প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান
কামিল পিসারোর The Boulevard Montmartre, Afternoon, রেনোয়ার " Girl with a Hoop ", অ্যাডওয়ার্ড মনের " Luncheon on the Grass ", মানেই এককথায় ইমপ্রেশনিজম মনে করায়।
চিন্তা - চেতনায় শিল্পীর স্বাতন্ত্র্য আলোয় এ ছিল এক গতিশীল নতুনত্বের ভূমিকা। চিত্রকলা জুড়ে আছে বৈচিত্র্যের খোঁজ৷ ইতিহাস বলে, সময়টা ১৮৭৪। প্যারিসে তখন মাসব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন চলছে। আর এই প্রদর্শনীতেই ক্লদ মনের " Impression, Sunrise ", প্রারম্ভলগ্ন। বড়ো আকর্ষণীয় ছিল স্থানটি। জৌলুসের পরোয়ানা নয়, সরকারি জ্বাজ্জল্যমান বিনিময়ের অর্থগৌরব ছেড়ে, এতো এক ফটোগ্রাফারের বাড়িতে প্রদর্শনী। আসল স্বাধীনতা, তো আপোস করে না - প্রথা ভেঙে আয়োজনের বাইরে একটু মনন আত্মপ্রকাশ। বলতে ইচ্ছা করে নিজের ভাষায়
"ছায়াবিহীন আকাশতল ছুঁয়ে আছি ;
অর্ধশুষ্ক জ্যোৎস্নায় দুধলি ফুলের চাষ..
উপলব্ধি বেয়ে কানাকানি সুবাস আঘ্রাণ,
শুভ্র রাতের অপেক্ষায়..
জেগে আছি।"...
এ আমার মনের বাঁধনহীন অভিলাষ , আমার স্বাধীনতা, অধিকারের উর্ধ্ব উপলব্ধির খোঁজ৷ তাই দু এক কথা যে লোকে বলবে না, এমনটা কি হয়? প্রতিবাদ আসবে, বিশুদ্ধ রঙের বিরুদ্ধে আঁচড় দেবে আঘাতের সমালোচনা, তবু যে স্রোতের বিপরীতে হাঁটা। লাগামহীন ঘোড়াটা মুহুর্তে সংবেদনের মনোযোগকে ক্যানভাসে বন্দি করবে, আগ্রহের শিল্পী ঘরানা।
তবে কি বৈজ্ঞানিক মানসে প্রতিশ্রুতি "!! না, অ্যাডওয়ার ছাড়া অনেকেই প্রকৃতিকে যথার্থ বলেছেন। শিল্পীর জীবন খুঁজে, দুঃখ, দৈন্যতা সীমানা ভেঙে ফেলেনি, তাও কালের সীমা ভেঙে গেলো - নাম ইমপ্রেশনিজম।।
তোমার দীর্ঘ জীবনে সুরের কথক হয়ে কতোবার তুলনার জীবনের গড় এঁকেছিলে, মনে পড়ে!! আজ দেখি দ্যোতনা ফিরে আসে, বিষয়নির্ভর নাকি বর্জিতের প্রশ্ন। দেখো কবির ঘরে এমন আঙুল ছোঁয়া অভিধান ললাট ছুঁয়ে দেবে এতো বড়ো কথা নয় গো, তবু কালি কলমে এমন চিত্রায়ণ তোমার বোধের দৃশ্যকলায় নিসর্গের অবয়ব উচ্ছ্বসিত হলে, চিত্রপট ঘিরে রেখার খেলা স্থান পায়। এটাই তো শক্তি, গ্রহণযোগ্যতার উর্ধ্বে শিল্পক্রিয়া।।
১৯২৩ সাল, তুমি তখন প্রায় বৃদ্ধ৷ তুমি বলেছিলে অলংকরণ মুখ্য উদ্দেশ্য, বিষয়বর্জিত বিমূর্তের কবিমনন রূপ৷ তোমার পটে এই অভিব্যক্তি রূপায়ন, রসায়ন সিক্ত স্বতঃপ্রকাশিত। ভাবনারা বিস্ফোরিত হয়েছে কালি কলমে৷ ছবিতে বিকাশ, আবদ্ধ নয়।
তোমার কথায়, " এর আগে আমার মন আকাশে কান পেতে ছিল, বাতাস থেকে সুর আসত, কথা শুনতে পেত, আজকাল সে আছে চোখ মেলে রূপে রাজ্যে, রেখার ভিড়ের মধ্যে... " এ যাত্রা নয়, মহাযাত্রা৷
অনায়ত্ত বললে ভুল হয়৷ প্রাচ্য প্রাশ্চাত্যের মেলীকরণের মূল্য অপরিসীম৷ আধুনিকের দরজায় মনের মণিকোঠা ঘিরে ভাব দর্শনে মুগ্ধ চিত্ররচনার খোঁজ, হ্যাঁ, এ শুধু তোমার৷ আচ্ছা! অবনীন্দ্র ঘরানার ছবিতে বলিষ্ঠতার অভাব বলেছিলে, এ,যে চিত্ররচনার বিকাশপথ৷ তুমি তো আবদ্ধের বিষয়ানুগ বলো নি, বলেছিলে, ছন্দসৃষ্টির বর্ষণসিদ্ধ সম্বৃদ্ধির রূপায়ণ । বর্ণনা তো তোমার পটে যাপন ; মাতৃভ্রুণে নিরাপদের আশ্রয়, তনু মনের পরিমাপ। ঐ সেই ভয়াচ্ছন্ন জলধারা,অনুপ্রেরণার খোঁজ, বর্ণবাহুল্যে ভাব ব্যঞ্জনার অধিকার, পটে আঁকা অভিনব স্তব।
সচেতনের সংগ্রহ নিয়ে তো তুমি আত্মসচেতন৷ মেঘবন্দির আকাশ, ধারাস্নাত গাছ, বর্ষার অনুচ্চার আভাস - পথ তো মধ্যম সুলভ। আর "পশ্চিমের যাত্রীর ডায়েরি ".. ও তো বিরল রেখার পটুত্ব ছুঁয়ে শব্দ কথক। তোমার চিত্রপটে তখন ধ্রুপদী অভিব্যক্তি, কলাভবনে উৎসুক প্রার্থী, আধুনিকের সরল সান্নিধ্যেও, এককথায় মীমাংসিত ছবি ভাণ্ডার।
অসাধারণ আলোচনা। ঋদ্ধ হলাম পাঠে ।"ছায়াবিহীন আকাশতল ছুঁয়ে আছি ;
ReplyDeleteঅর্ধশুষ্ক জ্যোৎস্নায় দুধলি ফুলের চাষ..
উপলব্ধি বেয়ে কানাকানি সুবাস আঘ্রাণ,
শুভ্র রাতের অপেক্ষায়..
জেগে আছি।।"... অনবদ্য তোমার ভাষা,সম্পৃক্ত হলাম সুধী। তোমার প্রতিটি শব্দ কথন চিত্রপটে এঁকে যায় আমার অলিন্দে। তোমার সান্নিধ্যে পথ হারা পথিক ও আলোর পথ খুঁজে পাবে আমার বিশ্বাস। তোমার কলম চলতে থাকুক অবিরাম। শুভ বিশ্বকর্মা পূজা।