তনুশ্রী সেনগুপ্ত,ফিচার রাইটার, আসানসোল:
প্রতিদিন সকালে উঠে ছেলে স্কুলে যাওয়ার পরে ঐ ৭.২০ নাগাদ আমার বেশ ঝগড়া পায়। এই কম থেকে মাঝারি ধরনের। দ্বিতীয় ইনিংসে চায়ের আসরে দুজনে ডাইনিং টেবিলে বসে এটা ওটা কথোপকথন করার পরই আমার ঝগড়া পাওয়ার অভ্যেসটা কার্যকর হতে শুরু করে।কচিবাবুও কিছু কম যান না। তবে তর্কে আমাকে পরাস্ত করার রেকর্ড এখনো গড়ে তুলতে পারেন নি এবং দায়িত্ব নিয়েই এই কাজটি আমি বেশ সততা ও সফলতার সাথে করে থাকি। সেই দিন কচিবাবু অন্য পন্থা নিলেন।
আমার ঝগড়া নামক নেশাশক্তি মেটানোর পর তিনি নিত্য অভ্যেসে বাজার যান, বাজারের সবুজ শাকসব্জির সাথে কিনে আনেন এক কেজি চুনো মাছ। আর কোনো কথা না বলে তা নামিয়ে রেখে স্নান সেরে টিফিন নিয়ে অফিসে চলে যান। পরে ব্যাগ খুলে ঐ এক কেজি অবাছা চুনো মাছ দেখে আমার তো সীতার মতো দুঃখে বুক ফেটে কান্না আসছিল। ভরসার বর্ষা ও ভ্রূ কুঁচকে মুখ উল্টে পরিস্কার ভোকাল কর্ডের আওয়াজ নিয়ে বলে "আমায় বলো নি, আমি পারব নি, তোমার ঘরে কাজ সেরে মেয়ে কে আনতে যাবো, ইস্কুল ছুটি হয়ে যাবে"। হায় রে ভাগ্য এই মেয়েকে আবার আমিই ইস্কুলে ভর্তি করিয়েছি মানুষ হবার জন্য, অগত্যা ভাগ্যই ভরসা করে নেমে পড়লাম চুনোর চুলচেরা বিশ্লেষনে। এবং একটা একটা করে তার পেট, মাথা, আঁশ পরিস্কার করে, এক ঘন্টা ধরে সেই চুনোমাছ থেকে ভিটামিন খুঁজে বার করতে সক্ষম হই। চুনো মাছের মাথাটা পরিস্কার করার সময় বার বার কচিবাবুর মাথাটা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। এমন নয় যে আগে কোনোদিন এই মাছ বাড়িতে আসেনি, তখন তো ভালবাসার মাছকে আলাদা করে টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে এনে তা পরিস্কার করে নিজেই ফ্রিজে তুলে রাখতেন।
সকালে চুনো পর্ব মিটে যাওয়ার পরে বিকেলে কচিবাবুর ফেরার অপেক্ষায় থাকলাম। তিনি ফিরলেন এবং আমার মুখের দিকে না তাকিয়েই বললেন "কোনো লাভ নেই, কিছু বললে কাল আবার এক কেজি কিনে আনব "। মানে? পৃথিবীতে আইন বলে কি কিছুই নেই! আমার মতো চুনো অত্যাচারিত নিপীড়নের স্বীকার অবলা নারীর পাশে কি কেউ থাকবে না? আচ্ছা থানায় এর কোন অভিযোগ করা যায় কি?
আপনারাই বলুন কি উপায়ে কচিবাবুকে বেশ জব্দ করা যায় আর আমার ঐ বিবাহের পরের ঝগড়া পাওয়ার অভ্যেসটাও যাতে বজায় থাকে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours