প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান: 

তুমি বলেছিলে, পুরুষ ও নারীর, একই সত্তায় বিবিধ অংশ। তবু দেখো!  নারী সৌন্দর্যের মাদকতায় ভরে থাকে চোখ। তবে কি তন্ময় হও!!  শুনেছি, অনেকে বলে তুমি নাকি নারী চরিত্রের পক্ষপাতিত্ব করো!!  তবে আমি কি তাই সইতে পারি, বলো!! ওরা না হয় একটু বেশী সংস্কারে একান্ত অনুগত, আমার কিন্তু এমন মূঢ়তা নেই। আবার, তুমি যখন বলো, প্রমতত্ত্বে বিশ্বের গতি শক্তি বলয়, তবে যে উচ্চাঙ্গের প্রেমের স্বাধীনতা আমিও ভোগ করতে চাই। অজুহাতের খোলা খেলা আমি দেখতে চাই না, অন্তরে অন্তরে চিরকালের রাজলক্ষ্মী ভালোবাসা, হয়ে কথক হতে চাই... প্রেমের মুক্তি আনন্দ আমার।

আচ্ছা!  যদি বলি, ভালোবাসার অমিলনাত্মক মন প্রায়ই সতীত্বে মাথা খুঁড়ে মরে, রাগ করবে, বলো!! 
ওমা!  ও যে,  নৈতিক বোধকে  অক্ষুন্ন রাখতেই জীবনযাত্রা গো!! আচ্ছা ধরো!!  অরক্ষণীয়া" গল্পে দুর্গামণি ও ভামিনী, অথবা জ্ঞানদা হয়ে যদি আঁকি নিজেকে, তবে কি অতুল তেমন করে  ফুটে উঠবে  আরো একবার!!  আবার যদি অন্নদা দিদির বন্ধনহীন প্রেমের কথা বলি,  আমাকে প্রবৃত্তির নিষ্কৃতি দেবে!   তুমি যে আমার উপলব্ধির!!একটু  কমল করে আঁকবে?? আমি কিন্তু ছদ্মবেশে অগ্রাহ্যের অবহেলা সইতে পারবো না৷ বিপরীতমুখী উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা যে চাতুরী মাত্র। রাজলক্ষ্মীর তো ভালোবেসেই সুখ। 

তুমি কি জানো, সংযমহীন শিক্ষা মানেই পাপের আশ্রয় বলে রক্ষণশীল সমাজ!! কিরণময়ী ও কলম তো কোনো পাপ করেনি।  মনের সুস্থতা রক্ষাই তো মূল কথা। তোমার কাছে আমি আজ অভিযোগ করবো!!  প্রেমের উদ্বুদ্ধ হওয়া মানেই কি খুঁচিয়ে উদগ্র করে তোলা!! অন্তরে অন্তরে প্রীতি চিরকালের - তা যে বৈষ্ণব সাহিত্যের সুর। একটা কথা বলতে চাই, একবার!!  প্রেমাস্পদ আত্মত্যাগ বলেই কি মিলিত হওয়ার পরমুহুর্তে পরস্পর অধিষ্ঠিত থাকতে চায়, উভয়ই!! মনের চিন্তন, গতিবিধি যদি সত্য হয়, তবুও নগ্ন বলে কি সমাজতত্ত্ব উচ্ছৃঙ্খলতা বলবে!!
একটিবার বলো তমঃপ্রধান অভয়া, নাকি রজঃপ্রধান কমললতা আর সত্ত্বপ্রধান রাজলক্ষ্মী, এই তিনজনের মধ্যে সমন্বয় সাধন কি করবে!!  এতো নির্বাক কেন তুমি!! আমি, হ্যাঁ, আজ আমি বিপ্রদাস হয়ে পরীক্ষা দেবো ; চিনে নেবো নিষ্ঠা, সাধনা আর প্রতীকী রূপে তোমায়।। 
তুমি যে আমাকে সৌন্দর্যের রসসৃষ্টি করে গড়ে তুলেছিলে আমি কি ভুলতে পারি!! তবে আমি যে নারী, মাতৃত্বের আমার শ্রেষ্ঠত্বের বিকাশ, তা ভুলি কি করে!!  তোমার অনুশাসনের যূপকাষ্ঠে তো  আমি গলা দিয়েই রেখেছি, একবার অন্তর থেকে ভালোবেসে আঁকড়ে নাও, তোমার বুকে একবার বিনোদ হয়ে চিৎকার করে বলবো - আমি স্নেহহীনা নয়। আমার কাছে আচার ব্যবহার উপেক্ষার, কিন্তু প্রবাহ কি সচল মহাদেব নয়!!  আজ কথা দিচ্ছি, আত্মভোলা প্রেম সংগোপনে রাখবো। নারীত্ব মানবাত্মার পবিত্র সৌরভে প্রকৃত শিল্প হয়ে গড়ে দেবে...  তোমার সাহিত্য!!  

 বিশ্বগ্রাসী ক্ষুধার ঝড় বুকে নিয়ে, বুক ভাঙা কান্নার তারটি যে ছিঁড়ে গেছে বহুকাল, একটিবার "মা " শব্দ যে দাবদহের বুকে ভরা শ্রাবণই তো সব। তোমার হাতে  উষার সন্তানবাৎসল্য অকৃত্রিম। তবে যে লালনে অনাদর নেই আমার, যাপনেই অনুশীলন স্নেহ। অবশ্য তোমাকে বোধ বোঝাবো এমন ধৃষ্টতা আমার কই৷ আমার পরিত্যক্তের সিঁদুরমেঘে বাজ পড়লেও, আমি যে বিশ্বেশ্বরী বোধযুক্ত স্নেহদ্বার। 

কামনাহীন নিত্য সংযম ছুঁয়েই তো প্রেম। তুমি তাকেই তো প্রেরণার সৃষ্টি বলেছ। সময় তো হারিয়ে দেয় অনেক কিছুই। কিন্তু আঘাত মনে হয় পাল্লা ভারি করে থাকে নিত্যকাল। তুমি বদ্ধ বা মুক্ত এ তো আমার দেখার কথা নয়- তবুও আঘাতকে বলেছি , আর আমাকে তিলে তিলে মেরে ফেলো না!! বোধ তো তিলমাত্র নয়, যে ছিন্ন হবে, তবু প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে যাক আমার এই আঘাত রূপ অনুভবগুলো। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কতো ফুল ভরে আসে ডালে, সবাই তো ডালি পূর্ণ করে না।  তবে কিসের অনুশাসন!! প্রবাহ ক্ষুব্ধ ছন্দময়তাতেই  তো সংযমের বিরোধ ঘটিয়ে বলতে  ইচ্ছা করে, 

মাটির উপর গন্ধ ছিলো তখন৷ কাগুজে সাদা   অক্ষর ছুঁয়ে দিয়েছিলাম, আকাশের বুকে।  স্বর্ণদোলনা বেয়ে বৃষ্টি স্নাত আধো আলোর রঙিন শরীর।  মোমবাতির মিছিলে মোহময়ী , সিঁড়ি। আকাশ আজ প্রতিবাদী...।

নিত্যই তো জীবনযাত্রায় দৈনন্দিন স্বার্থ ও সংকীর্ণতার সংঘর্ষ।   একটিবার বলো না গো,  পাঠশালায় জ্ঞান সঞ্চার করেই কি প্রেমের উদয় হয়!! তুমি কি বোঝো না যে, অশান্ত মন দিনে দিনে অধিকার শব্দে ভূমি প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছে৷  কলঙ্কের আশঙ্কাও যে মাথার মুকুট আমার,  তুমি আছো যে তাই..  ভালোবাসার।তোমার কলমে আমি সৌদামিনী হতে পারবো না, প্রেমাস্পদমগ্নেই ত্যাগ করবো এই জীবন। পাল্লায় মাপা সংযমে কিসের মুক্তি!!  তুমি কলম দরদী হয়ে ললাট স্পর্শ করে যাও একটিবার, আমি তোমার হাতে আঁকা ললিতা হতে চাই৷ আমি চাই, তোমার অধিকারের আবদ্ধে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে  । একবার অধিকারের স্রোতে বলো,  তোমার আমি "..  কেবলই তোমারই। আমার মনে হয় বা- থিন আর মা - শোয়েরের মতো আমাদের আজন্ম প্রেম। যেমন করে ভূমার অবস্থান অনন্তকালের, আমাদের চিত্রাঙ্কনও মগ্ন চৈতন্য আজ সাকার। 

নূতনত্ব তো অপূর্বত্ব, তাঁকে পাঠ উপভোগ্য করাটাই তৃপ্তি। আকস্মিকতায় শিবনাথ হয়ো না সুপ্রিয়!! ঐ কলম প্রিয় আমার। আমার সাত্ত্বিক অবস্থার দ্বার খুলে গেছে বহুকাল, আজ অপধর্ম সেবিতা প্রশ্রয় পায় না কুশলী মনে৷ আমায় আঁকো স্বতন্ত্রময়ী।  মনের সাথে তো বিধিও পরিবর্তনও হয়৷ জগতের সীমারেখায় মূল্য আছে৷ আমি যে নিপুণ সামাজিক। কুশলী গৃহেই তো আহ্বান, পূর্ণ অক্ষরমালা...শব্দ প্রেম আমার, অপার ভালোবাসার।
 
 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours