ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ

বাচস্পতি মশাই-এর  নিদানে  অসন্তুষ্ট  হ'লেও  মেনে  নিতে  বাধ্য হলেন  নন্দ চাটুজ্জে! তিনি  এবার  দ্বিতীয়  অভিযোগ  উত্থাপন  করলেন, যার  বাদী  তিনি  নিজেই!
         তাঁর  অভিযোগ, রূপেন্দ্র তাঁর  নিজের  ভিটেতে  একটি  বিচিত্র  চতুষ্পাঠী খুলেছে, সেখানে  কোন  ছাত্র  থাকবে  না, শুধুই  ছাত্রী! ইতি  মধ্যেই  সাত  আটটি  বিভিন্ন  বয়সের  মহিলা  লেখাপড়া  করতে  যাচ্ছে! তার  মধ্যে  সধবা, বিধবা  ও অরক্ষনীয়া  কন্যাও  আছে! কানাঘুষো  শোনা  যাচ্ছে  একটি  মোছলমান মেয়েছেলেও  দুদিন  পর আসবে ! বামুনের  ভিটেয় 'বামুন,রাজ্য,যবনী  সব  একপংক্তিতে?  একি  অনাচার  নয়?এবার  রূপেন্দ্রকে  উদ্দেশ্য  করে  বললেন," কি  রূপেন  আমি  কি  মিছে  কথা  কইছি?"
            রূপেন্দ্র  উঠে  দাঁড়িয়ে  বললেন,"আজ্ঞে হ্যাঁ সত্য  আমি  একটি  বিদ্যালয়  খুলেছি! তবে  সেটি ' চতুষ্পাঠী নয় ' সেখানে  আদৌ  বেদ  পড়ানো  হয় না! আমি নিজগৃহে একটি  'নারী  বিদ্যানিকেতন 'চালু  করেছি! সেখানে  মহিলাদের  অক্ষর  পরিচয়  করানো  হয়!ছাত্রীরা  সেখানে  বাংলা  বা  বাংলা  ও সংস্কৃত  শেখে!এছাড়া  নারীদের  গার্হস্হ্য  ধর্ম, শিশু  প্রতিপালন,রোগীর  সেবা  ও স্বাস্হ্য বিধি  শেখানো  হয়! আর  এটাও  সত্য  রমজান মাস  শেষ  হ'লে  একটি  মুসলমান  মহিলা এখানে  বাংলা  শিখতে  আসবে!
       নন্দ  চাটুজ্জ্যে  বিদ্রুপ  করে, বললেন  "বাপের  জন্মে  এমন  পাঠশালার  কথা  শুনিনি, যেখানে  শিক্ষক  ছাড়া  কোন  পুরুষের  প্রবাশাধিকার  নেই, বস  নারী ছাত্রীর মাঝে  শুধু  একজন  পুরুষ !এতো  বৃন্দাবনকেও হার  মানিয়ে  দিল!"
     
  রূপেন্দ্র  কিছুক্ষন  পর  বললেন, একথা  ঠিক  ভূ ভারতে নারীদের  জন্য  কোন  পৃথক  পাঠশালা  নেই!
           আবার নন্দ  চাটুজ্জ্যে  বিদ্রুপ  করে  বলল, " যা  ভু ভারতে  নেই, হিন্দু  ধর্মে  স্ত্রীলোকের  অক্ষর  পরিচয়  নিষিদ্ধ  হওয়া  সত্বেও  এজাতীয়  বৃন্দাবন  লীলার  কথা  তুমি  কেন  ভাবলে  রূপেন্দ্র?"
         রূপেন্দ্র,বাচস্পতি  মশাইকে  উদ্দেশ্য  করে  বললেন, " আমি  পঞ্চায়েতের ডাকে  এখানে  এসেছি, কিন্তু  অপমানিত  হতে  নয় , আমি  কেন  করেছি  কি  জন্য  করেছি  আপনি  অনুমতি  দিলে  সব  বলতে  প্রস্তুত"
    বাচস্পতি  মশাই  - এর  অনুমতি  নিয়ে  রূপেন্দ্র  গ্রামবাসীদের  উদ্দেশ্যে  বলতে  শুরু  করলেন," প্রাক  মুসলমানযুগে  হিন্দু নারীদের  শিক্ষাগ্রহনের  সুযোগ  ছিল!বৌদ্ধ যুগেও  নারীরা  শিক্ষা  লাভের  অধিকার  থেকে  বঞ্চিত  ছিল  না!  নারীরা  অক্ষর  ঞ্জানের  সাথে  বৈধব্য  যোগ  সম্পুর্ন  সম্পর্কহীন  তা  প্রমান  করেছেন  মৈত্রী  ও ব্রজসুন্দরী! তাই  তাঁর  অনুরোধ, সোঁয়াই  গ্রামের  স্ত্রীলোকদের  তাঁর ' ব্রজসুন্দরী মহিলা  বিদ্যানিকেতনে ' প্রেরন  করুন! গুরু দক্ষিনা  দিতে  হবে  না!শিক্ষা  সম্পুর্ন  অবৈতনিক!
(চলবে)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

1 comments so far,Add yours

  1. পর্ব-৮৩ ঐতিহ্যের আতসে দুর্গাপুর এর এই পর্বে লেখা যে 'ব্রজসুন্দরী' র নামে পাঠশালা সেই ব্রজসুন্দরী কে ছিলেন? কি তাঁর পরিচয়??
    জানবার অপেক্ষায় রইলাম।

    আমি 'হটি বিদ্যালংকার' এর উত্তর পুরুষ। হটি-র পিতা কিভাবে বন্দ্যোপাধ্যায় হয়েছেন তাও বোধগম্য নয়। যদিও 'হটি'র পিতার নাম রুপেন্দ্র ও নয়।

    ReplyDelete