ব্রহ্মচারী শুভ্র, রামকৃষ্ণ আশ্রম, কলকাতাঃ
শ্রীভগবান যখন জগতে অবতীর্ণ হন তখন তাঁর দুটি মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে, প্রথম- যুগ প্রয়োজন
অনুসারে ধর্মের গ্লানি অপনোদন ও দ্বিতীয় রসাস্বাদন। এই দুই কার্যের সহায়ক রুপে তিনি বিশেষ বিশেষ
যোগ্য ব্যক্তিদের কেও ধরাধামে আনয়ন করেন। এরা বিভিন্ন জায়গায় জন্মগ্রহণ ক রলেও যথাসময়ে তাঁর
সাথে মিলিত হন ও তাঁর কৃপায় স্বীয় স্বীয় স্বরূপ ও শ্রীভগবাণের সাথে তাঁদের চিরন্তন সম্বন্ধ অবগত
হোণ।এভাবে তাঁরা নিজেরা তো কৃতকৃদ্য হনই, অধিকন্তু তাঁর লীলাপুষ্টিরও সহায়কও হন। এদের মধ্যে কেউ
তাঁর অঙ্গ, কেউ উপাঙ্গ কেউ বা তাঁর পার্ষদাদি। যতদিন শ্রীভগবান স্থুলদেহে সংসারে বিরাজমান থাকেন,
ততদিন তাঁরা শ্রীভগবানকে নিয়ে আনন্দ করেন ও তাঁর নির্দেশানুসারে স্বীয় স্বীয় ধর্মজীবন গঠন করেন।
পরে শ্রীভগবান স্থুল শরীর ত্যাগ করলে এরা তাঁর আরব্ধ লোককল্যান কার্যে আত্মনিয়োগ করে যথাকালে
স্বস্বধামে প্রয়ান করেন।
অনন্ত ভাবময় ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেবের অন্তরঙ্গ ও বিশেষকৃপাপ্রাপ্ত ভক্তমণ্ডলীর
ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য। তাঁরা যে এ পৃথিবীর লোক ছিলেন না , তা শিশুকাল থেকেই তাঁদের জীবনের ধারা
ও অধ্যাত্মরাজ্যে তাঁদের দ্রুত ও অভূতপূর্ব উন্নতির কথা আলোচনা করলেই বুঝতে পারা যায়। অন্য
দশজনের মতই সমাজের বিভিন্নস্তরে প্রতিপালিত হয়েও এক অন্তর্নিহিত প্রেঢ়নায় অথবা বলা চলে এক
দৈবী নির্দেশে নানা বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে তাঁরা শ্রীরামকৃষ্ণের পাদমূলে উপনীত হন ও তাঁর
দিব্যস্পর্শে এক নুতন রাজ্যের সন্ধান পান তা অবলোকন করলে অতিমাত্রায় বিস্মিত হতে হয়। এঁদের
মহান জীননীতে উচ্চাবচত্ত্বের কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না , সে বিষয় আমাদের পক্ষে অনধিকার
চর্চা।পুঁথিকার রচয়িতা তাই বলেছেন----

“ভক্তমধ্যে ছোটবড় জ্ঞান হয় ভ্রম, সকলে আমার পূজ্য বুঝিবে এমন।
ছোটবড় বিচারেতে নাহি অধিকার, সকলে বুঝিবে রামকৃষ্ণ পরিবার।।“
সাগরগামিনী বিশালকায়া নদী যেমন বহু শাখা বিস্তার করে বিশাল ভূভাগ কে শষ্যশালী ও অসংখ্য
জীবকে জলদানে তৃপ্ত করে, ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের অন্তরঙ্গ ভক্তগণও তাঁর সর্বধর্ম সমন্বয় রূপ যুগ
প্রয়োজনসাধন ও ত্রিতাপদগ্ধ মানবের মনে শান্তিবিধান করেছেন। ঠাকুর যেন এক বিরাট বিদ্যুতাধার ও
তাঁর ভক্তগন যেন ঐ অমিততেজ সঞ্চারনের উপযোগী তারসমূহ।
ভাদ্রমাসের কৃষ্ণা বা অঘোর চতুর্দশী, এই তিথি ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের অন্তরুঙ্গ ত্যাগী পার্ষদ
স্বামী অদ্বৈতানন্দ জী মহারাজের শুভ জন্মতিথি। ঠাকুরের অন্যান্য ত্যাগী পার্ষদদের মত যৌবনের
প্রারম্ভেই ঠাকুরের কাছে না এসে তিনি অধিক বয়সে তাঁর কাছে আসেন। তাঁর পূর্বাশ্রমের নাম শ্রী গোপাল
চন্দ্র ঘোষ। যদিও পুঁথিতে তাঁর শুর পদবীর উল্ল্যেখ আছে, কিন্তু বেলুড় মঠের ট্রাস্ট ডিডে তাঁর ঘোষ
পদবীরই উল্ল্যেখ আছে। ত্যাগী ভক্তদের মাঝে তিনি ছিলেন বয়জ্যাস্থ এমনকি ঠাকুরের থেকেও তাঁর বয়স
বেশী ছিল বলে ও অপর একজন ভক্তের একই নাম হওয়ার দরুন শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁকে বুড়ো গোপাল বা মুরুব্বি
নামে ডাকতেন। ভক্তমহলে তাঁর নাম ছিল গোপাল দাদা বা গোপাল-দা। সন্ন্যাসের পর তাঁর নাম হয় স্বামী
অদ্বৈতানন্দ।
গোপালদার পিতার নাম শ্রী গোবর্ধন ঘোষ। তাঁরা জাতিতে সদগোপ ও তাঁর পৈত্রিক ভিটা চব্বিশ
পরগণা জেলার অন্তর্গত জগদ্দল গ্রামে। ইং ১৮২৮ সালের এক শুভ দিনে তাঁর জন্ম হয়। তিনি অধিকাংশ
সময় কলকাতার উত্তরে সিঁথিতে বাস করতেন ও বেনীমাধব শিলের চিনাবাজারে বুরুশ, খড়রা, পাপোষ
ইত্যাদির দোকানে কাজ করতেন। পুঁথিকার তাঁর নিজস্ব কাগজের দোকান আছে বলে উল্ল্যেখ করেছেন।
বেনীমাধব ব্রাহ্ম ভক্ত হলেও শরৎ ও বসন্ত কালের উৎসবে মাঝে মাঝে শ্রীরামকৃষ্ণকে স্বীয় ভবনে
আমন্ত্রিত করতেন। দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণ চরণে আত্ম সমর্পনের পূর্বে এখানেই গোপাল দা একবার
তাঁকে দর্শন করেন।যদিও এই দর্শন গোপাল দার মনে বৈরাগ্যের আকাঙ্ক্ষার উৎপত্তি করে নাই, তবে
সেদিনই তিনি বুঝেছিলেন যে শ্রীরামকৃষ্ণ সত্যি সত্যিই একজন ভগবৎ প্রেমিক।
দক্ষিণেশ্বরে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ সমীপে আগমনের পূর্বে গোপাল দার স্ত্রী বিয়োগ হয়, ও এই
নিদারুণ শোক তাঁর মনে সংসারের অনিত্যতা সম্বন্ধে জ্ঞানের উন্মেষ ঘটায় ও তাঁর মন নিত্যসত্যের
অন্বেষণ করতে থাকে।এই সময় তাঁর বন্ধু শ্রীযুত মহেন্দ্র কবিরাজ দক্ষিণেশ্বরে যাতায়াত করতেন । তিনি
তাঁর বন্ধুর এই অসহ্য মর্মপীড়া দেখে তাঁকে ঠাকুরের কথা শুনালেন ও একদিন সাথে করে দক্ষিণেশ্বরে
নিয়ে আসেন। কবিরাজ বন্ধুর সাথে শ্রীশ্রীঠাকুরকে প্রথম দর্শন কালে গোপালদা স্বীয় শোকনাশ বিষয়ে
আশার আলোক পেলেন না ও ঠাকুরের উপর বিশেষ শ্রদ্ধাও তাঁর হলোনা। তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরকে অন্য
সাধারণ সাধুর মতই একজন মনে করলেন। কিন্তু বন্ধু হাল ছেড়ে না দিয়ে পুনরায় তাঁকে শ্রীরামকৃষ্ণ সকাশে
যেতে বললেন আর গোপালদার অশান্ত মনও এই হতাশাকে চরম বলে গ্রহণ করতে পারলোনা। তাছাড়া বন্ধুর
যুক্তি মহাপুরুষকে কে একদিনে চেনা যায় ? ভেতরের সন্ধান পেতে হলে ঘনিষ্ঠ ভাবে তাঁর সাথে মিশতে
হয়—গুলিও নেহাত ফেলনা ছিলনা। যাহোক গোপালদা পুনর্বার দক্ষিণেশ্বর চলিলেন।
শ্রীভগবান যখন জগতে অবতীর্ণ হন তখন তাঁর দুটি মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে, প্রথম- যুগ প্রয়োজন
অনুসারে ধর্মের গ্লানি অপনোদন ও দ্বিতীয় রসাস্বাদন। এই দুই কার্যের সহায়ক রুপে তিনি বিশেষ বিশেষ
যোগ্য ব্যক্তিদের কেও ধরাধামে আনয়ন করেন। এরা বিভিন্ন জায়গায় জন্মগ্রহণ ক রলেও যথাসময়ে তাঁর
সাথে মিলিত হন ও তাঁর কৃপায় স্বীয় স্বীয় স্বরূপ ও শ্রীভগবাণের সাথে তাঁদের চিরন্তন সম্বন্ধ অবগত
হোণ।এভাবে তাঁরা নিজেরা তো কৃতকৃদ্য হনই, অধিকন্তু তাঁর লীলাপুষ্টিরও সহায়কও হন। এদের মধ্যে কেউ
তাঁর অঙ্গ, কেউ উপাঙ্গ কেউ বা তাঁর পার্ষদাদি। যতদিন শ্রীভগবান স্থুলদেহে সংসারে বিরাজমান থাকেন,
ততদিন তাঁরা শ্রীভগবানকে নিয়ে আনন্দ করেন ও তাঁর নির্দেশানুসারে স্বীয় স্বীয় ধর্মজীবন গঠন করেন।
পরে শ্রীভগবান স্থুল শরীর ত্যাগ করলে এরা তাঁর আরব্ধ লোককল্যান কার্যে আত্মনিয়োগ করে যথাকালে
স্বস্বধামে প্রয়ান করেন।
অনন্ত ভাবময় ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেবের অন্তরঙ্গ ও বিশেষকৃপাপ্রাপ্ত ভক্তমণ্ডলীর
ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য। তাঁরা যে এ পৃথিবীর লোক ছিলেন না , তা শিশুকাল থেকেই তাঁদের জীবনের ধারা
ও অধ্যাত্মরাজ্যে তাঁদের দ্রুত ও অভূতপূর্ব উন্নতির কথা আলোচনা করলেই বুঝতে পারা যায়। অন্য
দশজনের মতই সমাজের বিভিন্নস্তরে প্রতিপালিত হয়েও এক অন্তর্নিহিত প্রেঢ়নায় অথবা বলা চলে এক
দৈবী নির্দেশে নানা বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে তাঁরা শ্রীরামকৃষ্ণের পাদমূলে উপনীত হন ও তাঁর
দিব্যস্পর্শে এক নুতন রাজ্যের সন্ধান পান তা অবলোকন করলে অতিমাত্রায় বিস্মিত হতে হয়। এঁদের
মহান জীননীতে উচ্চাবচত্ত্বের কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না , সে বিষয় আমাদের পক্ষে অনধিকার
চর্চা।পুঁথিকার রচয়িতা তাই বলেছেন----

“ভক্তমধ্যে ছোটবড় জ্ঞান হয় ভ্রম, সকলে আমার পূজ্য বুঝিবে এমন।
ছোটবড় বিচারেতে নাহি অধিকার, সকলে বুঝিবে রামকৃষ্ণ পরিবার।।“
সাগরগামিনী বিশালকায়া নদী যেমন বহু শাখা বিস্তার করে বিশাল ভূভাগ কে শষ্যশালী ও অসংখ্য
জীবকে জলদানে তৃপ্ত করে, ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের অন্তরঙ্গ ভক্তগণও তাঁর সর্বধর্ম সমন্বয় রূপ যুগ
প্রয়োজনসাধন ও ত্রিতাপদগ্ধ মানবের মনে শান্তিবিধান করেছেন। ঠাকুর যেন এক বিরাট বিদ্যুতাধার ও
তাঁর ভক্তগন যেন ঐ অমিততেজ সঞ্চারনের উপযোগী তারসমূহ।
ভাদ্রমাসের কৃষ্ণা বা অঘোর চতুর্দশী, এই তিথি ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের অন্তরুঙ্গ ত্যাগী পার্ষদ
স্বামী অদ্বৈতানন্দ জী মহারাজের শুভ জন্মতিথি। ঠাকুরের অন্যান্য ত্যাগী পার্ষদদের মত যৌবনের
প্রারম্ভেই ঠাকুরের কাছে না এসে তিনি অধিক বয়সে তাঁর কাছে আসেন। তাঁর পূর্বাশ্রমের নাম শ্রী গোপাল
চন্দ্র ঘোষ। যদিও পুঁথিতে তাঁর শুর পদবীর উল্ল্যেখ আছে, কিন্তু বেলুড় মঠের ট্রাস্ট ডিডে তাঁর ঘোষ
পদবীরই উল্ল্যেখ আছে। ত্যাগী ভক্তদের মাঝে তিনি ছিলেন বয়জ্যাস্থ এমনকি ঠাকুরের থেকেও তাঁর বয়স
বেশী ছিল বলে ও অপর একজন ভক্তের একই নাম হওয়ার দরুন শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁকে বুড়ো গোপাল বা মুরুব্বি
নামে ডাকতেন। ভক্তমহলে তাঁর নাম ছিল গোপাল দাদা বা গোপাল-দা। সন্ন্যাসের পর তাঁর নাম হয় স্বামী
অদ্বৈতানন্দ।
গোপালদার পিতার নাম শ্রী গোবর্ধন ঘোষ। তাঁরা জাতিতে সদগোপ ও তাঁর পৈত্রিক ভিটা চব্বিশ
পরগণা জেলার অন্তর্গত জগদ্দল গ্রামে। ইং ১৮২৮ সালের এক শুভ দিনে তাঁর জন্ম হয়। তিনি অধিকাংশ
সময় কলকাতার উত্তরে সিঁথিতে বাস করতেন ও বেনীমাধব শিলের চিনাবাজারে বুরুশ, খড়রা, পাপোষ
ইত্যাদির দোকানে কাজ করতেন। পুঁথিকার তাঁর নিজস্ব কাগজের দোকান আছে বলে উল্ল্যেখ করেছেন।
বেনীমাধব ব্রাহ্ম ভক্ত হলেও শরৎ ও বসন্ত কালের উৎসবে মাঝে মাঝে শ্রীরামকৃষ্ণকে স্বীয় ভবনে
আমন্ত্রিত করতেন। দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণ চরণে আত্ম সমর্পনের পূর্বে এখানেই গোপাল দা একবার
তাঁকে দর্শন করেন।যদিও এই দর্শন গোপাল দার মনে বৈরাগ্যের আকাঙ্ক্ষার উৎপত্তি করে নাই, তবে
সেদিনই তিনি বুঝেছিলেন যে শ্রীরামকৃষ্ণ সত্যি সত্যিই একজন ভগবৎ প্রেমিক।
দক্ষিণেশ্বরে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ সমীপে আগমনের পূর্বে গোপাল দার স্ত্রী বিয়োগ হয়, ও এই
নিদারুণ শোক তাঁর মনে সংসারের অনিত্যতা সম্বন্ধে জ্ঞানের উন্মেষ ঘটায় ও তাঁর মন নিত্যসত্যের
অন্বেষণ করতে থাকে।এই সময় তাঁর বন্ধু শ্রীযুত মহেন্দ্র কবিরাজ দক্ষিণেশ্বরে যাতায়াত করতেন । তিনি
তাঁর বন্ধুর এই অসহ্য মর্মপীড়া দেখে তাঁকে ঠাকুরের কথা শুনালেন ও একদিন সাথে করে দক্ষিণেশ্বরে
নিয়ে আসেন। কবিরাজ বন্ধুর সাথে শ্রীশ্রীঠাকুরকে প্রথম দর্শন কালে গোপালদা স্বীয় শোকনাশ বিষয়ে
আশার আলোক পেলেন না ও ঠাকুরের উপর বিশেষ শ্রদ্ধাও তাঁর হলোনা। তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরকে অন্য
সাধারণ সাধুর মতই একজন মনে করলেন। কিন্তু বন্ধু হাল ছেড়ে না দিয়ে পুনরায় তাঁকে শ্রীরামকৃষ্ণ সকাশে
যেতে বললেন আর গোপালদার অশান্ত মনও এই হতাশাকে চরম বলে গ্রহণ করতে পারলোনা। তাছাড়া বন্ধুর
যুক্তি মহাপুরুষকে কে একদিনে চেনা যায় ? ভেতরের সন্ধান পেতে হলে ঘনিষ্ঠ ভাবে তাঁর সাথে মিশতে
হয়—গুলিও নেহাত ফেলনা ছিলনা। যাহোক গোপালদা পুনর্বার দক্ষিণেশ্বর চলিলেন।
........................ ক্রমশ
Post A Comment:
0 comments so far,add yours