Ekattorer basonti akhono crush
শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

টাইগার শ্রুফ ও ঋৃতিক রৌশানের "ওয়ার" মুভিটি; ৪ শ ৫ কোটি ৬৫ লাখা রুপি আয় করে ফেলেছে ১৩ দিনে! রেকর্ডের উপর রেকর্ড করে চলছে। সম্ভবত টাইগার শ্রুফের অগ্রগতি ও অবস্থান ধীরে ধীরে একটি শক্ত আসনে পৌঁছে যাচ্ছে।

না, আজ 'ওয়ার'  মুভি অথবা ঋৃত্তিক ও টাইগারকে নিয়ো কথা বলবো না।

১৬ অক্টোবর, হেমা মালিনির ৭১তম জন্মদিন আজ। হেমা মালিনি শব্দটি উচ্চারন করতেই ড্রীম গার্ল শব্দটিও চলে আসে। তিনি ড্রীম গার্ল তা শুনেছি। কেন তিনি ড্রীমগার্ল তা শুনেনি কখনো। বাংলাদেশের একটি মফস্বল শহরে থাকলেও কোন হিন্দী ছবি দেখা বাদ থাকতো না। সে সময়ে ভিসিআারের কল্যানে কোন টিনের  চৌচালা ঘরে আমরা ; ভারতীয়দের চেয়ে সস্তায় টিকিট কেটে যে কোন হিন্দি ছবি দেখে ফেলতাম! যদিও তা ছিলো আইনত অবৈধ। আমরা কিছু দর্শক ঢাকায় কি ছবি মুক্তি পেলো তা নিয়ে মাথা ঘামাতাম না। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম  কখন বলিউডের ছবিটা ঢাকায় আসার সাথে সাথে, জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলায় বসে দেখবো!

তা হলে শোনা যাক কেন হেমা মালিনি  ড্রীম গার্ল। হেমা মালিনি এতই সুন্দর ছিলেন যে দশম শ্রেনীতে পড়ার সময়ই সিনেমাতে অভিনয় করার অফার আসতে থাকে। যখন তার কেবল প্রেমের চিঠি  আসার কথা। অথচ  একবার নয়, দুবার নয়, বারবার সিনেমাতে অভিনয় করার প্রস্তাব আসতে থাকে। বলা যায় তার রুপের কারনেই তাকে পড়া লেখা ছেড়ে দিতে হয়েছে। কেন না দশম শ্রেনী থেকেই তার অভিনয় জীবন শুরু। এবং পড়ালেখা স্থগিত। হেমা মালিনির সৌন্দর্য্য দেখে সে সময়ের অন্যতম অভিনেতারাও তাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখা শুরু করে! তাহলে তার পর্দার দর্শকদের হৃদয়ের কি হাল তা সহজেই অনুমেয়। ড্রীমগার্ল বলে কথা।

দুজন বিবাহিত ও একজন অবিবাহিত নায়কের সাথে ছিলো তার প্রেম! সঞ্জয় কুমার ও ধর্মেন্দ্র ছিলেন অবিবাহিত আর জিতেন্দ্র অবিবাহিত। শোলের 'ঠাকুরের" কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। সেই ঠাকুরই, সঞ্জয় কুমার। বিখ্যাত 'শোলে" সিনেমায়, একবারও ঠাকুরের ( সঞ্জয় কুমার) সাথে বাসন্তির (হেমা মালিনি) দেখা হয় না, কথা হয় না। বিষয়টি কি ভাবনার নয়? অথচ জয়,ও ভীরুকে ঠাকুরের ঘরে নিয়ে আসে বাসন্তিই।  তাহলে খোলাসা করা যাক কেন 'বাসন্তি'  রুপি হেমা মালিনির সাথে 'ঠাকুর' রুপি সঞ্জয় কুমারের সাথে একটি দৃশ্যও নেই!

পর্দায় নয় বাস্তবে প্রথমে, সঞ্জয় কুমারের সাথে হেমা মালিনির সাথে মন দেয়া নেয়া চলছিলো। হেমা মালিনীর মা তাতে বাধ সাধেন। যে কারনে, সঞ্জয় কুমার হেমা মালিনির মায়ের কাছে হেমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু এতে হেমার মা বিরক্ত হন এবং বলে দেন, নিজেদের আত্মীয়র মধ্যেই হেমার বিয়ে ঠিক করা আছে। মায়ের এমন কথা শুনে ছিলো হেমা বিগরে যায়। কেন না, হেমাও সঞ্জয় কুমারকে পছন্দ করতেন। কিন্তু হেমার মা এমন কি তথ্য তুলে ধরেন তাতে  হেমা নিজেই সঞ্জয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এবং সিনিয়র অভিনেতা ধর্মেন্দ্রকে অনুরোধ করেন যাতে হেমাকে দেখে রাখেন। হেমার মা ভেবেছিলেন দর্মেন্দ্র যেহেতু বিবাাহিত ও চার সন্তানের জনক অন্তত তার দিকে থেকে কোন বিপদের আশংকা নেই। কিন্তু বেড়ায় ক্ষেত খাওয়ার মত অবস্থা আঁচ করেন হেমার মা।সুন্দরীদের দেখলে দেবদূতদেরও মাথা ঘুরে যায়। আর তো মানুষ ধর্মেন্দ্র।  হেমার মা দেখলেন , তার মেয়ের উপর একটি বেশি খবরদারি করার চেষ্টা করছে। তাই হেমাকে ধর্মেন্দ্র থেকেও দুরে রাখার চেষ্টা করলেন।

এমন সময় সঞ্জয় কুমার তার জিগরি দোস্ত জিতেন্দ্রের হাতে একটি প্রেম পত্র পাঠালেন হেমা মালিনির কাছে। যাতে সম্পর্ক পুনস্থাপিত হয়। কিন্তু বিধি বাম। জিতেন্দ্র, জিগরি দোস্তের প্রেমিকার প্রেম প্রস্তাব পৌঁছে দিতে গিয়ে নিজেই বাসন্তি তথা হেমা মালিনির প্রেমে পরেন। এবং এক সময় হেমা ও জিতেন্দ্র পরস্পরের প্রেমে হাবুডুবু খায়। হেমার মা দেখলেন, বিবাহিত ও চার সন্তানের পিতা  ধর্মেন্দ্র ও  সঞ্জয় কুমার থেকে অন্তত জিতেন্দ্র পাত্র হিসেবে উত্তম। উভয় পক্ষের অবিভাবকও তাদের বিয়েতে সম্মতি দেয়। এই বিয়েতে বাধ সাধে ধর্মেন্দ্র ও শোভা। শোভা জিতেন্দ্রর গার্লফ্রেন্ড।  তিনি হেমাকে ঘন ঘন ফোন করতে থাকেন এ বিয়ে থেকে বিরত থাকতে। শোভা তার প্রেমের কসম দেন এবং অনুরোধ করেন যাতে জিতেন্দকে তার জীবন থেকে কেড়ে না নেয়। আর ধর্মেন্দ্র চিন্তিত হয়ে পরেন তার ও হেমার হাতে রয়েছে প্রায় ডজন খানেক ছবি। যদি জিতেন্দ্রর সাথে হেমার বিয়ে হয় ; তবে তার ছবিতে অভিনয় করা হুমকির মুখে পরবে। ধর্মেন্দ্র ও শোভার  বাগরা দেয়ায় বর যাত্রী ও পন্ডিত  নিয়ে রওনা হওয়ার কথা থাকলেও জিতেন্দ্র ও হেমা মালিনির বিয়ে হতে হতে ভেঙ্গে যায়।

একমসময় জিতেন্দ্র ও শোভার বিয়ে হয়ে যায়।  এখন হেমা ধর্মেন্দ্র ও জিতেন্দ্র থেকে পৃথক সেই সুযোগে  (ঠাকুর) সঞ্জয় কুমার "শোলে" সিনামার সুটিং স্পষ্টে হেমা মালিনিকে সরাসরি বিয়ের প্রপোজ করেন। কেন না সঞ্জয় হেমাকে খুবই ভালোবাসতেন।  আর এ খান থেকেই ধর্মেন্দ্রের কপাল খুলে। হেমা ধর্মেন্দ্রকে জানায় বিষয়টি আর ধর্মেন্দ্র রমেশ শিপ্পীর নিকট বিচার দেয়। এর পর শোলে ছবিটিতে,  ঠাকুর তথা  সঞ্জয় কুমারের সাথে পুরো ছবি থেকে বাসন্তি রুপি হেমা মালিনির একটি দৃশ্যও আর রাখা হয়নি।

ধর্মেন্দ্র ও হেমা মালিনি আবার কাছাকাছি আসতে থাকেন। যা হেমার বাবা ও ধর্মেন্দ্রর প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কাউরের দৃষ্টিগোচরে আসে। হেমার বাবা হেমার জন্য পাত্র দেখতে থাকেন। আর প্রকাশ কাউর (সনিদেওল ও ববির মা,) ধর্মেন্দ্রকে তালাক দিতে অস্বীকার করে। যার কারনে ধর্মেন্দ্র ও হেমার বিয়ে করা সম্ভব ছিলো না।  তারা দুজন সে সময় প্রকাশ্যে মিডিয়ার সামনেও সম্পর্কে কথা স্বীকারও করত থাকে। এক পর্যায়ে হেমার বাবা ও ধর্মেন্দ্রে প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কাউরের  বাধায় তারা যখন পেরে উঠছিলো না। তখন তারা দুজন  ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে শ্রেফ বিয়ে করার স্বার্থে! গোপনে হেমা ও ধর্মেন্দ্র ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে এবং বিয়ে করে ফেলে। যদিও তারা পরে  হিন্দু রীতিতেও বিয়ে করেছিলো।

ড্রীমগার্ল  হেমা মালিনিকে বিয়ে করার বাজির দৌড়ে জিতে যান ধর্মেন্দ্র। হেমা ও ধর্মেন্দ্র দম্পতির ঘরে দুই কন্যা জন্ম নেয় এশা ও অহনা। সনি দেওল ববি দেওলদের ; সৎ বোন অহনা ও এশা দেওলের বিয়েতে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি। অবশ্য সকলের আগে  ২০১৫ হেমা মালিনির এক্সিডেন্টের সময় সনি দেওল হাসপাতালে দেখতে যায়।

৭০ দশকের এই ড্রীমগার্ল হেমা মালিনির আজ ৭১ তম শুভজন্মদিন। যার জনপ্রিয়তা কি পর্দায়, কি রাজনীতিতে সমান সমান শক্ত অবস্থান। তিনি বর্তমানে মথুরা আসন থেকে নির্বাচিত বিজেপির সাংসদ।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours