবং মধ্যযুগে যদি, জ্যোর্তিবিদ্যার (astronomy) কল্যানে, আরব দেশে জিয়োমেট্রি এবং অংকশাস্ত্রের কিছু কিছু আবিস্কার হয়েছিলো মাত্র। অবস্য সেগুলিিই পরবর্তী রেঁনেশার কালে,
------ বিজ্ঞানের বিপুল দিগবিজয়ের কারন হয়েছিল।
ইতিহাস এবং জ্ঞানর সংঘাতের ইতিহাসে, যদি জবাব খোজার চেষ্টা হয়, কেন মধ্যযুগকে অন্ধকারের কাল বলে এবং সেই অন্ধকারকে আলোকিত করতে গিয়ে, রেনেশারঁ কালেও, চার্চের বিচারে গ্যালিলিও সমেত,
------ অনেক জ্ঞানর স্তম্ভের উৎপাটন ঘটে থাকে, তবে অর্থটি স্পষ্ট। মধ্যযুগেই, 'অজ্ঞেয়তার বিশ্বাসের' সাথে 'স্বার্থের বিশ্বাস' এবং এই উভয় বিশ্বাসকে, মন্দির এবং গির্জাকে দিয়ে গায়ের জোরে মানিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা সেই কালেই ঘটেছিলো। সেজন্যেই রাজতন্ত্র বা সামন্ততন্ত্রের কালকেই সভ্যতার সর্ববৃহৎ অন্ধকারের কাল বলা হয়।
আমাদের দেশেও, প্রাচীন কালের অনুমান ধর্মী জ্ঞানকে এগিয়ে দেওয়ার অক্ষমতা থেকেই। এই অক্ষমতাই যখন দেশ বাইরের আক্রমনের মুখে ধ্বসে পরতে লাগলো
----- দেশকে বিজ্ঞানের অভিমুখে উন্মুক্ত করার কোন চেষ্টা না করেই রাজতন্ত্র, ব্রাহ্মন্নবাদের আশ্রয় নিলো, বর্ণাশ্রমের উন্মুক্তি ঘটিয়ে, দেশকে অমবস্যা থেকেও আরো ঘোরতর অন্ধকারে ঢেকে দেওয়ার ব্যবস্থা হোল।
---- মধ্যকালে ইউরোপে জ্ঞানের অগ্রগতি এবং মনুষ্য সৃজনকে আটকে দিতে সভ্যতাকে যে কী হিংস্ত্রতায় ডুবিয়ে দিয়েছে , সেসব কথা ইতিহাসে উন্মুক্ত হয়েছে। ভারতে সেখানে, রাজতন্ত্র এবং ব্রাহ্মনত্বের কারনে, কার্য্যত পংগু। সেখানে মানুষের নড়াচড়া করার ক্ষমতাই ছিলো না। তাই যা ঘটেছে, পুরো একমুখীন এবং ভয়ংকর।
------ খুব সোজা। ব্রাহ্মন্যবাদের চার বর্ণ ব্যবস্থা এবং ক্রমে তার সহস্র সহস্র শাখা-প্রশাখায় বিভাজন এবং সেখান থেকে মেয়েদের, সাধারনভাবে সমাজের ভোগসত্বা হিসেবে বিবেচনা ইত্যাদি হয়তো বা সমাজের কোন কোন প্রাথমিক প্রয়োজনীয়তা থেকেই শুরু এবং তা গড়াতে গড়াতে এক ভয়ংকর অবস্থার নির্মান হয়েছে।
------ সেখেনে সমাজ যেমনভাবে ;'ভোগী' এবং 'ভোগ্য' সম্পর্কে বিভাজিত হয়েছে, সেখানে উভয় দিকই কিন্তু এতসব কে 'প্রাকৃ্তি' নিয়ম হিসেবে মেনেছেন, কাল থেকে কালান্তরে। জল পড়া, আর পাতা নড়া যেমন প্রকৃ্তিগত দিক,
------ তেমনি উভয় দিকই মেনেছে, 'প্রজাকে' নতুন 'জুতো' দিয়ে পিটিয়ে জুতো ছিড়ে যাওয়ার পরেও, প্রজার কাছ থেকে 'জুতোর' দাম না নেওয়াতে প্রজা যেমন গদগদ আনন্দে ভরপুর, তেমনি, রাজা মেনেছেন, জূতো দিয়ে পিটিয়ে, ছিড়ে যাওয়া জুতোর দাম আদায় করাটা 'রাজার অধিকার'।
---- এইভাবে, মানুষের চিন্তা বা ভাবজগতকেই,আত্মসর্বস্বতা নামক বস্তুটিকে অকেজো করে দিয়ে, মানুষকে প্রকৃতির বিবর্তন ধারার জানোয়ারীর প্রবৃত্তির নির্জীবতাতেই ফিরিয়ে আনা হয়েছিলো । ইতিহাসে একটু তলিয়ে দেখলেই দেখা যাবে,
---- নারীদের উপরে প্রথম অধিকার যে রাজাদের সে স্বিকৃ্তি ব্রহ্মন্যবাদ দিয়েছিলো। বছরে একবার করে এক এক রাজার প্রাসাদে, বালিকা কন্যার বালিকতা বিনাসের প্রতিযোগীতার ফলাফল ঘোষিত হোত। রাজারা কন্যার কান থেকে প্রতিবার মাকড়ি তুলে নিতেন। সেই প্রতিযোগীতার দিনে, সোনার মাপ ধরে, প্রথম - দ্বিতীয় প্রতিযোগীকে পুরস্কৃত করা হোত।
দর্শন ও ইতিহাসের ছাত্রদের মধ্যে,
যত সময় এই বিশ্বাস বদ্ধমুল না হবে, যে ইতিহাসের প্রতিকৃয়ার সাথে জ্ঞান এবং সৃজনীর সংঘাতে, মানুষ যত দ্রুততার সাথে, পরেরটির পাশে এসে দাড়াবেন, ততদ্রুত ভারত কাল-রাহু থেকে মুক্তি পাবে
----- সেই প্রত্যয়কে যত দ্রুত কারখানায়, খনিমুখে, বন্দরে এবং অফিস গেটে, একটা আবেগ এবং আবেগকে বিদ্রোহের স্তরে নিয়ে যেতে পারবেন, তত দ্রুততার সাথে
----- জ্ঞান এবং সৃজনীর পক্ষে, মানুষের প্রতি ভালোবাসার পক্ষে এবং শেষ পর্য্যন্ত সাম্যের পক্ষে মানুষকে এক করতে পারবে,
------ তেমনভাবেই সাম্য এবং জ্ঞান একাত্মতার বন্ধনে সমাহিত হতে থাকবে। বুঝতে পারবে, প্রায় তিন' শ বছর ধরে, ইউরোপে যে সংঘাত চলেছে, তা মুলতঃ রাজতন্ত্রের উপরে 'জ্ঞানের' প্রতিষ্ঠার কারনে। ইতিহাসে এই সংগ্রামই 'রেনেশার' জন্য সংগ্রাম বলে খ্যাত।
এখানেই বুঝতে হবে কিভাবে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন,
নিজের অজান্তেই -
জ্ঞান ও সৃজনের সেতুবন্ধনের বিপরীত পথেই হেটে চলেছেন।
ধরে ধরে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, অন্ততঃ নব্বই ভাগ
ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী জবাব দেবেন
----- চিন্তনের অধিকার নয়, পেটের ক্ষুদাই চিন্তনকে নিয়ন্ত্রন করে। কেন, জ্ঞান ও সৃজনের কোনও ভূমিকাই নেই।
এইভাবে প্রতি নিয়ত, বিপ্লবের নাম করেও, আমরা ট্রেড ইউনিয়ন নেতারাও মনের দিক থেকে, ব্যবস্থার কাজটা সেরে দিচ্ছি।
তাই বার বার সহস্ত্রবার বোঝানোর চেষ্টা করছি, অন্ততঃ অষ্টাবিংশ শতাব্দির ইউরোপে ফিরে যেতেও,
ভারতীয় শ্রমিক আন্দোলনকে কঠিন মূল্য দিতে হবে। (ক্রমশ)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours