রণজিৎ গুহ, লেখক ও সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:
হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী নতুন কিছু নয়।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কিংবা তার আগে থেকেই এবং সংবিধান রচনার সময়েই ভাষা বিতর্ক যথেষ্ট জোরাল ছিল।এমনকি হিন্দি ও হিন্দুস্থানী দুটো আলাদা ভাষা বলেও চিহ্নিত করার চেষ্টা হয়। আইনসভায় বহু খ্যাত নামা সাংসদ হিন্দি কে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বহুবার সওয়াল করেন।প্রবল আপত্তি করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তেলেগু ও তামিল ভাষী সাংসদরা। না বাঙালি কোন সাংসদকে এ নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়নি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত সাংসদরা জানতেন যে সাধারণ বাঙালি দিব্যি হিন্দি এবং হিন্দিত্বর সাথে মানিয়ে নিয়ে পারঙ্গম হয়ে উঠবে। যেমন স্বভাববৃত্তিতে ইংরেজিয়ানা রপ্ত করেছিল।তারও আগে বাঙালি একইভাবে ফারসি ঘরানা আয়ত্ব করেছিল।
ভাগ্যিস অমিত শাহ হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী ফিরে উচ্চারণ করলেন তাই না বাঙালির ছটফটানি দেখা যাচ্ছে। সেই কতকাল আগে শঙ্কর বিশ্বাস নামে এক বঙ্গভাষী দেওয়ালে দেওয়ালে আলকাতরা দিয়ে লিখতেন পশ্চিমবঙ্গে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এই রাজ্যে ৯০% চাকরি বাঙালিকে দিতে হবে। অফিস কাছারিতে বাংলা ব্যবহার করতে হবে।বাঙালি জাগো। অহো সেকি খিকখিক হাসি!বলেকি লোকটা! বাঙালি আন্তর্জাতিক। সর্বভারতীয় ভাবনার ধারক বাহক।এসব প্রাদেশিক ভাবনা নিতান্তই কূপমণ্ডূকতা।তদোপরি লোকটা কেরে? কোন দলের তামুক খাচ্ছে? আমরা কি বলা হচ্ছে তার চেয়ে ঢের বেশী গুরুত্ব দিই কে বলছে তার ওপর।অতএব ওসব সংকীর্ণ মানসিকতার লোকজন দূরে থাকো। আমরা ইত্যবসরে রাস্ট্রভাষা প্রসার সমিতির হিন্দি শিক্ষার আসরে ভীড় জমিয়েছি। কলে কারখানায় দপ্তরে রাজভাষা পক্ষে হিন্দি রচনা হিন্দি বক্তৃতায় পুরস্কার নিয়ে গদগদ হয়েছি।বাড়িতে ছেলেমেয়েদের বাংলা মাধ্যম স্কুল থেকে সরিয়ে নিয়েছি। ইংরেজি হিন্দি ফার্স্ট ও সেকেন্ড ল্যাংগুয়েজ। থাকলে বাংলা থার্ড।
ভাষা নিয়ে ইতিউতি গাঝাড়া দিতেই বাঙালির সংস্কৃতি চেতনা বোধও উছলে ওঠে।আমাদের সংস্কৃতির সাথে কার তুলনা হয় মশাই? তবে ঐ পরম্পরা ঐতিহ্য এসব ছেঁদো কথা।আমরা পরিবর্তনের দিশারী। আমাদের পোশাক আসাক খাদ্য খাওয়া আদবকায়দা উৎসব অনুষ্ঠানে আচার বিচার সব পালটে দিয়েছি।কথাবার্তার ঢঙ বা শুভেচ্ছা বিনিময়ের কায়দা বদলেছি।সর্বভারতীয় হয়ে উঠেছি। ( আসলে হিন্দি বলয়ের নকল করেছি।) আন্তর্জাতিক হতে চেয়েছি।এখন দোষারোপ করে আর কেঁদে ভাসিয়ে দিলে চলবে?
এখন যে চেঁচামেচি তা প্রকৃতপক্ষে কতটা বাংলা ভাষার পক্ষে আর কতটা অপছন্দের বিজেপির বিপক্ষে বোঝা মুস্কিল। এরাজ্যের রাজনৈতিক দলের বাবুমশাইরা ঝেড়ে কাশছে না কেন? ভোট বাজারের জল মাপছে? কেউ কি বলছে আমি আগে বাঙালি পরে কংগ্রেস। বা আগে বাঙালি পরে সিপিএম।আগে বাঙালি পরে তৃণমূল। আমি খামোকা আগে বাঙালি পরে ভারতীয় আরও পরে আন্তর্জাতিক হই কেন? কেউ আমাকে প্রগতিবিরোধী বলে দেগে দিক তাতো চাইনা।একটা বাঙালিয়ানা বলে ব্যাপার আছে না!হে হে!
বাঙালির বৈশিষ্ট্য সে একটা ডাকের অপেক্ষা করে।মানে পিছন থেকে ঠেলা না খেলে পা বাড়ায় না। নেতাজী দেখা দাও।ফিরে এস। কিন্তু নেতাজী যে আবার হিন্দুস্থানি ভাষার পক্ষে।করি কি? যাই কোথায়! ভাবি।বাঙালি ভাবতে বড় ভালবাসে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours