শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:
"পাকিস্তানের জনগণ প্রকৃতপক্ষে অনেক সুখে আছে। কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থাকে না বুঝে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ভারত সরকারের গুজবের কারণে এদেশের (ভারতের) জনগণ মনে করে, পাকিস্তানে নাগরিকেরা শোষণ ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। কিন্তু এটা সত্য নয়।'
কথাগুলো কোন পাকিস্তানি নেতা বা মন্ত্রী বলেননি। বলেননি, বাংলাদেশর কোন মোল্লা বা ভারত বিরোধী মানসিকতা পোষনকারী কোন রাজনীতিক। বলেছেন, শারদ পাওয়ার। যিনি ভারতের ২য় সর্বোচ্চ বেসরকারী পুরস্কার 'পদ্মভূষন ' প্রাপ্ত ব্যাক্তি। পুরস্কারটির জন্য সুপারিশ করেছিলো খোদ বিজেপি সরকার।
১৯৪০ সালে জন্ম নেয়া শারদ (গবিন্দরাও) পাওয়ার ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম পরিচিত মুখ। তিনি ভারতীয় ক্রিকেট সহ আন্তার্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পদে আসীন ছিলেন। স্পোর্টসের আরো অন্য বিভাগেও গুরুদায়িত্ব পালন করেন।
মি শারদ গবিন্দরাও পাওয়ার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ভারতের, খাদ্য মন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রী , প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন। এ ছারাও তিনি পেয়েছেন অনেক সম্মান ও পুরস্কার। তিনি বিভিন্ন দলে সম্পৃক্ত থাকলেও তার পরিচিতি, তিনি কংগ্রেস নেতা।
তার মত একজন ঝানু,দক্ষ,অভিজ্ঞ নেতা ও ব্যাক্তির সমালোচনা করা খুব কঠিন। তিনি কয়েকবার কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে গেছেন আবার কংগ্রেসে যুক্তও হয়েছেন। তিনি যেমন অনেক সম্মাননা পেয়েছেন। তেমনি সমালোচনাও রয়েছে। তাকে নিয়ে। কি ক্রিকেটে, কি রাজনীতিতে তিনি কঠোরভাবে সমালোচিতও হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ডন দাউদ ইব্রাহিমের সাথে যোগাযোগের মত মারাত্বক অভিযোগ রয়েছে। তিনি পাগরী নিয়ে একবার বিতর্কিত মন্তব্যও করেন। মুম্বাই হামলা নিয়েও রয়েছে তার বিতর্কিত মন্তব্য।
শারদ গোবিন্দরাও পাওয়ার বলেছেন;
"পাকিস্তানের জনগণ প্রকৃতপক্ষে অনেক সুখে আছে।" তার এই বক্তব্য যে কেবল মিথ্যাই নয়, হাস্যকরও। পাকিস্তানের জনগনও তার এ কথা কৌতুক হিসেবেই নেবে। পাকিস্তানের প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবি ও লেখক, মি হাসান নিসার প্রায়ই টিভি টক শোতে পাকিস্তানের জনগনের দুঃখ দুর্দশা নিয়ে কথা বলেন। যিনি ইমরান খানের রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
"(ভারতের) কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থাকে না বুঝে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। " এই বক্তব্য শুনে যে কোন ব্যাক্তির মনে হতে পারে এটা কোন পাকিস্তানি নেতার বক্তব্য। ভারতের কংগ্রেস নেতা শারদ পাওয়ারের নয়৷ ভারতের কোন সাবেক ডিফেন্স মিনিষ্টার এমন বক্তব্য দিতে পারেন তা অবিশ্বাস্য। তার এই বক্তব্য ভারতবাসিকে ক্ষুব্ধ করবে। এমন কি বিজেপি এ বক্তব্যের ফায়দা উঠাবে কংগ্রেস ও শারদ পাওয়ারের কঠোর সমালোচনা করে।
শারদ পাওয়ার আরো বলেছেন;
"ভারত সরকারের গুজবের কারণে এদেশের ( ভারতের) জনগণ মনে করে, পাকিস্তানে নাগরিকেরা শোষণ ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। কিন্তু এটা সত্য নয়।'
এ বক্তব্য শুনে আমার মনে হয়েছে , এ যেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলছেন! লাদেনকে পাকিস্তানে পাওয়া গেছে! এটা কি ভারতীয় গুজব? পাকিস্তান টিভিতে, লাইভ টকশোতে খোদ পাকিস্তানীরা বলছে," খোদা কা ওয়াস্তা, হামে বাংলাদেশ বানা দো!" এটা কি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের গুজব? পাকিস্তান এখন অর্থনৈতিক ভাবে দেউলিয়া? এটাও কি ভারতীয় গুজব? পাকিস্তান সন্ত্রাস রপ্তানীকার দেশ এবং এবং নিজেও সন্ত্রাসীদের দ্বারা ক্ষতবিক্ষত এমন কথা কি ভারতীয় গুজব? পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উপস্থিতিতে; পাকিস্তান সংসদে বসে বিরোধী দলিয় নেতা বলেন, মি খান "সিলেক্টেড প্রাইমিনিস্টার!" ইমরান খান নিয়াজি জেনারেলদের পাপেট! সংসদের বাইরে পাকিস্তানের জনসভায় এসব বলা হয়।
এও কি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বা নরেন্দ্র মোদীর ছড়ানো গুজব? সিন্ধ,বেলুচ,পশতুনেরা পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী ও জেনারেল দ্বারা নিপীড়িত,শোষিত বঞ্চিত। আজ পর্যন্ত পাকিস্তানের একজন প্রধানমন্ত্রী তার মেয়াদকাল পুরন করতে পারেনি। হয় খুন করা হয়েছে, না হয় গলা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এও কি আরএসএস এর পরিচালিত গুজব? নাকি নরেন্দ্র মোদী এমন গুজব ছাড়াচ্ছেন?
শারদ পাওয়ারের মত দক্ষ, অভিজ্ঞ রাজনীতিকেরা বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীর বিরোধীতা করতে গিয়ে ; এমন সব শিশুসূলভ বক্তব্য দিয়ে লাভবান হতে পারবেন কি? বা বিজেপির ক্ষতি করতে পারবেন? বরং আমার মনে হয় তিনি নিজে ও তার পার্টি কংগ্রেস ভারতে আরো বিতর্কিত হবে। এবং ফায়দা হাসিল করবে নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours